সপ্তাহ না ঘুরতেই আবারও আগুন সীতাকুণ্ডে

বিস্ফোরণের পর এবার চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে আগুন লেগেছে তুলার গুদামে। শনিবার ছোট কুমিরা এলাকায়।
বিস্ফোরণের পর এবার চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে আগুন লেগেছে তুলার গুদামে। শনিবার ছোট কুমিরা এলাকায়।ছবি : কালবেলা

সীমা অক্সিজেন প্লান্টে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের সপ্তাহ না পেরোতেই চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে আবারও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শনিবার সকালে উপজেলার কুমিরা ইউনিয়নের ছোট কুমিরা বাইপাস রোড-সংলগ্ন হিঙ্গিরি পাড়ার একটি তুলার গুদামে আগুন লাগে।

দিন পেরিয়ে রাত হলেও এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট। রাতে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় সেনাবাহিনী। এ ঘটনায় এখনো কোনো হতাহতের ঘটনা নেই বলে জানিয়েছেন সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা নুরুল আলম দুলাল।

এদিন সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, তখনো জ্বলছিল আগুন। বিপুল পরিমাণ তুলা সেখানে রাখা ছিল। অতি দহনশীল হওয়ায় ক্রমেই তীব্র হচ্ছিল আগুন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকালে তুলার গুদামে গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে সংস্কার কাজ করছিলেন শ্রমিকরা। এ সময় গ্যাস কাটিংয়ের স্ফুলিঙ্গ তুলার মধ্যে পড়ে। সেখান থেকেই আগুনের সূত্রপাত। পরে পুরো গুদামে ছড়িয়ে পড়ে আগুন। তাদের দেওয়া তথ্যমতে, একসময় গুদামটি কারাবন্দি বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর ডিপো ছিল। পরে এটি এসএল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা লোকমানের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তার কাছ থেকে ইউনিটেক্স লিমিটেড সেটি ভাড়া নেয়। তাদের সুতা তৈরির কারখানার জন্য সেখানে তুলা মজুত করা হতো।

গুদামের স্টোর সুপারভাইজার আলাউদ্দিন কালবেলাকে বলেন, গুদামে ৩০ হাজার টনের বেশি তুলা ছিল।

স্থানীয় যুবক রুবেল বলেন, আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া হয়। কিন্তু তারা দেরিতে আসায় আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা নুরুল আলম দুলাল কালবেলাকে বলেন, দেরিতে আসার তথ্য সত্য নয়। কোথাও আগুন লাগলে প্রথমে কর্তৃপক্ষ তা নেভানোর চেষ্টা করে। আগুন যখন বেড়ে যায়, তখন ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয়।

সন্ধ্যা ৭টার দিকে তিনি জানান, তখনো আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তবে ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসতে আরও সময় লাগবে। সময়মতো পানি না পাওয়ার কারণে আগুন দ্রুত চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তুলার গুদামের বিপরীতে ছিল নেমসান কনটেইনার লিমিটেডের ডিপো। তারা সময়মতো পানি দেয়নি। যখন আগুনে তাদের ডিপো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, তখন দুপুর ১টার দিকে তাদের ডিপো থেকে পানি সংযোগ দেয়।

এ ছাড়া তিনি বলেন, তুলার আগুন নেভানো কঠিন। জায়গামতো পানি না পড়লে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা খুবই কষ্টকর হয়ে ওঠে। আমরা যে পানি দিচ্ছি, তা টিনের ওপরেই পড়ছে। চেষ্টা করছি ভেতরে পানি দেওয়ার জন্য। তাপের কারণেও সামনে গিয়ে পানি দেওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে।

আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে তিনি বলেন, সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। স্থানীয়দের থেকে শুনেছি, গ্যাসের সিলিন্ডার দিয়ে কাটিংয়ের কাজ করার সময় আগুনের স্ফুলিঙ্গ তুলায় পড়ে। সেখান থেকে আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন বলেন, স্থানীয় সূত্রে শুনেছি, গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে তুলার ডিপোতে সংস্কার কাজ করার সময় আগুন লাগে। তদন্ত করা ছাড়া এই মুহূর্তে কিছুই বলা যাচ্ছে না। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান জানান, গুদামটিতে ইউনিটেক্সের ২ হাজার ৭০০ টন তুলা মুজত ছিল। তুলা দাহ্য পদার্থ হওয়ায় আগুন নির্বাপণ দুরূহ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

যোগ দিয়েছে সেনাবাহিনী : রাতে গুদামের আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয় সেনাবাহিনীর বিশেষ টিম। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক জানান, ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে সেনাবাহিনীর চারটি ইউনিট যোগ দেয়। এ ছাড়া নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর ফায়ার ফাইটিং টিম ঘটনাস্থলে গেছে।

এর আগে গত ৪ মার্চ উপজেলার কদমরসুলে সীমা অক্সিজেন প্লান্ট কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সাতজন নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হন।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com