আমদানি হওয়া কার্পেটের একটি চালান নিয়ে তুঘলকি কাণ্ড ঘটিয়েছে কাস্টম হাউস আইসিডি, কমলাপুর। শুল্কায়ন জটিলতার কারণে চালানটি আটকে দিয়েছিল কাস্টমস। এর বিরুদ্ধে পর্যায়ক্রমে সর্বোচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হন আমদানিকারক। রায়ও আসে তার পক্ষেই। এর পরই জানা যায়, বিচার শেষ হওয়ার আগেই পণ্যগুলো নিলামে বিক্রি করে দিয়েছে কাস্টম কর্তৃপক্ষ। এমনকি আমদানিকারক কিংবা তার সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টকেও বিষয়টি জানানো হয়নি। পণ্যের নথিতে মামলার কাগজপত্র না থাকায় এমন কাণ্ড ঘটেছে বলে দাবি কাস্টমসের।
সূত্র জানায়, বাণিজ্যিক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মিঠু কার্পেট দীর্ঘদিন ধরে বিদেশ থেকে কার্পেট আমদানি করে দেশে বাজারে সরবরাহ করে থাকে। প্রতিষ্ঠানটি কাস্টম হাউস আইসিডি, কমলাপুর দিয়ে ৫ হাজার ৭০০ বর্গমিটার আর্টিফিশিয়াল গ্রাস কার্পেট আমদানি করে, যার বিল অব এন্ট্রি নম্বর সি-১৮২৯৪। এই পণ্য চালানে বর্গমিটার ঘোষণা দিলে কেজি হিসেবে শুল্কায়নের জন্য আলাদা এইচএস কোড নির্ধারণের আদেশ দেন কাস্টমসের কমিশনার। এতে পণ্যটির শুল্কায়ন মূল্য বেড়ে যায়। কমিশনারের এই সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট না হওয়ায় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান কাস্টমসের আপিলাত ট্রাইব্যুনালে আপিল করেন। পরবর্তী সময়ে ন্যায্যতার জন্য দেশের সর্বোচ্চ আদালত হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় মিঠু কার্পেট। সম্প্রতি উচ্চ আদালত শুল্ক-কর পরিশোধ সাপেক্ষে পণ্য চালান খালাসের জন্য কাস্টম হাউস আইসিডির কমিশনারকে নির্দেশ দেন। কিন্তু এই রায়ের পর জানা যায়, কার্পেটের সেই চালানটি কাস্টম হাউসে নেই। উচ্চ আদালতে বিচারাধীন থাকা এই পণ্য চালানটি নিলামে বিক্রি করে দিয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাস্টম হাউস আইসিডির অতিরিক্ত কমিশনার (নিলামের দায়িত্বপ্রাপ্ত) প্রমীলা সরকার কালবেলাকে বলেন, ‘পণ্য চালানটি খোঁজ নিয়ে দেখেছি আমরা। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের নথিতে মামলার কোনো কপি ছিল না, যার কারণে আমরা জানতে পারিনি আসলে বিষয়টি বিচারাধীন। আর নিলামের আগে শিপিং এজেন্টকে আমরা চিঠি দিয়েছি। সব প্রক্রিয়া মেনে কাস্টম হাউস নিলাম প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।’
সংশ্লিষ্ট নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, গত অক্টোবরও কাস্টম হাউস আইসিডি কমলাপুরের কমিশনার বরাবর বিষয়টি নিয়ে আদালতের রায়ের আলোকে শুল্কায়নের আবেদন করেছিলেন আমদানিকারক। বেআইনি শুল্কায়নের বিপরীতে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনাল আমদানিকারকের আপিল খারিজ করে দেন। পরবর্তী সময়ে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান হাইকোর্টে রিট করেন, যার নং-১৮০/২০২১। এ ছাড়া এনবিআর থেকে অগ্রিম রুলিংয়ের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তির নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে হাইকোর্টের রায় ও মূল আদেশে অর্থদণ্ড এবং জরিমানা বাতিল করে অগ্রিম রুলিংয়ের মাধ্যমে পুনঃপরীক্ষা করে যথাযথ এইচএস কোডও মূল্য ঘোষণার মাধ্যমে নিষ্পত্তির আদেশ দেন। একই সঙ্গে কাস্টম হাউস আইসিডির কমিশনারকে ৩০ দিনের মধ্যে বিষয়টি নিষ্পত্তিরও আদেশ দেন আদালত। আদালতের রায়ের আগেই কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ শুধু শিপিং এজেন্টকে অবহিত করে পণ্য চালানটি নিলামে বিক্রি করে দেয়।
যদিও শুল্ক কর্মকর্তারা বলছেন, কোনো পণ্য নিলামে বিক্রি করতে হলে নানা ধরনের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেওয়া থেকে শুরু করে সিঅ্যান্ডএফ এবং শিপিং এজেন্টকে জানাতে হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে শুধু শিপিং এজেন্টকে জানানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে মিঠু কার্পেটের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট আমিনুল ইসলাম শিপন কালবেলাকে বলেন, ‘মামলা নিস্পত্তি হওয়ার আগে কীভাবে নিলাম হয়— আমার মাথায় আসে না! সিঅ্যান্ডএফ হিসেবে আমাকেও জানানো হয়নি। আমার আগে আমদানিকারক জানার কথা। কিন্তু তাকেও কিছুই জানায়নি কাস্টম কর্তৃপক্ষ।