দুলাল হোসেন
প্রকাশ : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৩:৫৭ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

দিনে দুটি টমেটোয় সুস্থ থাকবে হৃদযন্ত্র

দিনে দুটি টমেটোয় সুস্থ থাকবে হৃদযন্ত্র

শুধু তরকারি বা সালাদে নয়, হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতেও জাদুকরী কাজ করে টমেটো। নরওয়ের অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের প্রধান চিকিৎসাবিজ্ঞানী অসীম কে দত্ত রায়ের গবেষণায় এমন তথ্য মিলেছে। চিকিৎসাশাস্ত্রে মনোনয়নের জন্য গঠিত নোবেল কমিটির অন্যতম সদস্য তিনি। তার গবেষণার ওপর ভিত্তি করে টমেটো থেকে উৎপাদিত হয়েছে ক্যাপসুল, যা হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে কাজ করে।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মান, বেলজিয়াম, পোল্যান্ড, চীনসহ বিশ্বের ৬৫টি দেশে বিক্রি হচ্ছে এ ক্যাপসুল। ক্যাপসুল না কিনে প্রতিদিন দুটো করে পাকা টমেটো খেলেও চলবে। তাতেই হৃদযন্ত্র সুস্থ থাকবে। কালবেলার সঙ্গে একান্ত আলাপকালে তিনি এসব তথ্য জানান।

অসীম দত্ত বলেন, হৃদযন্ত্রের চিকিৎসায় অন্য মেডিসিনের সঙ্গে অ্যাসপিরিন ওষুধও দেওয়া হয়। আমেরিকায় প্রাইমারি চিকিৎসার ক্ষেত্রে অ্যাসপিরিন ব্যবহার করতে দেওয়া হয় না। অ্যাসপিরিন ৩০ শতাংশ মানুষের ক্ষেত্রে কাজ করে না। আবার অ্যাসপিরিন দীর্ঘদিন খেলে আলসার হয়। আমার পরামর্শ হচ্ছে, অ্যাসপিরিন না খেয়ে টমেটো দিয়ে তৈরি ক্যাপসুল খেলেই হৃদযন্ত্র সুস্থ থাকবে।

অসীম দত্ত বলেন, ক্যাপসুল আকারে বাজারে পাওয়া যায়। এ ক্যাপসুল জুসের সঙ্গে খেতে পারবেন। এমনি পানির সঙ্গে খেতে পারবেন। এ ক্যাপসুল কিনতে পোল্যান্ডে প্রেসক্রিপশন লাগে। আর কোনো দেশে প্রেসক্রিপশন লাগে না। যারা এই ক্যাপসুল খেতে চাইবে না, তারা টমেটো খাবে।

অধ্যাপক অসীম বলেন, প্রতিদিন একটি করে ক্যাপসুল খেতে হবে। একটি ক্যাপসুলের দাম ৪৫ থেকে ৬০ টাকা। সবার আর্থিক সচ্ছলতা তো এক রকম নয়। যারা ক্যাপসুল কিনে খেতে পারবে না, তাদের জন্য আমার পরামর্শ হচ্ছে—তারা লাইভ টমেটো খাবেন। প্রতিদিন দুটি পাকা টমেটো খেলেই হবে। টমেটোর ভেতরে যে অ্যান্টিপ্লাটিলেট ফ্যাক্টরগুলো থাকে, সেটি সিডের চারপাশে হলুদ রঙের যে আঠালো পদার্থ সেটায় থাকে। টমেটো কেটে ধুয়ে খাওয়া যাবে না। টমেটো আস্ত খেতে হবে। ক্যাপসুল যে কাজ করবে, প্রতিদিন দুটি পাকা টমেটো খেলে একই কাজ হবে।

অসীম দত্ত বলেন, টমেটোর তৈরি ক্যাপসুলের একটু দাম বেশি। কারণ, এক কিলোগ্রাম প্রোডাক্ট উৎপাদন করতে খরচ হতো ৬০০ ইউরো, এখন লাগে দেড়শ ইউরো। দাম আরও কমবে। প্রতিদিন ৭৫ মিলিগ্রামের একটি ক্যাপসুল খেতে হবে। আগে প্রতি ডোজ ক্যাপসুলের দাম ছিল ১৬৫ টাকা, এখন প্রতি ডোজ ৪০ থেকে ৬০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। এটির দাম আরও কমবে। যেসব টমেটোতে পেসডিসাইড বা কোনো ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না, সেই অর্গানিক টমেটো ক্যাপসুল তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। এটির কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। টমেটোতে ইউরিক বাড়ে বলে যে কথা আছে, সেটি ঠিক নয়। টমেটোতে ইউরিক এসিড কম থাকে। ইউরিক এসিড বাড়ে মেডিসিনে।

প্রফেসর অসীম দত্ত বলেন, ‘আমরা যারা বড় হচ্ছি বা হয়েছি আমাদের কোনো কার্ডিওভাসকুলার লক্ষণ নেই, বুকে প্রেশার নেই, অন্য কোনো সমস্যা নেই যাতে বোঝা যায় যে কার্ডিয়াক প্রবলেম হতে পারে; কিন্তু ওই মার্কারগুলো হয়তো বেড়েছে যেমন ব্লাডে প্রেসার, কোলেসস্টেরল। এই মার্কার সব নয়। যাদের কোলেস্টেরল হাই আবার যাদের কম উভয়ের হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে। হঠাৎ করে মারা যাচ্ছে। এর পেছনের কারণগুলো আমাদের জানতে হবে।’

অসীম দত্ত বলেন, ‘কার্ডিয়াক পেশেন্টের মেডিকেশন দেখলে বোঝা যায় কারও ব্লাড প্রেশার হাই, কারও কোলেস্টেরল হাই, তারা ওই মেডিসিন পাচ্ছে, তার সঙ্গে অ্যান্টিপ্লাটিলেট ড্রাগ একটা থাকে যেমন ইকুসপিরিন। এখন কথা হচ্ছে ৩০ শতাংশ মানুষের ক্ষেত্রে অ্যাসপিরিন কাজ করে না, অ্যাসপিরিন দীর্ঘদিন খেলে আলসার হয়। এ জন্য আমেরিকান কার্ডিওলজি এবং সে দেশের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অথরিটি (এফডিএ) বলছে, প্রাইমারি প্রিভেনশনে অ্যাসপিরিন ব্যবহার করা যাবে না। ডিজিজ হলে বা স্টান্ডিং করলে তখন উপায় নেই বিধায় অ্যাসপিরিন খেতে পারবে; কিন্তু ৩০ শতাংশ মানুষের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্যান্স আবার প্লাগটা যদি ভেঙে যায়, তখন থ্রমবিং তৈরি হয়। থ্রমবিং হচ্ছে কিলার। এ ক্ষেত্রে অ্যাসপিরিন খেলেও মারা যাবে। তার পরও চিকিৎসকরা অ্যাসপিরিন দিয়ে যায়, কারণ এর অলটারনেটিভ নেই।’

প্রফেসর অসীম দত্ত বলেন, ‘ইয়াং বা বয়স্ক সবারই প্লাগ তৈরি হচ্ছে। সমস্যা হচ্ছে—যাদের প্লাগ তৈরি হচ্ছে তারা অ্যাসপিরিন ব্যবহার করতে পারবে না। ওর কোনো ওষুধও নেই। তখন আমি ভাবলাম ন্যাচারে কোনো কিছু পাওয়া যায় কিনা, যা সবারই ব্যবহার করা যাবে, যার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকবে না, যেটা প্লাটিলেট হ্যাপি রাখবে। ওটা নিয়ে আমি স্টাডি শুরু করি। স্টাডি করতে গিয়ে দেখলাম, টমেটোর মধ্যে অ্যান্টিপ্লাটিলেট মারাত্মক আকারে রয়েছে। আমরা ব্লাড নিলাম, ব্লাড থেকে প্লাটিলেট নিলাম, পরে প্লাটিলেটের মধ্যে ফ্রুট জুসগুলো দিলাম। এরপর বিভিন্ন এজেন্ট (যেমন কোলাজেন, থ্রমবিং) দিলাম। দেখলাম, টমেটো ৯৯ শতাংশ রিনউভেট করে দিচ্ছি, এটা মিরাকল। পরে কম্পাউন্ডগুলো আলাদা করলাম। এরপর হিউম্যান ট্রায়াল করলাম, তাতে দেখা গেল ৯৭ শতাংশ ক্ষেত্রে কার্যকর। পরে এটি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় গবেষণা হয়েছে। চায়নায় ৭টি এক্সিপিরিটমেন্ট হয়েছে। ইউরোপিয়ান স্টান্ডার্ড কমিটি এটি অনুমোদন দিয়েছে।’

অসীম দত্ত বলেন, ‘আমার ১৯৯৯-এর গবেষণার প্যার্টানটি ২০০২ সালে প্রথমে আমেরিকায় অনুমোদন লাভ করে। পরে অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনুমোদন পায়। এ প্যার্টানটি সংরক্ষণ করতে বছরে প্রায় ৫০ লাখ টাকা ব্যয় হয়। আমাদের যে গবেষণা হয়েছে, এখনো হচ্ছে এর পেছনে বিশ্বের বিভিন্ন কোম্পানি ৪০ মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ করেছে।’

তিনি বলেন, ‘এটা নিয়ে অনেক স্টাডি হয়েছে। হার্টের সমস্যা আছে এবং যাদের নেই তাদের নিয়েও স্টাডি করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত যুক্তরাজ্য, নরওয়ে, অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, পোল্যান্ড, চায়না, জার্মানি, মেক্সিকোতে হয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশে হয়নি। কারণ ভারত বা বাংলাদেশে প্লাটিলেট মাপার যন্ত্রপাতি নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন ভারতের চেন্নাইয়ের চেত্তিনাথ মেডিকেল ইউনিভার্সিটে ট্রায়াল শুরু হয়েছে। যে দেশেই এটি চালু হবে, সে দেশেই হিউম্যান ট্রায়াল হবে। কারণ, একেক দেশে ফুড হেভিট, পরিবেশ, পলিসি একেক রকম। এখন পর্যন্ত ৬৫টি দেশে বাজারজাত হচ্ছে। গবেষণা আরও অনেক দেশেই হচ্ছে। যখন পাবলিকেশন হয়, তখন জানতে পারি কোন দেশে গবেষণা হচ্ছে।’

অধ্যাপক অসীম বলেন, ‘বাংলাদেশেও এটি নিয়ে কাজ করার কথাবার্তা চলছে। প্লাটিলেট মাপার যে যন্ত্র সেটি এখানে মনে নেই। এ যন্ত্র আনতে হবে। যন্ত্রটির দাম বেশি না, ২৫ লাখ টাকার মতো। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন, স্থান, সদিচ্ছা থাকলেই কাজ করা যাবে। বাংলাদেশেও ২০০৯ সালে শীর্ষ স্থানীয় ওষুধ কোম্পানির সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়েছে। করোনার কারণে বন্ধ ছিল। এখন আবার পুরোদমে কাজ শুরু হয়েছে।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কেন গ্রেপ্তার হয়েছিলেন মামুনুল, কী ঘটেছিল সেদিন?

আইপিএল অভিজ্ঞতা কাজে দেবে বিশ্বমঞ্চে?

জেসিকার চেয়ারম্যানকে জামিন করাতে মরিয়া পদ্মা ব্যাংক

পাহাড়ি সড়ক থেকে খাদে যাত্রীবাহী বাস, নিহত ২০

গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শুরু

রাজধানীতে মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার ২৯

স্ন্যাপচ্যাটে এডিট করা যাবে সহজেই

উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে পদ হারালেন যুবদল নেতা

খ্রিষ্টানদের নিয়ন্ত্রক হতে চেয়েছিলেন মিল্টন

রাঙ্গামাটিতে পাহাড় ধসে যান চলাচল বন্ধ

১০

কারামুক্ত মামুনুল হক

১১

গাজীপুরে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ, আহত অনেকে

১২

কালবৈশাখী ঝড়ে লন্ডভন্ড সহস্রাধিক বসতবাড়ি

১৩

মার্কিন ঘাঁটিতে আস্তানা গাড়ল রুশ সেনারা

১৪

ম্যাচ ফি নয়, বোনাস বাড়ছে টাইগারদের

১৫

বৃষ্টির পরও সুখবর নেই ঢাকার বাতাসে

১৬

১৮৪ বোতল ফেনসিডিলসহ মাদক কারবারি আটক

১৭

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে কেমন হবে টাইগারদের একাদশ?

১৮

বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় প্রেমিকার আত্মহত্যা

১৯

কী আছে আজ আপনার ভাগ্যে?

২০
*/ ?>
X