শিতাংশু ভৌমিক অংকুর
প্রকাশ : ২৫ জুন ২০২৪, ০৩:০০ এএম
আপডেট : ২৫ জুন ২০২৪, ০৯:১১ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

কাউন্সিলর-ব্যবসায়ীদের দখলে দেবোত্তর সম্পত্তি

পুরান ঢাকা
বেগম পত্রিকার অফিস। ছবি : সংগৃহীত
বেগম পত্রিকার অফিস। ছবি : সংগৃহীত

পুরান ঢাকায় অগাধ ভূসম্পত্তির মালিক ছিলেন ধর্মপ্রাণ জানর্কি বল্লব দত্ত। ১৯৩১ সালে জানর্কি বল্লব ঈশ্বরের কৃপা লাভের উদ্দেশ্যে শ্রীশ্রী কালাচাঁদ ঠাকুরের নামে একটি ট্রাস্ট গঠন করেন। সময়ের আবর্তে সেই সম্পত্তিতে নজর পড়েছে প্রভাবশালীদের। ভয় ও আতঙ্কে চুপ রয়েছে সেবায়েত কমিটি। আর এই সুযোগে বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি স্থানীয় দুই কাউন্সিলরও বসিয়েছেন দখলের থাবা। এমনকি ঐতিহ্যবাহী বেগম পত্রিকার অফিসও অপসারণ করা হয়েছে হুমকি-ধমকি দিয়ে। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চায় না বেগম পত্রিকাও। যদিও প্রথম দিকে সেবায়েত কমিটি দখলদারদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল। এ ছাড়া বিচারের দাবিতে ঘুরেছিল প্রভাবশালীদের দুয়ারে। তবে দীর্ঘ চেষ্টায় সুফল মেলেনি।

জানা যায়, পাটুয়াটুলী এলাকার ৬৪, ৬৫, ৬৬, ৬৭, ৬৮ এবং ৭৬ নম্বর দাগের ভবন ও জমি কালাচাঁদ ঠাকুর জিউ এস্টেটের, যা জানর্কি বল্লব দত্ত এসব জমি শ্রীশ্রী কালাচাঁদ ঠাকুরের নামে পারিবারিক ট্রাস্টে দান করে যান। দেখা গেছে, কাগজে-কলমে জমি শ্রীশ্রী কালাচাঁদ ঠাকুর জিউ বিগ্রহ এস্টেটের নামে থাকলেও অধিকাংশ বেদখল।

পুরান ঢাকার পাটুয়াটুলীর লয়াল স্ট্রিটের পুরোনো ঠিকানা ছেড়ে বেগম পত্রিকা এক বছর ধরে নারিন্দার শরৎ গুপ্ত রোডের নাসিরউদ্দিন সাহেবের নিজ বাড়িতে হস্তান্তর হয়। পরবর্তী সময়ে অফিস নেওয়া হয় প্রতিষ্ঠান মতিঝিল ও গুলশানে। জানা গেছে, বেগম পত্রিকার বর্তমান সম্পাদক ও নূর জাহান বেগমের বড় মেয়েকে হুমকি দিয়ে পাটুয়াটুলীর অফিস ছাড়তে বাধ্য করেছেন স্থানীয় কাউন্সিলরের সহযোগিতায় ব্যবসায়ীরা। তথ্য বলছে, নূরজাহান বেগমের মৃত্যুর পর নূরজাহান বেগমের বড় মেয়ে ফ্লোরা ইয়াসমিন খান সাথী বেগম পত্রিকার দায়িত্ব নেন। তার পর থেকেই স্থানীয় প্রভাবশালী এবং বিভিন্ন ব্যবসায়ীর পক্ষ থেকে অফিসটি ছাড়ার জন্য চাপের অভিযোগ আসে। দীর্ঘদিন ধরে পত্রিকাটি চুক্তিতে এস্টেটের ভবনে নামমাত্র ভাড়ায় চলছিল।

সরেজমিন দেখা যায়, বেগম পত্রিকা ও সওগাত প্রেসের সাইনবোর্ড নেই। সেখানে এখন কালাচাঁদ জিউ বিগ্রহ এস্টেটের সাইনবোর্ড। ভবনের দ্বিতীয়তলায় চশমা হাউস ও নিচে পাকিজা গ্রুপের বিভিন্ন নামে কয়েকটি দোকান রয়েছে। অফিসের জায়গায় তৈরি হয়েছে গুদামঘর। এ ছাড়া বাকিটা ব্যবহার হচ্ছে ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আরিফ হোসেন ছোটন ও ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সারোয়ার হাসানের (আলো) নেতাকর্মীদের ক্লাবঘর হিসেবে। সেখানে উপস্থিত আলী আকবর অপু বলেন, বছরখানেক আগে বেগম পত্রিকা এখান থেকে চলে গেছে। এটা এখন দেবোত্তর সম্পত্তি হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে কালাচাঁদ ট্রাস্টের নামে। এ সময় অপুকে পরিচয় জিজ্ঞেস করলে তিনি মানুষ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের কর্মী বলে দাবি করেন। একই সঙ্গে নিজেকে কালাচাঁদ এস্টেটের কর্মচারীও দাবি করেন। জানা যায়, মানুষ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনটির প্রতিষ্ঠাতা প্রেম নাথ সুর। কাউন্সিলর মো. আরিফ হোসেন ছোটন এবং সারোয়ার হাসান আলোর পৃষ্ঠপোষকতায় বর্তমানে সেটি পরিচালিত হয়।

নিয়ে বেগম পত্রিকার সম্পাদক ফ্লোরা ইয়াসমিন খান সাথী কালবেলাকে বলেন, নানা সময় আমাদের এই জায়গা ছাড়ার জন্য হুমকি ও মানসিক নির্যাতন করেছে অনেকে। বিষয়গুলো দায়িত্বশীল জায়গায় জানানো হলেও কেউই পাশে দাঁড়ায়নি। সবশেষে এস্টেটের কাছে অফিস হস্তান্তর করে দিই। ভবন সংস্কারে কিছু অর্থ খরচ করেছিলাম। অফিস স্থানান্তরের সময় এস্টেট কর্তৃপক্ষ সেই বাবদ কিছু অর্থও দেয়। তিনি বলেন, আমাদের কাছে পরিবারের নিরাপত্তাই বড় ইস্যু। সেখান থেকে বেগম পত্রিকা ও সওগাত প্রেস সরে এলেও বেগম পত্রিকা নিয়মিতভাবে প্রতি মাসে প্রকাশ পাচ্ছে।

কালাচাঁদ জিউ এস্টেটের সেবায়েত কমিটির সভাপতি অর্জুন দত্ত বলেন, আমার পিতামহ জানর্কি বল্লব দত্ত ১৯৩১ সালে শ্রীশ্রী কালাচাঁদ ঠাকুরের নামে আমাদের পারিবারিক ট্রাস্টে সম্পত্তি দান করে যান। বেগম পত্রিকা প্রায় শুরু থেকেই এখানে ছিল। কিন্তু কয়েক বছর আগে তারা আমাদের জানান এখানে থাকতে পারবেন না। তারপর থেকে সেখানে কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করে আছেন। কয়েক বছর আগে আমরা বাড়ি ভাড়া আইনে মামলা করি। তার পরও ব্যবসায়ীরা আমাদের ভাড়া দেন না। আমাদের ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় কালাচাঁদ জিউ এস্টেট তার সম্পত্তির দখল হারিয়েছি, যার আর্থিক মূল্য কয়েকশ কোটি টাকা। এখানে এখন এক ধরনের দখলদারিত্ব চলছে। যারা এখন এখানে আছে, বলতে গেলে জোর করে দখলে আছে। এর মধ্যে অন্যতম পাকিজা গ্রুপ, সিটি এন্টারপ্রাইজ, স্মৃতি এন্টারপ্রাইজ ও শুভ প্রিন্ট শাড়িসহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠান। আবুল বসার ও মোহম্মদ হাবিব নামে দুই ব্যবসায়ী ৭৬ নম্বর দাগের জায়গাটি সম্পূর্ণ দখল করে রেখেছে। আমাদের দাবি, সরকার উদ্যোগী হয়ে আমাদের এস্টেটের যেসব জায়গা ও মন্দির স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের দখলে, সেগুলো ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করুক।

পাকিজা গ্রুপের পরিচালক (অর্থ আদায়কারী) মোহম্মদ শরীফ বলেন, কাউকে হুমকি-ধমকি দিইনি। বেগম পত্রিকা স্বেচ্ছায় অফিস ছেড়ে গেছে। উল্টো ভবনের জন্য যাওয়ার সময় টাকাপয়সা নিয়ে গেছে। আমরা নিয়মিত ভাড়া দিতে চাই; কিন্তু কালাচাঁদ জিউ এস্টেটের দায়িত্বশীল কেউ ভাড়া নেন না, ফলে আমরাও দিতে পারি না। আমরা দীর্ঘদিন ধরে এখানে আছি। কালাচাঁদ জিউ এস্টেটের সেবায়েতদের করা বাড়ি ভাড়া আইনের মামলা প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলে তিনি বিষয়টি নাকচ করেন।

দখলকারী প্রতিষ্ঠান স্মৃতি এন্টারপ্রাইজ ও শুভ প্রিন্ট শাড়ির দোকানের ব্যবস্থাপক পরিচয় দেওয়া শীতল সাহা বলেন, এই প্রতিষ্ঠানটি শান্তি বাবুর। তিনি মারা গেছেন। তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দোকান দেখাশোনা করতেন। আমরা জানি না, এটা কার জায়গা, কে ভাড়া দেয়। এ বিষয়ে অভিযুক্ত বাকিদের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে ও তাদের অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করলেও তাদের পাওয়া যায়নি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইসরায়েলকে প্রতিশোধের রাস্তা দেখিয়ে দিলেন ট্রাম্প

মসজিদ টার্গেট করে চালানো হচ্ছে বিমান হামলা

আর এক জয় দূরে মেসির মায়ামি!

নির্যাতনের তথ্য চেয়ে আ.লীগের বিশেষ বার্তা

পূজায় বুড়িমারীতে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকবে ৬ দিন

প্রতি সপ্তাহে সহায়তা দেবে জুলাই ফাউন্ডেশন : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব

আন্দোলনে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি, সেই যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করছে যমুনা গ্রুপ

জনবল নেবে স্যামসাং বয়সসীমা  ২১ থেকে ২৮ বছর 

বায়ুদূষণে শীর্ষে হ্যানয়, ঢাকার খবর কী

১০

সুস্থ থাকতে ভাত নাকি রুটি, কী বলছেন চিকিৎসক

১১

লিটনের শরীরে ৫ শতাধিক বুলেট

১২

সপ্তম রাউন্ডে জমে উঠেছে প্রিমিয়ার লিগের লড়াই

১৩

পাচারের টাকায় আমিরাতে মিনি সিটি নিয়ে আসিফের স্ট্যাটাস

১৪

শেরপুরে ভয়াবহ বন্যায় ৭ জনের মৃত্যু

১৫

তিন বিভাগে ভারি বৃষ্টির পূর্বাভাস গবেষকের

১৬

সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার আক্ষেপ জ্যোতির

১৭

১৩ জেলায় দুপুরের মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের শঙ্কা

১৮

ভারতীয় দলে আচমকা পরিবর্তন

১৯

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ২৮ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

২০
X