রাজধানীর শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের সামনে মোটরসাইকেলে থাকা এক ব্যক্তিকে বেধড়ক মারধর করছেন কয়েকজন যুবক। গত বুধবার সকাল সোয়া ১১টায় এই ঘটনার কয়েকটি সিসিটিভি ফুটেজ এসেছে কালবেলার হাতে। এসব ফুটেজে দেখা যায়, মারধরের এক পর্যায়ে মধ্যবয়সী ওই ব্যক্তি রাস্তায় পড়ে যান। এরপর রাস্তায় ফেলেই শুরু হয় তার ওপর উপর্যুপরি কিল, ঘুসি ও লাথি। এভাবে এলোপাতাড়ি চলে মারধর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আহত মো. সাইদুর রহমান সেলিম পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের স্মাগলিং এবং ফেক কারেন্সি টিমের সদস্য।
মারধর করা যুবকদের মধ্যে একজনকে শনাক্ত করতে পেরেছে কালবেলা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ছাত্র এবং জিয়াউর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। নাম রতন সরকার। তার ফেসবুকের তথ্যমতে, তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সহ-সম্পাদক। রতনের তথ্যমতে, বাকিদের নাম শান্ত, রাজীব ও ইমরান। তারা সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং রতন সরকারের বন্ধু ও ছোট ভাই।
রতন সরকার নামে কেউ ছাত্রলীগে নেই এবং তাকে চেনেন না বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা। তবে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত ছবি রয়েছে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত একটি কমিটির প্যাড আসে কালবেলার হাতে। ২০২২ সালের ৪ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত রংপুর বিভাগীয় একটি সমন্বয় দলে রতন সরকারের পদবি লেখা দেখা যায় সহ-সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, রাস্তার ওপরে পাশাপাশি দুটি রিকশা রাখা। তিনজন যুবক রাস্তার ওপরে দাঁড়িয়ে আছেন। সবার কাঁধে ব্যাগ। এ সময় পাশ দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। মোটরসাইকেলের সামনের অংশের সঙ্গে ওই যুবকদের হালকা ধাক্কা লাগে। ধাক্কা লাগার পরেও তারা দাঁড়িয়েই ছিলেন। এরপর ওই যুবকদের সঙ্গে ওই পুলিশ কর্মকর্তার কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে ওই তিন যুবক মোটরসাইকেল থেকে পুলিশ কর্মকর্তাকে নামিয়ে মারধর শুরু করেন। মারধরের এক পর্যায়ে তিনি রাস্তায় পড়ে যান। এরপর শুরু হয় লাথি, কিল ও ঘুসি। একপর্যায়ে মারতে মারতে রাস্তা থেকে মার্কেটের সামনে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়।
আর একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, চার যুবক মিলে ফের মারতে মারতে ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে মার্কেটের সামনে দিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তখন ওই পুলিশ কর্মকর্তার হাতে একটি হেলমেট ছিল। এ সময় ছাত্রলীগ নেতা রতন সরকার ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে মার্কেটের গেটের একটি দেয়ালের সঙ্গে মাথায় বাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করেন। পুলিশ কর্মকর্তা তখন হাত দিয়ে প্রাণপণ মাথা বাঁচানোর চেষ্টা করেন। মাথা বাঁচাতে তিনি হাতের হেলমেট দেয়ালের সঙ্গে মিশিয়ে ধরেন। এভাবেই মারতে মারতে নিয়ে যেতে দেখা যায়।
জানতে চাইলে অভিযুক্ত রতন সরকার কালবেলাকে বলেন, ‘আমি ওইদিক দিয়া যাচ্ছিলাম। আমার বন্ধুবান্ধব ও কয়েকজন ছোট ভাইকে দেখি ওই পুলিশ কর্মকর্তা মারধর করছেন। পরে আমি কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি পরিচয় দেন। তখন আমি বলি, আপনি পুলিশ হন আর যাই হন ক্যাম্পাসে ওইসব চলে না। আমরাও একদিন পুলিশ হতে পারি। এরপর হালকা হাতাহাতি হয়। তেমন বড় কিছু না।’
রতন সরকার আরও বলেন, ‘আমার বন্ধুদের বাইক দিয়ে ওই লোক ধাক্কা দিয়ে আবার সেই মারধর করেছে। এখন আমার কোন বন্ধু বা ছোট ভাইকে মারতে দেখলে তো আমি যাবই। ঝামেলাটা ওদের সঙ্গে, ওদের মারতে দেখে আমি ওখানে গিয়েছিলাম।’
মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তা মো. সেলিম মোবাইল ফোনে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এদিকে ঘটনার সময় তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে যান শাহবাগ থানায় উপরিদর্শক (এসআই) মশিউর রহমান। তিনি কালবেলাকে বলেন, বিষয়টি জেনে আমি ওখানে যাই। আমি যাওয়ার পরপরই সিটিটিসির একটি টিম ওখানে আসে। এরপর তারা আমাকে বলেন, আপনি চলে যান; আমাদেরটা আমরাই দেখছি। এরপরে আমি চলে আসি।
জানতে চাইলে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাজিরুর রহমান বলেন, ঘটনাটা শোনার পরে আমাদের অফিসার ওখানে যায়। এরপর ফুটেজ সংগ্রহ করে আমরা চলে আসি। এই ঘটনায় শাহবাগ থানায় কোন মামলা কিংবা অভিযোগ দেওয়া হয়নি।