দেশে স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে, যা বিরাজমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির সবচেয়ে বড় প্রভাবক হয়ে উঠেছে। বর্তমানে স্বাস্থ্য খাতের মূল্যস্ফীতি সবচেয়ে বেশি। চিকিৎসা মানুষের মৌলিক অধিকার হলেও এই খাতের ব্যয় মেটাতে গিয়ে প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষকে নিঃস্ব হতে হচ্ছে। স্বাস্থ্য খাতের এই ব্যাপক মূল্যস্ফীতির চাপ বেশি গ্রামে। অর্থাৎ শহরের তুলনায় গ্রামের মানুষের এই খাতে অনেক বেশি খরচ করতে হচ্ছে।
সম্প্রতি চলতি অর্থবছরের এপ্রিল মাসের মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। মূল্যস্ফীতির সর্বশেষ প্রতিবেদনের খাতভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণে এমন চিত্র উঠে এসেছে। বিবিএসের হিসাবে, এপ্রিলে গড় মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশের ঘরে নামলেও ব্যাপক হারে বেড়েছে স্বাস্থ্যসেবার ব্যয়।
বিবিএসের সর্বশেষ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মার্চে স্বাস্থ্য খাতে মূল্যস্ফীতি ছিল ২ দশমিক ১৬ শতাংশ, এপ্রিলে তা এক লাফে বেড়ে হয়েছে ১৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ। স্বাস্থ্য খাতে মূল্যস্ফীতি ১৩ দশমিক ৬৯ শতাংশের অর্থ হলো, ২০২৩ সালের এপ্রিলে যে স্বাস্থ্য পণ্য কিনতে খরচ করতে হয়েছে গড়ে ১০০ টাকায়, ২০২৪ সালের এপ্রিলে তা কিনতে হয়েছে গড়ে ১১৩ টাকা ৬৯ পয়সায়।
মূল্যস্ফীতির খাতভিত্তিক তথ্যে দেখা যায়, গত ফেব্রুয়ারিতেও স্বাস্থ্য খাতের মূল্যস্ফীতি ছিল ২ দশমিক ১৪ শতাংশ, মার্চে তা কিছুটা বেড়ে ২ দশমিক ১৬ শতাংশ হয়। কিন্তু এপ্রিলে এসে তা এক লাফে ১৩ দশমিক ৬৯ শতাংশে ঠেকেছে। অর্থাৎ মাসের ব্যবধানে এই খাতে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ১১ দশমিক ৫৩ শতাংশ। খাতভিত্তিক মূল্যস্ফীতির মধ্যে কোনো খাতে স্বাস্থ্য খাতের মতো এক লাফে এত বেশি বাড়েনি।
বছরের ব্যবধানেও অনেকাংশে বেড়েছে স্বাস্থ্য খাতের মূল্যস্ফীতি। বিবিএসের হিসাবে, গত বছরের এপ্রিল মাসে স্বাস্থ্যসেবা খাতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ। সেই হিসেবে বছরের ব্যবধানে এই খাতে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬ দশমিক ০৫ শতাংশ। যদিও গত বছরের ফ্রেব্রুয়ারি এবং মার্চ মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ২০ শতাংশের বেশি।
এদিকে স্বাস্থ্য খাতে সবচেয়ে বেশি মূল্যস্ফীতি হয়েছে গ্রামে। বিবিএসের হিসাবে, চলতি অর্থবছরের এপ্রিলে গ্রামে এই খাতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ১৭ দশমিক ০৪ শতাংশ, যা আগের মাস মার্চে ছিল মাত্র ১ দশমিক ৩১ শতাংশ। আর ফেব্রুয়ারিতে ছিল শূন্য দশমিক ৯৬ শতাংশ। অর্থাৎ মাসের ব্যবধানে গ্রামে স্বাস্থ্য খাতের মূল্যস্ফীতি এক লাফে বেড়েছে ১৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ। আর বছরের ব্যবধানে বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ।
অন্যদিকে শহরে একই সময়ে স্বাস্থ্য খাতে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ, যা আগের মাস মার্চে ছিল ৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ এবং ফেব্রুয়ারি মাসে ছিল ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ। অর্থাৎ মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ২ শতাংশ। আর বছরের ব্যবধানে কমেছে প্রায় এক শতাংশ। বিবিএসের হিসাবে, শহরে যেখানে মাসের ব্যবধানে স্বাস্থ্য খাতের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ২ শতাংশ, সেখানে গ্রামে বেড়েছে ১৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ। আর বছরের ব্যবধানে যেখানে শহরে এই খাতের মূল্যস্ফীতি কমেছে প্রায় এক শতাংশ, সেখানে গ্রামে বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। অর্থাৎ শহরের তুলনায় এই খাতে গ্রামের মানুষকে অত্যধিক বেশি খরচ করতে হচ্ছে।
সহজ করে বললে, গত বছরে এপ্রিলে যে স্বাস্থ্যসেবায় শহরের মানুষের খরচ করতে হয়েছিল ১০০ টাকা, ২০২৪ সালের এপ্রিলে সেখানে খরচ হয়েছে গড়ে ১০৭ টাকা ১৪ পয়সায়। আর গ্রামের মানুষকে সেখানে খরচ করতে হয়েছে ১১৭ টাকা ৪ পয়সা। অর্থাৎ একই সেবায় গ্রামের মানুষকে ১০ টাকা বেশি খরচ করতে হয়েছে।
স্বাস্থ্যের পাশাপাশি পরিবহন খাতেও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে মূল্যস্ফীতি। বিবিএসের হিসাবে, এপ্রিল মাসে এই খাতে মূল্যস্ফীতির হার ৮ দশমিক ২৩ শতাংশ, যা আগের মাস মার্চে ছিল ৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে পরিবহন খাতে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ। তবে এই খাতে গ্রামের তুলনায় শহরে মূল্যস্ফীতি বেশি হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য বিবিধ খাতেও বেড়েছে মূল্যস্ফীতি। এই খাতে মাসের ব্যবধানে বেড়েছে প্রায় ৪ শতাংশ। অন্যদিকে পোশাক, বাড়ি ভাড়া, গ্যাস, পানি , বিদ্যুৎ, বিনোদন এবং ফার্নিচার খাতের মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে।