কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ মার্চ ২০২৪, ০৩:০৪ এএম
আপডেট : ১৪ মার্চ ২০২৪, ০৮:৩৯ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

হালদায় বেড়েছে মাছের ডিম কমেছে ডলফিনের মৃত্যু

দূষণ কমে এসেছে
হালদায় বেড়েছে মাছের ডিম কমেছে ডলফিনের মৃত্যু

শিল্পকারখানা ও আবাসিক বর্জ্য এবং মনুষ্য সৃষ্ট নানা কারণে একসময় পানি দূষণ ও জীববৈচিত্র্য নষ্ট হয়ে যায় দেশের পূর্ব-পাহাড়ি অঞ্চলের নদী হালদার। খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া এই নদীতে আবাসিক বর্জ্য ফেলা বন্ধ হয়েছে। নদীর পার্শ্ববর্তী অনেক শিল্পকারখানা বন্ধ হয়েছে। এ ছাড়া নদীর জীববৈচিত্র্য রক্ষায় হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত কমিটি কাজ করছে। সরকার ২০২০ সালে হালদা নদীকে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এরপর থেকে হালদায় মনুষ্য সৃষ্ট বিপর্যয় কমে এসেছে। সমন্বিত পদক্ষেপে নদীটির দূষণ কমেছে। ফলে মিঠা পানির এই নদীতে বেড়েছে মাছের ডিম। কমেছে ডলফিনের মৃত্যু। ফিরে এসেছে নদীর জীববৈচিত্র্যের জন্য অনুকূল পরিবেশ।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া হালদাকে বাঁচাতে গবেষণা, সামাজিক কর্মসূচি, প্রচারাভিযান, লেখালেখি, সচেতনতা সৃষ্টিসহ নানাভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সমন্বিত চেষ্টার মাধ্যমে নদীর পরিবেশ যে ফিরিয়ে আনা সম্ভব,Ñহালদা তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। দেশের অন্যসব নদীর প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে হালদা অনেক ভালো অবস্থানে আছে। মনুষ্য সৃষ্ট বিপর্যয় কমে এসেছে।

২০১৭-১৮ সালে নদীটির যে অবস্থা ছিল, এখন প্রায় তার বিপরীত চিত্র এখানে বিরাজ করছে। গত ১০-১৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পরিমাণ মাছের ডিম সংগ্রহ করা গেছে। ২০২২ সালের শুমারি অনুযায়ী এই নদীতে ডলফিন ছিল ১৪৭টি। ২০২০ সালে ছিল ১২৭টি। ডলফিনের মৃত্যু শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। ২০২৩-২৪ সালে একটি ডলফিনও মারা যায়নি।

দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র চট্টগ্রামের এই হালদা নদী। প্রকৃতির বিস্ময়কর সৃষ্টি ‘হালদা নদী’ বিশ্বের একমাত্র জোয়ার-ভাটার নদী, যেখান থেকে সরাসরি রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউশ মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করা হয়। এই হালদায় বসবাসকারী গাঙ্গেয় ডলফিন (প্লাটানিস্টা গাঙ্গেটিকা) বাংলাদেশের একটি বিপন্ন প্রজাতির স্বাদু পানির স্তন্যপায়ী প্রাণী। হালদা নদীকে ডলফিনের ‘অভয়াশ্রম’ বলা হয়ে থাকে। দেশের অভ্যন্তরে উৎপত্তি, বিস্তার এবং সমাপ্তি ঘটা এই নদীর গুরুত্ব অন্যসব নদী থেকে আলাদা।

প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে একসময় ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে বালু ও পাথর বহন করা হতো। ইঞ্জিনচালিত নৌকা-বাল্কহেডের চলাচল, ড্রেজার মেশিনে বালু উত্তোলন, চর থেকে মাটি কাটা, দূষণ, লবণাক্ততা, অবৈধভাবে মাছ শিকার করায় মাছের প্রজননসহ হালদার জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ে। কমতে থাকে মাছের ডিম। মরতে থাকে বিপন্ন প্রজাতির ডলফিন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বের বিভিন্ন নদীতে বিপন্ন প্রজাতির ডলফিন আছে মাত্র এক হাজার ১০০টি। এর মধ্যে শুধু হালদাতেই ছিল ১৭০টি। এর মধ্যে ২০১৭ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ৩৯টি ডলফিন মারা যায়। ২০২২ সালের শুমারিতে দেখা যায়, ১৪৭টি ডলফিন রয়েছে। ২০২২ সালের পর হালদায় আর কোনো ডলফিন মরেনি। এ ছাড়া মাছের ডিম দেওয়াও বেড়েছে। ২০২০ সালের পরে হালদায় গত বছর সবচেয়ে বেশি ডিম ছেড়েছে মা মাছ। ২০২০ সালে ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি, ২০২১ সালে ৮ হাজার ৫০০ কেজি, ২০২২ সালে ৬ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল। ২০২৩ সালে প্রায় ২০ হাজার কেজি ডিম আহরণ করা হয় হালদা থেকে।

হালদার এই পরিবর্তনের ব্যাপারে অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ২০১৯ সালে হাইকোর্ট ডলফিন রক্ষায় নির্দেশনা এবং কমিটি করে দিয়েছেন। এরপর ২০২০ সালে হালদা নদীকে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হিসেবে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। ২০২০ সালে এশিয়ান পেপার মিল এবং হাটহাজারী ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্লান্ট বন্ধ করা হয়। ফলে শিল্পবর্জ্য কমে গেছে। চট্টগ্রাম অনন্য আবাসিক এলাকার বর্জ্য এখন আর হালদায় পড়ছে না। হালদার মতো দেশের আর কোনো নদী এতটা দূষণমুক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে এখানে এখনো কিছু প্রাকৃতিক বিপর্যয় রয়েছে। গত বছর নদীতে পানির পরিমাণ কম ছিল। নদীতে তাপমাত্রা এবং পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে যায়। এসব বিষয় ডলফিন ও কার্প জাতীয় মাছের ডিম পাড়ার ওপর প্রভাব ফেলছে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন, হালদা দূষণের সব উৎস আমরা বন্ধ করে দিয়েছি। এরই মধ্যে হালদা নদী সংলগ্ন ১৭টি শিল্পকারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অবশিষ্ট যেসব শিল্পকারখানা রয়েছে, সেগুলোর বর্জ্য হালদায় পড়ে না। হালদা নদীর বালুমহাল ইজারা দেওয়া বন্ধ করা হয়েছে। নদী সংলগ্ন ৯টি ইটভাটা বন্ধ করে দিয়েছি। ইঞ্জিনচালিত নৌকা চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছি।

অর্থাৎÑহালদাকে রক্ষায় যা যা করার দরকার আমরা সব করছি। এ ছাড়া নদীর গুরুত্বপূর্ণ অংশ সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী বলেন, হালদায় এখন বড় কোনো দূষণ নেই। তবে ছোট ছোট যে দূষণ আছে, সেগুলো আমরা জেলা প্রশাসনকে অবহিত করেছি। তারা সেগুলো বন্ধে পদক্ষেপ নেয়। হালদার দূষণ একেবারে কমিয়ে আনতে স্থানীয়রাসহ সংশ্লিষ্ট সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

গোপালগঞ্জে পুলিশের গাড়িতে আ.লীগ কর্মীদের হামলা, সংঘর্ষে আহত ৮

পরীক্ষায় ফেল করায় শিক্ষকের বাড়িতে হামলা

ব্যাখ্যা দিলেন শফিকুল আলম

বিদেশে যেতে ইচ্ছুকদের বিষয়ে সতর্কতা জারি

ময়মনসিংহে ছাত্রদল-শিবিরের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার খবর

শিক্ষার্থীদের অবরোধ ঘিরে সতর্ক পুলিশ, প্রস্তুত জলকামান

‘পোষ্য’ কোটা বাতিলের দাবিতে জাবিতে আমরণ অনশন

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত জাপানের

জয় বাংলা বাজারে ‘শেখ হাসিনাতেই আস্থা’ লিফলেট দিতেই গণপিটুনি

লালমনিরহাটে ছাত্রলীগ নেতা জিহান গ্রেপ্তার

১০

যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘প্ল্যান বি’ বাস্তবায়নের পথে মেক্সিকো

১১

দিন ধার্য থাকলেও বিয়ে করা হলো না নিখোঁজ পিপাসের

১২

‘মুজিবের পরিবারকে আমরা বুঝতে ভুল করেছি’

১৩

সড়ক ছেড়েছেন তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা

১৪

ইসলামী আন্দোলন ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মতবিনিময় সভা

১৫

বইমেলায় আফরোজা খাতুনের বই ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’

১৬

শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন চায় বিএনপি : আমিনুল হক 

১৭

আ.লীগ নেতা কফিল গ্রেপ্তার

১৮

পিইউবিতে শীতকালীন পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত

১৯

মাটির নিচে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের শহর, ভয় ধরাচ্ছে পশ্চিমাদের

২০
X