সরকারবিরোধী আন্দোলন পুনরুজ্জীবিত করতে আবারও রাজপথে সক্রিয় হতে চাইছে বিএনপি। সে জন্য ধারাবাহিক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ ও সক্রিয় করতে চাইছে দলটি। সে লক্ষ্যেই আজ শুক্রবার এবং আগামীকাল শনিবার ঢাকায় দুটি সমাবেশ করা হবে। পর্যায়ক্রমে এ ধরনের আরও কর্মসূচি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে দলের হাইকমান্ড। এর মধ্যেই যে কোনো সময় আন্দোলনের বড় কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানা গেছে।
বিএনপি নেতারা বলছেন, সরকার পতনের এক দফার আন্দোলন ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে গিয়ে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বিএনপির নেতাকর্মীরা। গ্রেপ্তার এড়াতে কেন্দ্রীয় অসংখ্য নেতা ছিলেন আত্মগোপনে। ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে অসংখ্য নেতাকর্মী কারাগারে গেছেন। সম্প্রতি শতাধিক নেতাকর্মী কারাবন্দি হয়েছেন। গ্রেপ্তার ও আটক থেমে নেই। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে উপজেলা নির্বাচন; কিন্তু বিএনপি এই উপজেলা নির্বাচনও বর্জন করেছে। পাশাপাশি নির্বাচনে ভোটদানে বিরত থাকতে সারা দেশে লিফলেট বিতরণসহ কর্মিসভা করছে।
বিএনপির নেতাদের দাবি, তাদের আন্দোলন শেষ হয়নি; বিরতি চলছে। হামলা-মামলায় ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে নানামুখী তৎপরতা চলছে। যে কোনো সময় আন্দোলনের বড় কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। তার আগে ধারাবাহিক কর্মসূচির মাধ্যমে নেতাকর্মীদের আরও ঐক্যবদ্ধ এবং সক্রিয় করা হবে।
এদিকে নতুনভাবে গ্রেপ্তার বন্ধ এবং কারাবন্দিদের মুক্তির দাবিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে স্মারকলিপি প্রদানের চিন্তা করছে বিএনপির হাইকমান্ড। গত বুধবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির সভায় এ বিষয়সহ একাধিক ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে। তা ছাড়া আজ এবং আগামীকালের সমাবেশের পর ৩০ মে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জুনের প্রথমার্ধ পর্যন্ত স্বাভাবিক কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলো। এর আগে গত ১ মে শ্রমিক দিবসে বড় ধরনের শোডাউন করেছে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল।
কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত
জানা গেছে, আপাতত সাদামাটা কর্মসূচির পাশাপাশি কূটনৈতিক তৎপরতায় গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি। গত বুধবার ঢাকায় যুক্তরাজ্যের ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলবিষয়ক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যান মেরি ট্রেভেলিয়ানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপির মহাসচিবের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল। বৈঠকে বিএনপির প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় আরও ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ ও মানবাধিকার সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান আসাদ। বৈঠকটি ১ ঘণ্টা ২০ মিনিটের বৈঠকে যুক্তরাজ্য হাইকমিশনার সারাহ ক্যাথেরিন কুকসহ হাইকমিশনের রাজনৈতিক বিভাগের দুজন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শামা ওবায়েদ গতকাল কালবেলাকে বলেন, ‘এটি একটি স্বাভাবিক বৈঠক। সেখানে দেশের চলমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক পরিস্থিতি ও গণতান্ত্রিক পরিবেশসহ সব বিষয়ে আলাপ হয়েছে।’
আজ ও আগামীকাল ঢাকায় সমাবেশ
আজ শুক্রবার এবং আগামীকাল শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আজ শুক্রবার বিকেলে ঢাকা মহানগর বিএনপি ও শনিবার বিকেলে যুবদলের উদ্যোগে সমাবেশ হবে। এই সমাবেশের বিষয়ে অবহিত করতে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত যুগ্ম কমিশনার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিনের সঙ্গে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ডিএমপি কার্যালয়ে গিয়ে সাক্ষাৎ করেছে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল। যদিও অনুমতির বিষয়ে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানায়নি।
বিএনপির এই প্রতিনিধিদলে ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, মহানগর দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু প্রমুখ।
বৈঠকের পরে এ্যানি কালবেলাকে জানান, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসাসহ নিঃশর্ত মুক্তি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নবী উল্লাহ নবীসহ সব রাজনৈতিক বন্দির মুক্তির দাবিতে ঢাকা মহানগর বিএনপি শুক্রবার সমাবেশ করবে। এতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় প্রধান অতিথি থাকবেন। এ ছাড়া খালেদা জিয়া ও যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুসহ কারাবন্দি নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ করবে যুবদল।’
তিনি জানান, তারা ডিএমপির যুগ্ম কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে সমাবেশের বিষয়ে অবহিত করেছেন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন। পুলিশ কর্মকর্তা মুহিত জানিয়েছেন, তারা বিচার বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন।
গত রাত সাড়ে ৮টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশের পক্ষ থেকে বিএনপিকে কিছু জানানো হয়নি।
বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ কালবেলাকে বলেন, ‘বর্তমান সরকারের আমলে দেশের জনগণ, ব্যবসায়ী, ক্ষমতাসীন দলের লোকজন সবাই অতিষ্ঠ। সেজন্যই বিএনপি দেশের জনগণকে উদ্বুদ্ধ ও ঐক্যবদ্ধ করতে আজ শুক্রবার ও আগামীকাল ঢাকায় সমাবেশ করতে প্রস্তুত।’
সারা দেশে চলছে কর্মিসভা
এদিকে গত বুধবার থেকে শুরু হয়েছে চার ধাপের উপজেলা নির্বাচন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতোই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনও বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে এই নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় প্রথম ধাপে ৮০ জন এবং দ্বিতীয় ধাপে ৬১ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপি ও অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠনের কোনো নেতা এই নির্বাচনের কোনো প্রার্থীকে সহায়তা করলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
এদিকে দলীয় নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রাখা এবং চলমান উপজেলা নির্বাচনে ভোটারদের নিরুৎসাহিত করতে ভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কর্মিসভা করছে বিএনপি। এর মধ্য দিয়ে নেতাকর্মীদের বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘দেশের মানুষ বিশ্বাস করে না, আওয়ামী লীগ সরকার ও তাদের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। সেজন্যই বিএনপি ও বিরোধীদের ডাকে সাড়া দিয়ে জনগণ ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছে। এবারও জনগণ বিএনপির আহ্বানে সাড়া দিয়ে উপজেলার ভোট বর্জন করছেন। বুধবার প্রথম ধাপের নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে কোনো ভোটার দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়ে ইতোমধ্যে কেন্দ্র থেকে সারা দেশে ৫ লাখ লিফলেট পাঠানো হয়েছে। সেগুলো বিতরণও করা হয়েছে। আরও লিফলেট পাঠানো হচ্ছে। জেলাগুলোকেও লিফলেট ছাপিয়ে বিতরণ করতে বলা হয়েছে।’