পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রতি বছর বাজেটে তামাক থেকে শুরু করে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পণ্য উৎপাদনে নিরুৎসাহিত করে আসছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর); কিন্তু প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর লেড বা সিসা রিসাইকেলিংয়ে আয়কর সুবিধার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে লেড রিসাইকেলিংয়ের উৎসে কর ৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। পরিবেশবিদরা বলছেন, এতে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পণ্য উৎপাদনে সহায়তা করা হচ্ছে।
বাজেটে আয়কর-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, রিসাইকেলড সিসা সরবরাহের ক্ষেত্রে উৎসে কর নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ শতাংশ, যা চলতি অর্থবছরে ধার্য আছে ৭ শতাংশ। অর্থাৎ প্রায় অর্ধেকের বেশি কর কমিয়ে রিসাইকেলড সিসাকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এতে পরিবেশের এবং জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা উপেক্ষিত হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে আয়কর কর্মকর্তাদের দাবি, প্রস্তাবিত বাজেটে রিসাইকেল খাতকে উৎসাহিত করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে লেড রিসাইকেলকে এই সুবিধা দেওয়া হয়েছে। যদিও এনবিআর তামাক থেকে শুরু করে গাড়ির ক্ষেত্রে পরিবেশ সুরক্ষার কারণ দেখিয়ে কর আরোপ করেছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান কালবেলাকে বলেন, বাংলাদেশে লেডের রিসাইকেলড শুনতে যত ভালো মনে হয়, আসলে তা নয়। লেড আসলে বিষাক্ত জিনিস। আমাদের এর বিকল্প খুঁজতে হবে। আর লেড শেষ পর্যন্ত কোথায় যায়, তাও দেখতে হবে। আমাদের বিজ্ঞানীদের বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। লেড আমাদের পরিহার করতে হবে।
জানা গেছে, লেড অ্যাসিড ব্যাটারি রিসাইক্লিং করা ছাড়াই বাজারে যাচ্ছে। এ ছাড়া বেশিরভাগই যথাযথভাবে রিসাইক্লিংও করছে না। লেড তথা সিসার সঙ্গে পানিসদৃশ অ্যাসিড যত্রতত্র ফেললে তা পরিবেশে ছড়াবে। এর আগে গরুর দুধে সিসা পাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। জাপানে লেড এবং অন্যান্য ধাতব মিশ্রিত ই-বর্জ্য নদীতে ফেলার কারণে মিনামাতা রোগ, ক্যান্সার থেকে শুরু করে বিভিন্ন চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছিল মানুষ। এরপর নদী খনন ও পানি শোধন করে পুরো অঞ্চলকে নিরাপদ করা হয়।
বাংলাদেশে এ-সংক্রান্ত আইন ও বিধিনিষেধ থাকার পরেও বিষয়গুলোর তদারকি হচ্ছে না। লেড অ্যাসিড পূর্ণচক্রায়নকারী লাইসেন্সবিহীন প্রতিষ্ঠান পরিবেশ ধ্বংস করছে। মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে এবং ঢাকার আশপাশে অনেক পরিমাণ ব্যাটারি, অ্যাসিড এবং লেডের মাধমে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস ও দূষিত হচ্ছে। সিসার মাইক্রো কণাগুলো বাতাসে মিশে ছড়িয়ে পড়ছে।
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. সালেহ আহাম্মদ বলেন, লেড বেশকিছু নেতিবাচক দিক আছে; যেমনÑ এটার লেড লিথিয়ামের তুলনায় খুব বিষাক্ত। সিসা সুপরিচিত ভারী ধাতু। এটা কখনোই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না। এটার এনার্জি ডেনসিটি (শক্তি ঘনত্ব) সীমিত। লেডে কর সুবিধা দেওয়া আসলে ঠিক হচ্ছে কী না, ভাবার সময় এখন। কারণ লেড পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এ জন্য বিজ্ঞানীরা লিথিয়ামের বিকল্প হিসেবে এলিমেন আয়ন ব্যাটারি অথবা নিকেল আয়ন ব্যাটারির দিকে ঝুঁকছে। তবে লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি বাণিজ্যিকভাবে এগিয়ে আছে। কারণ এর এনার্জি ডেনসিটি ভালো। তাই আমাদের এখন উন্নত প্রযুক্তির দিকে যেতে হবে। বিশ্বের অনেক দেশের মতো নীতিমালা করে লেড অ্যাসিড ব্যাটারির থেকে বের হতে হবে।