সাধারণ আবেদনকারীদের কাছ থেকে বেশি টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) সংশোধনের কাজ করত একটি চক্র। তারা টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে প্রকৃত বয়স কমানো, নাম সংশোধন থেকে শুরু করে এনআইডির যাবতীয় তথ্য সংশোধন করে দিত।
সাইবার মনিটরিংয়ে বিষয়টি সিআইডির নজরে এলে অভিযান চালিয়ে নির্বাচন কমিশন অফিসের আনসার
মো. মোস্তাফিজুর রহমানসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের মধ্যে তিনজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। জবানবন্দিতে উঠে এসেছে, জাতীয় পরিচয়পত্রের বয়স প্রতি এক বছর কমানো বা বাড়ানোর জন্য
আবেদনকারীভেদে ১৫-২০ হাজার টাকা করে নেওয়া হতো। পরবর্তী সময়ে সে টাকার কয়েকটি ভাগ হতো। যার একটি অংশ যেত নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পকেটে।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক মো. লালবুর রহমান কালবেলাকে বলেন, গ্রেপ্তার সাতজনের মধ্যে তিনজন ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
জালিয়াতিতে নির্বাচন কমিশনের কেউ জড়িত আছে কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, এনআইডি জাতীয় বিষয়। প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনা আছে, এর সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। তদন্তে নাম এলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
মামলার তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, আবেদনকারীরা তাদের প্রকৃত বয়স কমিয়ে অবৈধভাবে জন্মনিবন্ধন সনদ এবং জাতীয় পরিচয়পত্র পরিবর্তনের জন্য আসামিদের সঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করত। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা নির্বাচন অফিসের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রত্যক্ষ সহায়তায় আবেদনকারীদের কাছ থেকে বিভিন্ন পরিমাণে টাকা গ্রহণ করত। আসামিরা মূলত দুটি ধাপে কাজ করত। প্রথমে টার্গেট আবেদনকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। পরবর্তী সময়ে তাদের সঙ্গে আর্থিক চুক্তি করে। দ্বিতীয় ধাপে নিজেরা অনলাইনে আবেদন করে। এরপর নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহায়তায় অবৈধ কমিশন দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করে থাকে। এজন্য জাল ও ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে আবেদনের কপি অফিসের ওই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে জমা দেয়।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে পশ্চিম আগারগাঁও বিএনপি বাজারের বটতলা মোড়ে অবস্থিত একটি কম্পিউটার দোকান থেকে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় পল্টন মডেল থানায় জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইনে ২৩ আসামির নাম উল্লেখ করে মামলা করেন সিআইডির উপপরিদর্শক মো. আতিকুর রহমান। এ ছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১০-১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার পর গতকাল শুক্রবার গ্রেপ্তার সাত আসামিকে আদালতে হাজির করে সিআইডি। এরপর তিন আসামির জবানবন্দি রেকর্ড ও অন্য চার আসামিকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করা হয়। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেরা মাহাবুবের আদালত তিনজনের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এ ছাড়া অন্য চার আসামির জামিন নামঞ্জুর করেন আদালত। গ্রেপ্তার আসামিরা হলো মো. তাজুল ইসলাম, মো. মোস্তাফিজুর রহমান, মো. হাসান, জাকির আহম্মেদ, মো. শাকিল হোসেন, মো. আহাদ ও মো. মানিক। এর মধ্যে তাজুল, মোস্তাফিজুর ও হাসান স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এজাহারনামীয় পলাতক অন্য আসামিরা হলো মো. আজাদ, মো. উজ্জ্বল হোসেন, আলাউদ্দিন, মো. সামিনুল ইসলাম, আল আমিন, মো. বাবুল হোসেন, আব্দুল বারী, বজলুর রহমান খান, শওকত হোসেন, জাফর ইকবাল, মামুন, জালাল, আমির সোহেল, জাহাঙ্গীর কবীর, জমিউল ইসলাম ও মাসুদ আলম।
মন্তব্য করুন