শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের
প্রকাশ : ১৪ ডিসেম্বর ২০২২, ০৪:৪৯ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

তবুও স্কুলে স্কুলে ভর্তি পরীক্ষা

তবুও স্কুলে স্কুলে ভর্তি পরীক্ষা

সরকারি ঘোষণা অমান্য করে স্কুলে শিক্ষার্থী ভর্তিতে পরীক্ষার আয়োজন করছে রাজধানীর অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। নেওয়া হচ্ছে মৌখিক ও লিখিত পরীক্ষা। অনেক প্রতিষ্ঠান বিক্রি করছে ভর্তি ফরম, যা ভর্তি নীতিমালার পরিপন্থি। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) বলছে, ফরম বিক্রি ও পরীক্ষা নেওয়ার প্রমাণ মিললে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২০২৩ সালের ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে—শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে বিদ্যালয় থেকে কোনো ফরম বিতরণ করা হবে না। ভর্তির আবেদন করতে হবে অনলাইনে। ফি ১১০ টাকা। কেন্দ্রীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠেয় ডিজিটাল লটারি কার্যক্রমে সারা দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে অংশগ্রহণ করতে হবে। যৌক্তিক কোনো কারণে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় অনলাইন ভর্তি কার্যক্রমের সঙ্গে সংযুক্ত হতে না পারলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমতি গ্রহণ করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী নির্বাচন করে ভর্তি কার্যক্রম সম্পাদন করতে হবে। ভর্তির ক্ষেত্রে লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী নির্বাচন প্রক্রিয়া বাদে অন্য কোনো পরীক্ষা গ্রহণ করা যাবে না।

অথচ, রাজধানীর দনিয়ার ব্রাইট স্কুল অ্যান্ড কলেজে গিয়ে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। গত ৮ ডিসেম্বর শিক্ষার্থীর অভিভাবক পরিচয়ে প্রতিষ্ঠানটির ভাড়া ভবনে ঢুকে প্রথম ও ষষ্ঠ শ্রেণির ভর্তির বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানের অনুসন্ধান কেন্দ্র থেকে জানানো হয়—ভর্তির জন্য প্রথমে ১০০ টাকার ফরম কিনতে হবে। এরপর অধ্যক্ষের কক্ষে গেলে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। একে তারা বলছেন, স্পট অ্যাডমিশন। এ ছাড়া প্রথম শ্রেণিতে ভর্তিতে বয়সের বাধা নেই বলেও জানানো হয়।

একই দিন ক্লাস ওয়ানের আধঘণ্টা আর ষষ্ঠ শ্রেণিতে এক ঘণ্টায় হয়েছে চারটি বিষয়ের পরীক্ষা, যার মান ছিল ৫০। এরপর অধ্যক্ষ নেন মৌখিক পরীক্ষা। যে শিক্ষার্থী ভালো উত্তর দিতে পেরেছে, তাকে ভর্তির জন্য নির্বাচিত করা হচ্ছে। আর যে অপেক্ষাকৃত দুর্বল, তার অভিভাবকদের বলা হয়েছে—ক্লাস শুরুর পর মূল্যায়ন পরীক্ষায় খারাপ করলে অন্য প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যেতে হবে। এ বিষয়ে ব্রাইট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মইদুর রহমান জেমকে কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

একই এলাকার বর্ণমালা আদর্শ হাই স্কুল এন্ড কলেজে গিয়ে জানা যায়, ভর্তির আবেদনের জন্য ১১০ টাকা আর প্রতিষ্ঠানের ভেতরে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ফরম পূরণের জন্য নেওয়া হবে ৫০ টাকা। কর্তৃপক্ষ জানায়, পরীক্ষা নেওয়া হবে। তবে পরে জানায় পরীক্ষা নয়, লটারি হবে। ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত তারা ফরম বিতরণ করবে। ১৪/১৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে লটারি। এই প্রক্রিয়া চলবে ৩/৪ ধাপে। ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে লটারি প্রক্রিয়া চলবে। তবে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত হবে ভর্তি পরীক্ষা বা স্পট এডমিশন।

বর্ণমালা আদর্শ হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া নম্বরে ফোন করা হলে তারা জানান, ‘আমাদের ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে অনুমোদন আছে, সে কারণে আমরা সেসব শ্রেণিতে লটারি করি। তবে প্রাথমিকে অনুমোদন না থাকায় আমরা লটারি করি না। আমরা পরীক্ষা নেই, সেটাও বলা যাবে না, আগের ক্লাসে সে কেমন পড়াশোনা করেছে, কতটুকু জানে, বয়স ঠিক আছে কিনা এগুলো যাচাই করা হয়।’

একই এলাকার এ কে স্কুল অ্যান্ড কলেজে গিয়ে ফরমের দাম জিজ্ঞেস করলে জানায়, দাম ২০০ টাকা। ফরম কিনে ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে জমা দিতে হবে। ২৬ ডিসেম্বর হবে লটারি। বয়সসীমায় তাদের কোনো সমস্যা নেই।

এ কে স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. ফজলুল হক কালবেলাকে বলেন,আমাদের সম্ভবত ১৫০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। সরকারিতে হয়তো ১১০ বা ১২০ টাকা নেয়, তবে আমাদের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ফরম ছাপানো থেকে শুরু করে কিছু বাড়তি খরচ আছে।

সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের শ্যামপুর শাখায় ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির ফরমের দাম রাখা হচ্ছে ২০০ টাকা। গত সোমবার এই প্রতিবেদক ২০০ টাকা দিয়ে ফরম কিনলেও দেওয়া হয়নি টাকার রশিদ। সোমবার একটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর আগামী ১৮ ডিসেম্বর এই প্রতিষ্ঠানে বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনের আরেকটি ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ফরমের সাথে দেওয়া হয়েছে টোকেন সাইজের সিলেবাস। সেখান থেকে জানা গেছে, মোট ৫০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। এর মধ্যে বাংলা, ইংরেজি ও গণিতে ১৫ করে এবং সাধারণ জ্ঞানে ৫ নম্বর। এই প্রতিষ্ঠানের অন্য শাখাগুলোতেও ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে।

সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের বারিধারা শাখার নার্সারির একজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক কালবেলাকে বলেন, আমার ছেলের ভর্তি পরীক্ষা ছিল ৩ ডিসেম্বর। কিন্তু এর আগেই কল করে স্কুল থেকে জানায়, ১ তারিখে পরিচিতি পর্ব হবে। স্কুলে গিয়ে জানতে পারি ওইদিনই ভর্তি পরীক্ষা হবে। প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের খেয়ালখুশিমতো কাজ করে।

সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের শ্যামপুর শাখার ভর্তি সহায়তাকারী নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা ফরম বিক্রি করছি তবে রসিদ দিচ্ছি। আর ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছি এটা যাচাই করে দেখতে যে, আগের শ্রেণিতে শিক্ষার্থী কী শিখেছে।

এসব বিষয়ে অবহিত করলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) উপপরিচালক (বিদ্যালয়) এবং ঢাকা মহানগরী সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভর্তি কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ আজিজ উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, আমরা সব শিক্ষার্থীকে যে কোনো প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ দিতে চাই। সে কারণে ডিজিটাল লটারি পদ্ধতির উদ্ভব। তার পরও অনেকেই এই নিয়ম মানছে না। আমরা প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

 ছেলের কিল-ঘুষিতে শিক্ষক পিতার মৃত্যু

নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ৭ খুনের ১০ বছর আজ

‘ভয়াল ২৯ এপ্রিল, ১৯৯১ স্মরণ ও প্যারাবন নিধন প্রতিবাদ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত

শাহ আমানতে ৯০ হাজার দিরহামসহ যাত্রী আটক

আবুধাবিতে চালু হচ্ছে উড়ন্ত ট্যাক্সি, ৩০ মিনিটেই দুবাই

গরু চোরাচালানে জড়িত ছাত্রলীগ নেতা ও জনপ্রতিনিধি

ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধ চায় খেলাফত মজলিস

বাংলাদেশ এসএসসি ৯৮ ফ্রেন্ডস ফাউন্ডেশন যাত্রা শুরু

চিকিৎসার জন্য আমেরিকায় গেলেন আমির খসরু 

উত্তর কোরিয়া থেকে অস্ত্র নিয়ে চীনা বন্দরে রুশ জাহাজ

১০

বর্জ্যবাহী গাড়ির ধাক্কায় নিহতের ঘটনায় ব্যবস্থা : তাপস

১১

বর্ণিল আয়োজনে রূপায়ণ সিটি উত্তরায় সামার ফেস্ট-২০২৪ অনুষ্ঠিত

১২

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা 

১৩

বিসিএস পরীক্ষার্থীর আঁকুতি / ‘পরীক্ষা দিতে না পারলে আমি মরে যাব স্যার’

১৪

শনিবার গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়

১৫

ইউরোপজুড়ে চীন-রাশিয়া ও আরব রাষ্ট্রের ফাঁদ

১৬

বাংলাদেশের ধুলায় মাইক্রোপ্লাস্টিক, বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শিশুরা

১৭

এবার মিল্টন সমাদ্দারের আরেক প্রতারণা ফাঁস!

১৮

বগুড়া জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি তুহিন, সাধারণ সম্পাদক হাবিব

১৯

গাজার ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কারে ১৪ বছর লাগতে পারে : জাতিসংঘ

২০
*/ ?>
X