চলতি বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীরা নতুন পাঠ্যবই হাতে পাওয়ার পর থেকেই বইয়ে থাকা বিভিন্ন বিষয় বিতর্কের জন্ম দেয়। সবচেয়ে বেশি বিতর্কের সৃষ্টি হয় ‘শরীফার গল্প’ নিয়ে। সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ‘মানুষে মানুষে সাদৃশ্য ও ভিন্নতা’ অধ্যায়ের এই গল্প নিয়ে আপত্তি ওঠার পর গল্পটি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনে পরিমার্জনের লক্ষ্যে কমিটি গঠন করে দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু কমিটি গঠনের দেড় মাস পার হলেও তারা কোনো প্রতিবেদন দিতে পারেনি। ফলে শিক্ষকরা পড়েছেন বেকায়দায়। তবে জানা গেছে, আজ বৃহস্পতিবার সকালে সেই কমিটি তৃতীয় সভায় মিলিত হবে। এ সভার আলোচনা থেকেই ‘শরীফার গল্প’ পরিমার্জন বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হতে পারে।
শরীফার গল্প আলোচনায় আসে গত
১৯ জানুয়ারি। ওইদিন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাব উৎস জাতীয় শিক্ষক ফোরামের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বই থেকে শরীফার গল্পের অংশটুকু ছিঁড়ে ফেলেন এবং অন্যদেরও ছেঁড়ার আহ্বান জানান। এ-সংক্রান্ত একটি ভিডিও মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ভাইরাল হয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে শুরু হয় তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। একপর্যায়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায় শিক্ষক আসিফ মাহতাবের সঙ্গে তাদের আর কোনো সম্পর্ক নেই। অন্যদিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে ‘শরীফার গল্প’ পর্যালোচনা করে প্রয়োজনে পরিমার্জনের লক্ষ্যে ২৪ জানুয়ারি বিশেষজ্ঞ কমিটি করে দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির আহ্বায়ক করা হয় ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুর রশীদকে। অন্য সদস্যরা হলেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গভর্নর মুফতি মাওলানা কফিল উদ্দীন সরকার, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আবদুল হালিম এবং ঢাকা সরকারি আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুর রশিদ।
জানতে চাইলে কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ কালবেলাকে বলেন, বৃহস্পতিবার (আজ) সভা হওয়ার আগে বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে পারছি না। কারণ, সবার মতামত নিয়েই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে আমরা কালক্ষেপণ করতে চাই না। দ্রুতই একটি রিপোর্ট তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে জমা দেব। এরপরের সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয়ের।
কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আবদুল হালিম কালবেলাকে বলেন, এর আগে দুবার আমরা সভায় মিলিত হয়েছিলাম। একবার অনলাইনে, আরেকবার সরাসরি। কিন্তু কমিটির সবাই ব্যস্ত থাকায় এখন পর্যন্ত কোনো সুপারিশ করা যায়নি। বৃহস্পতিবার আরেকটি সভা হওয়ার কথা রয়েছে। এ সভায় প্রতিবেদন তৈরির বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।
অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে এনসিটিবিতে কমিটির সদস্যরা তৃতীয়বারের মতো সভায় মিলিত হবেন। সভায় ধর্মীয় গ্রন্থসহ বিভিন্ন রেফারেন্স আনা হবে। চেষ্টা করা হবে, এই সভাতেই কমিটির কাজ শেষ করার। তবে কোনো বিষয়ে সন্দেহ থাকলে আরও সভার প্রয়োজন হতে পারে।
শরীফার গল্পে বড় কোনো পরিবর্তন আসবে কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, বড় কোনো পরিমার্জন আসবে বলে মনে হয় না। কারণ, কমিটি বড় কোনো সুপারিশ করলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। সেখান থেকে কী সিদ্ধান্ত আসে তার ওপর ভিত্তি করে মাঠপর্যায়ে সুপারিশ বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে। তবে সভা থেকেই মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ যাবে কি না, তা আগ থেকে বলা যাচ্ছে না।
এদিকে শিক্ষকরা বলছেন, সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ১০টি অধ্যায়ের মধ্যে তৃতীয় অধ্যায়ে রয়েছে শরীফার গল্প। চলতি শিক্ষাবর্ষের আড়াই মাস ক্লাস শেষ। কিন্তু এই অধ্যায় পড়াবেন, নাকি তা বাদ দিয়ে পরের অধ্যায়ে চলে যাবেন, নাকি দুই অধ্যায় পড়িয়ে সংশোধনীর জন্য অপেক্ষায় থাকবেন, তা নিয়ে শিক্ষকরা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন।
জানতে চাইলে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম বলেন, কমিটির আরও একটি সভা করা লাগবে বলে তারা জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সেই সভা হবে। এরপর তারা সুপারিশ দিলে আমরা সেগুলো মাঠপর্যায়ে পাঠিয়ে দেব।