নানা সংকটে চলতি বছর সৃজনশীল বইয়ের দাম ২০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। তার প্রভাব পড়েছে বইমেলার বই বিক্রিতে। পুরো বইমেলার প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এবার ৪৭ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে সাড়ে ৫ কোটি টাকা কম।
গতকাল মঙ্গলবার ছিল অমর একুশে বইমেলার সমাপনী দিন। এদিন মেলা চলে বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেলে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রতিবেদন উপস্থাপন করে মেলা আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, বইমেলায় বাংলা একাডেমিসহ সব প্রতিষ্ঠানের বই ২৫ শতাংশ কমিশনে বিক্রি হয়েছে। ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলা একাডেমি ১ কোটি ২৪ লাখ টাকার বই বিক্রি করেছে। ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্টল মালিকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য এবং আজকের সম্ভাব্য বিক্রি যুক্ত করলে বলা যায় যে, প্রায় ৪৭ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে। তবে, এটি প্রকৃত চিত্র বলা যাবে না। কারণ অনেক প্যাভিলিয়ন তাদের বিক্রির তথ্য দেয়নি। আবার অনেক প্যাভিলিয়নের বই বিক্রির তথ্য গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি।
বাংলা একাডেমির দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২২ সালের বইমেলা হয়েছে ৩১ দিন। এ সময়ে প্রায় ৫২ কোটি ৫০ লাখ টাকার বই বিক্রি হয়। এর আগে, ২০২০ সালের মেলায় ৮২ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছিল। মহামারির কারণে ২০২১ সালে বইয়ের বিক্রি কমে মাত্র ৩ কোটি ১১ লাখ টাকায় নেমে আসে। করোনা বাদ দিলে ২০২২ সালের তুলনায় সাড়ে ৫ কোটি এবং ২০২০ সালের তুলনায় ৩৫ কোটি টাকার বই বিক্রি কমেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কে এম মুজাহিদুল তথ্যে গরমিলের জন্য বড় প্রকাশকদের দুষলেন। তিনি কালবেলাকে বলেন, বড় বড় প্রকাশক বই বিক্রির তথ্য ঠিকমতো দেয়নি। বিপরীতে ছোট প্রকাশকরা ঠিকমতো তথ্য দিয়েছে।
সমাপনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা ভাষণ দেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বাংলা একাডেমির সচিব এ. এইচ. এম. লোকমান। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন বাদল সৈয়দ, সালাহ উদ্দিন মাহমুদ, সৌম্য সালেক এবং পলি শাহিনা।
সমাপনী অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, কভিড মহামারি পরবর্তীকালে এক মাসব্যাপী বইমেলা আয়োজন সত্যিই আমাদের জন্য বড় একটি সফলতা। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, সবার সক্রিয় অংশগ্রহণ ও সহযোগিতায় সাফল্যমণ্ডিত হয়েছে এবারের বইমেলা।
কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, বইমেলা আমাদের জাতীয় জীবনে বড় একটি দিগন্ত।
অনুষ্ঠানে ক্যারোলিন রাইট এবং জসিম মল্লিককে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ সাহিত্য পুরস্কার ২০২২ এবং কবি মোহাম্মদ রফিককে কবি জসীমউদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩ প্রদান করা হয়।
গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার ২০২৩ :
অমর একুশে বইমেলা ২০২৩-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে ২০২২ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক বই প্রকাশের জন্য আগামী প্রকাশনীকে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার ২০২৩ প্রদান করা হয়। ২০২২ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে শৈল্পিক ও গুণমান বিচারে সেরা বই বিভাগে আহমদ রফিক রচিত বিচ্ছিন্ন ভাবনা প্রকাশের জন্য জার্নিম্যান বুকস, মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ রচিত বাংলা একাডেমি আমার বাংলা একাডেমি বইয়ের জন্য ঐতিহ্য এবং হাবিবুর রহমান রচিত ‘ঠার বেদে জনগোষ্ঠীর ভাষা’ প্রকাশের জন্য পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্সকে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২৩ প্রদান করা হয়। ২০২২ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ বইয়ের মধ্য থেকে গুণমান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য ময়ূরপঙ্খি-কে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার-২০২৩ প্রদান করা হয়। ২০২৩ সালের অমর একুশে বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুথিনিলয় (প্যাভিলিয়ন), নবান্ন প্রকাশনী (২-৪ ইউনিট), উড়কি (১ ইউনিট)-কে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২৩ প্রদান করা হয়।
মেলায় বই এসেছে ৩ হাজার ৭৩০টি :
২৮তম দিনে ২৬৭টি সহ এবারের বইমেলায় নতুন বই এসেছে ৩ হাজার ৭৩০টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি এসেছে কবিতার বই ১ হাজার ২৪৭টি।