রাজন ভট্টাচার্য
প্রকাশ : ০৯ মার্চ ২০২৪, ০৩:৩৬ এএম
আপডেট : ০৯ মার্চ ২০২৪, ০৮:৫০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

কাউন্সিলের আগেই রওশন অংশে নানা টানাপোড়েন

দশম জাতীয় সম্মেলন আজ
কাউন্সিলের আগেই রওশন অংশে নানা টানাপোড়েন

অভ্যন্তরীণ নানা টানাপোড়েনের মধ্যে জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে বহিষ্কৃত নেতাদের নিয়ে আজ শনিবার কাউন্সিল করতে যাচ্ছেন রওশন এরশাদ। শেষ মুহূর্তে নিজের অনুসারী অনেকেই দশম জাতীয় সম্মেলনে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কেউ কেউ সম্মেলন পিছিয়ে দেওয়ার পক্ষে অবস্থান জানিয়েছেন। আবার নেতৃত্ব ঠিক করা নিয়েও নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে।

১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি জাতীয় পার্টির যাত্রা শুরু হয়। এরপর নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে অন্তত ছয় ভাগে বিভক্ত হয়েছে দলটি। তারপর থেকে এরশাদ-রওশন ও জি এম কাদের বলয়কেই জাপার মূল ধারা হিসেবে বিবেচনা করা হতো। সাবেক রাষ্ট্রপতি ও সেনা শাসক এরশাদের মৃত্যুর পর থেকেই নেতৃত্ব নিয়ে রওশন, কাদের অর্থাৎ দেবর-ভাবির মধ্যে দ্বন্দ্ব বাড়তে থাকে।

গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে কোন্দলের মাত্রা চরমে ওঠে। নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থীরা সরাসরি পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর বিরুদ্ধে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে সভা ডেকে ফল বিপর্যয়ের জন্য দোষারোপ করেন। তাদের পদত্যাগও চান পরাজিত প্রার্থীদের অনেকেই। এ ঘটনা কেন্দ্র করে দলে থাকা দীর্ঘদিনের মিত্রদের একে একে বহিষ্কার করেন জি এম কাদের। এর মধ্যে গত ২৮ জানুয়ারি জি এম কাদের ও মুজিবুল হক চুন্নুকে চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে জাপার স্বঘোষিত চেয়ারম্যান হন রওশন এরশাদ।

মূলত রওশন অংশে তিনি ছাড়া বাকি শীর্ষ নেতাদের সবাই দল থেকে বহিষ্কৃত। বহিষ্কৃত নেতাদের হাতে নিয়েই নতুন করে দল গঠন করতে যাচ্ছেন সাবেক এই বিরোধী দলের নেতা। যদিও দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে রওশনকে এখনো বহিষ্কার করেননি জি এম কাদের।

আজ দলটির একাংশের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠার পর থেকে জাপায় সবচেয়ে বড় ভাঙন হতে যাচ্ছে। যদিও ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে রংপুরসহ ১৭টি জেলা সম্মেলনে যোগ দিচ্ছে না। অন্য জেলার নেতাকর্মীরাও কমবেশি এখন দুই ভাগে বিভক্ত। তবে কেন্দ্রের বিরোধের কমবেশি প্রভাব পড়েছে সবখানেই।

বিভক্তি প্রসঙ্গে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের এক সময়ের ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহচর ও রওশনের সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব কাজী ফিরোজ রশীদ কালবেলাকে বলেন, দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে অনেক চেষ্টা করেছি। শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। জাপা ভাঙছে। এজন্য কে দায়ী, তা হয়তো সময় মূল্যায়ন করবে।

সম্মেলনে নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ ঠেকাতে জি এম কাদেরের পক্ষে দল থেকে বহিষ্কারের হুমকি দেওয়া হচ্ছে—এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, বেশিরভাগ জেলা নেতারা আমাদের সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন। তাদের নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বাড়ি বাড়ি লোক পাঠানো হচ্ছে। দলের পক্ষ থেকে অনেকেই সরাসরি নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন। সম্মেলনে না আসতে নানা প্রলোভন দেখাচ্ছেন। দীর্ঘদিন পরে হলেও জি এম কাদেরের কাছে নেতাকর্মীদের কদর বেড়েছে। এটা ভালো দিক। রাজনীতিতে এসব খেলা হবে, এটাই স্বাভাবিক উল্লেখ করে সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, সম্মেলনের প্রস্তুতি সম্পন্ন। আমরা সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি।

রওশন অনুসারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নানা কারণে সৃষ্ট মতবিরোধে অনেকেই সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন না। তাদের মধ্যে রয়েছেন জাপার সাবেক মহাসচিব ও এরশাদের ভাগ্নে মসিউর রহমান রাঙ্গা, রওশন এরশাদের সাবেক রাজনৈতিক সচিব ও সাবেক রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ, সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান, এসএম আলমসহ বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা।

সূত্রগুলো বলছে, কাজী মামুনুর রশীদকে মহাসচিব করা নিয়ে রওশন অংশে বড় রকমের মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নেতারা তার নেতৃত্বে দল পরিচালনার সম্মতি দিচ্ছেন না। কেউ কেউ এ কারণে বেঁকে বসেছেন। কিন্তু মহাসচিব হিসেবে রওশনের পছন্দের তালিকায় প্রথম কাজী মামুন। দলে মহাসচিব পদে অন্যতম প্রার্থী সাবেক এমপি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। গতকাল শুক্রবার রাতে কাজী ফিরোজ রশীদের নামও এ পদের জন্য শোনা গেছে।

এমন বাস্তবতায় আজ সকাল ১০টায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাপার কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। গতকাল বিকেলে সম্মেলনস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, আয়োজন প্রায় সম্পন্ন। মিলনায়তনের বাইরে রওশন এরশাদের ছবিসহ টানানো হয়েছে বিশাল ব্যানার। ভেতরে চলছে সাজসজ্জার কাজ। নেতাকর্মীদের জন্য বাইরে চেয়ারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নজরজুড়ে সাঁটানো হয়েছে সম্মেলনের পোস্টার।

সাজসজ্জার দায়িত্বে থাকা নেতারা জানিয়েছেন, প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার নেতাকর্মীরা রাজধানীতে আসতে শুরু করেছেন। তবে কেন্দ্রীয় নেতাদের অভিযোগ, কাউন্সিলে না আসতে নেতাকর্মীদের নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। যদিও নেতাকর্মী ঠেকানোর কথা রীতিমতো অস্বীকার করেছেন পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি কালবেলাকে বলেছেন, জি এম কাদেরের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি হলো মূল ধারা। যারা দল করে না বা দল থেকে বহিষ্কৃত তারা শনিবারের সম্মেলনে যোগ দেবে। কাউন্সিলে যাওয়ার স্বাধীনতা তো সবার আছে।

অন্যদিকে রওশপন্থি বেশ কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, সম্মেলনে কাদের অংশের ১০ জনের বেশি প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ কেন্দ্রীয় ৩০ জনের বেশি কেন্দ্রীয় নেতা আনুষ্ঠানিকভাবে যোগাদান করার কথা রয়েছে। এ ছাড়া মাঠপর্যায়ে গত নির্বাচনে পরাজিত শতাধিক প্রার্থী আসছেন রওশনের ছাতার নিচে। সেইসঙ্গে ব্যাপক লোকসমাগমের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে আজকের সম্মেলনে।

কাদের অংশের নেতারা বলছেন, মূলত সম্মেলনে রাজধানী থেকে কিছু ভাড়া করা লোক নিয়ে লোকসমাগমের চেষ্টা চলছে। সারা দেশের পরীক্ষিত জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের কেউ সম্মেলনে আসছেন না। দলের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বৃহত্তর রংপুর থেকে হাতেগোনা কয়েকজন সম্মেলনে যোগ দিতে পারেন বলে জানা গেছে। তবে রংপুর থেকে কেউ আসছেন না।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর

ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ নয়, সংস্কার চাই: শিবির সভাপতি

চোটে পড়লেন হৃদয়ও

যবিপ্রবির রিজেন্ট বোর্ড সদস্য হলেন যারা

ছুটি না দিয়ে গালাগাল, নারী শ্রমিকের আত্মহত্যা

পেনাল্টি মিসে রিয়ালকে হতাশ করেছেন এমবাপ্পে

কিক-অফের অপেক্ষায় বদলে যাওয়া লিগ

কক্সবাজারে এফবিসিসিআইর দুর্যোগ প্রস্তুতি ও আপদ ব্যবস্থাপনা প্রশিক্ষণ

ই-সিগারেট নিষিদ্ধসহ তামাক আইন সংশোধনী দ্রুত পাসের দাবি

৪২ রানে অলআউট শ্রীলঙ্কা

১০

পর্যটক নেই, সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশে ছেড়ে যায়নি জাহাজ

১১

ডেঙ্গু আক্রান্ত সাংবাদিক আরিফ শাওনের খোঁজ নিলেন তারেক রহমান

১২

ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে অস্ত্র নিয়ে মহড়া যুবলীগ নেতার

১৩

দেশের বাহির থেকে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে : প্রিন্স

১৪

পতিত আ.লীগ এখন রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করতে চায় : লায়ন ফারুক

১৫

ছাত্রসংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ছাত্রশিবিরের মতবিনিময় সভা

১৬

বিইউবিটিতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের স্মরণসভা

১৭

‘বিএনপি ক্ষমতায় এলে প্রতি ইউনিয়নে কমিউনিটি ক্লিনিক হবে’

১৮

উৎপাদনে ফিরছে মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র

১৯

যুদ্ধবিরতির পরদিনই লেবাননে ইসরায়েলের হামলা

২০
X