রীতা ভৌমিক
প্রকাশ : ১১ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১১ জুলাই ২০২৩, ০৯:২৩ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

অনিয়ন্ত্রিত গর্ভধারণে ঝুঁকি বেড়েছে

জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

করোনাকালে সরবরাহ সংকটের পর বাজারে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে কনডমের মূল্যবৃদ্ধি সরকারি সেবার বাইরে থাকা পরিবারে নারীর ওপর তৈরি করেছে নতুন চাপ। কোনো কোনো পরিবারে স্বামীর পরিবর্তে স্ত্রী পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারে বাধ্য হচ্ছেন। আবার কেউ কেউ আপাতত পদ্ধতি ব্যবহারই বন্ধ রাখছেন। এতে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের ঝুঁকি বেড়েছে।

জন্মনিয়ন্ত্রণে মুখে খাওয়ার বড়ি খেলে শারীরিক জটিলতা দেখা দেয় শিলার (ছদ্মনাম)। এ কারণে এত দিন তার স্বামী কনডম ব্যবহার করতেন। হঠাৎ কনডমের দাম অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় বাড়তি খরচ যোগ হয়। নিয়মিত এই পদ্ধতি ব্যবহারের ব্যয় বহন করা তাদের সামর্থ্যের বাইরে চলে যায়।

শিলা জানান, ‘শারীরিক সমস্যার কারণে পিল খেতে পারি না। আবার কনডম ব্যবহার করতে গেলে মাসে কয়েকশ টাকা খরচ হয়ে যায়। ফলে খরচ বাঁচাতে এখন কোনো পদ্ধতিই ব্যবহার করছি না।’

জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপি) প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট (এসআরএইচ) ড. আবু সাইদ মো. হাসান কালবেলাকে বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালগুলোয় বিনামূল্যে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়। যারা সরকারি হাসপাতালে যাচ্ছেন তারা এই সেবা পাচ্ছেন। কিন্তু জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ব্যবহারকারীর ৫০ শতাংশ সোশ্যাল কমিউনিটি কিংবা ফার্মেসি থেকে কনডম কিংবা পিল কিনে ব্যবহার করেন। এ ক্ষেত্রে কনডমের দাম বাড়ায় স্বাভাবিকভাবে ক্রয় ক্ষমতার বাইরে যাবে।’

সংশ্লিষ্টদের মতে, বিশ্ব অর্থনীতির মন্দার প্রভাবে দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যসহ সব রকম জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। নিম্নবিত্ত কিংবা মধ্যবিত্ত, সবার ওপরই জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির চাপ পড়েছে। অনেক পরিবারের জন্য খাবার কেনাই কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। সেখানে বেশি দাম দিয়ে কনডম কিনে ব্যবহার করা কঠিন। এ অবস্থায় সরকার দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ ও অনিরাপদ গর্ভপাত বেড়ে যেতে পারে। সেইসঙ্গে মাতৃমৃত্যুর হারও বাড়তে পারে।

পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমে সফলতার জন্য বাংলাদেশ সারা বিশ্বে প্রশংসিত হলেও বিভিন্ন পদ্ধতিতে ড্রপ আউটের হার এখনো ৪২ দশমিক ২ শতাংশ। আর চাহিদা থাকা সত্ত্বেও পরিবার পরিকল্পনা সেবা পান না ১০ শতাংশ দম্পতি।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত পাঁচ বছরে সাত ধরনের সেবা নেওয়ার হার কমেছে প্রায় ২৪ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সুখী ব্র্যান্ডের খাওয়ার বড়ি বিতরণ করা হয় ৭ কোটি ৯১ লাখ ২৩ হাজার ২৬৭টি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা ৫ কোটি ৫৮ লাখ ৭২ হাজার ৯১৮-এ নেমে এসেছে। একই সময়ে নিরাপদ কনডম বিতরণ ১০ কোটি ৭৮ লাখ ৩২ হাজার ৪৯৩টিতে থেকে নেমেছে ৯ কোটি ২৯ লাখ ৮৭ হাজার ৭১৫টিতে। ইনজেক্টবল ভায়াল ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিতরণ হয় ১ কোটি ১০ লাখ ৭২ হাজার ১৩৪। গত অর্থবছরে এই পদ্ধতির ব্যবহার ছিল ৮৭ লাখ ২১ হাজার ২১৬। ইমপ্ল্যান্ট ২৩ লাখ ২ হাজার ১৬৪ থেকে নেমেছে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৩২৩টিতে। অন্যান্য পদ্ধতির ক্ষেত্রেও একই চিত্র।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু কালবেলাকে বলেন, ‘করোনাকালে ইমপ্ল্যান্টের ব্যবহার অনেক কমলেও এখন আবার বাড়ছে। স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদি সব সেবার ক্ষেত্রেই এমনটা দেখা যাচ্ছে।

তিনি আরও বলে, ‘কনডমের মূল্যবৃদ্ধির যৌক্তিকীকরণের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের চিন্তার অবকাশ রয়েছে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আমরা ব্যাপকভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণে প্রচার করব। আমাদের স্টেকহোল্ডার ও সহযোগীদেরও অনুরোধ জানাব তাদের অবহিত করার জন্য।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ড. এ কে এম নুরুন্নবীর মতে, ‘চাহিদা মতো পছন্দসই জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী না পাওয়া, অনেকে আবার শৈথিল্য করে বা সময় না পাওয়ায় হাসপাতালে জন্মনিয়ন্ত্রণ সেবা নিতে যান না। যারা বাইরে থেকে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী কেনেন তাদের ক্রয়ক্ষমতা রয়েছে বলেই কিনে ব্যবহার করেন। ফলে এসব সামগ্রীর দাম বাড়লে জন্মনিয়ন্ত্রণে প্রভাব পড়বে—এমনটা বলা যাচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘সরকারি সেবার প্রচার বাড়িয়ে পদ্ধতি ব্যবহারকারীদের সরকারি হাসপাতাল বা কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়ে আসার চেষ্টা করতে হবে। যারা চাহিদামতো জন্মনিয়ন্ত্রণ সেবা না পাওয়া কিংবা সময়ের অভাবে হাসপাতালমুখী হচ্ছেন না, তাদের হাসপাতালের সেবা নিতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। আগে পরিবার পরিকল্পনা কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেবা প্রদান চালু ছিল। এখন অনেক কম। বাড়ি গিয়ে সেবা বাড়াতে হলে কর্মীদের কাজের চাপ কমানো ও জনবল বাড়াতে হবে। এভাবে সরকারি সেবা বাড়াতে পারলে বেসরকারি পর্যায়ে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর দাম বাড়বে না।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইসরায়েলকে প্রতিশোধের রাস্তা দেখিয়ে দিলেন ট্রাম্প

মসজিদ টার্গেট করে চালানো হচ্ছে বিমান হামলা

আর এক জয় দূরে মেসির মায়ামি!

নির্যাতনের তথ্য চেয়ে আ.লীগের বিশেষ বার্তা

পূজায় বুড়িমারীতে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকবে ৬ দিন

প্রতি সপ্তাহে সহায়তা দেবে জুলাই ফাউন্ডেশন : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব

আন্দোলনে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি, সেই যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করছে যমুনা গ্রুপ

জনবল নেবে স্যামসাং বয়সসীমা  ২১ থেকে ২৮ বছর 

বায়ুদূষণে শীর্ষে হ্যানয়, ঢাকার খবর কী

১০

সুস্থ থাকতে ভাত নাকি রুটি, কী বলছেন চিকিৎসক

১১

লিটনের শরীরে ৫ শতাধিক বুলেট

১২

সপ্তম রাউন্ডে জমে উঠেছে প্রিমিয়ার লিগের লড়াই

১৩

পাচারের টাকায় আমিরাতে মিনি সিটি নিয়ে আসিফের স্ট্যাটাস

১৪

শেরপুরে ভয়াবহ বন্যায় ৭ জনের মৃত্যু

১৫

তিন বিভাগে ভারি বৃষ্টির পূর্বাভাস গবেষকের

১৬

সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার আক্ষেপ জ্যোতির

১৭

১৩ জেলায় দুপুরের মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের শঙ্কা

১৮

ভারতীয় দলে আচমকা পরিবর্তন

১৯

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ২৮ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

২০
X