গ্যাস সংকটে এবার বন্ধ হয়ে গেছে দেশের সর্ববৃহৎ সার কারখানা যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (জেএফসিএল)। গত সোমবার কারখানাটির অ্যামোনিয়া প্লান্ট এবং গতকাল মঙ্গলবার ইউরিয়া প্লান্টের উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। কবে নাগাদ কারখানাটি আবার চালু হবে, তা নির্দিষ্ট করে কেউই বলতে পারছেন না।
জানা গেছে, নরসিংদীর ঘোড়াশাল-পলাশ সার কারখানা (জিপি) চালু হলে যমুনা স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেবে সরকার। যদিও উত্তরাঞ্চলের কৃষকরা এ কারখানার ওপরই নির্ভরশীল। জামালপুরের তারাকান্দিতে ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত যমুনা সার কারখানার বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ৫ লাখ মেট্রিক টন। এটি বন্ধ হলে দেশের অন্য কারখানা থেকে উত্তরাঞ্চলের সার সরবরাহে খরচ বেড়ে যাবে। এ ছাড়া এটি বন্ধ করলে প্রতি মাসে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও কারখানা রক্ষণাবেক্ষণে ১২ থেকে ১৩ কোটি টাকা গচ্চা দিতে হবে।
এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার কালবেলাকে বলেন, বর্তমানে সার উৎপাদনে (কাফকোসহ) দৈনিক ১৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস বরাদ্দ রয়েছে। যমুনা ও শাহজালাল সার কারখানায় দৈনিক ৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন হয়। কিন্তু এরচেয়ে কম গ্যাস দিয়ে নতুন সার কারখানায় ২০ শতাংশ সার বেশি উৎপাদন সম্ভব। এ কারণে দুটি সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে গ্যাসের সংস্থান হলে কারখানা দুটি আবারও উৎপাদনে যাবে।
কর্মকর্তারা জানান, গ্যাস সংকটের কারণে গত বছরের নভেম্বর থেকে চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল) এবং চলতি বছরের এপ্রিল থেকে আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার অ্যান্ড কেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেড (এএফসিসিএল) বন্ধ রয়েছে। এ তালিকায় এবার যোগ হলো জেএফসিএল। দেশের সার কারখানাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম খরচে উৎপাদন করত যমুনা। এই কারখানায় প্রতি কেজি সার উৎপাদনে ব্যয় হয় ২২ টাকা ৮৪ পয়সা, যেখানে বর্তমানে প্রতি কেজি সার আমদানিতে খরচ হয় ৭০ টাকার বেশি। যমুনা বন্ধের ফলে সার আমদানিও বাড়াতে হবে বিসিআইসিকে; কিন্তু ডলার সংকটের কারণে তাও সম্ভব হচ্ছে না।
যমুনা সার কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহীদুল্লাহ খান কালবেলাকে বলেন, গ্যাস সংকটের কারণেই কারখানা বন্ধ হয়েছে। নভেম্বর-ডিসেম্বরের দিকে কারখানা চালুর বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ নেব। দীর্ঘদিন কারখানা বন্ধ থাকলে তা পুনরায় চালু করতে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যায়। অনেক যন্ত্রপাতির কার্যকারিতা থাকে না। এগুলো নতুন করে কার্যকর করতে বাড়তি অর্থের প্রয়োজন হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বিশ্বব্যাপী ডলার সংকটের এই সময়ে বিদেশ থেকে সার আমদানি কঠিন হয়ে পড়েছে। তা ছাড়া আমদানি করা সারের দাম দেশে উৎপাদিত সারের চেয়ে সাড়ে তিনগুণ বেশি। এ অবস্থায় গ্যাসের সংকট দেখিয়ে একের পর এক সার কারখানা বন্ধের ফলে দেশের কৃষি খাত সংকটের মুখে পড়বে।
বর্তমানে দেশে বিসিআইসির চারটি সহ দেশে মোট পাঁচটি ইউরিয়া উৎপাদনকারী কারখানা রয়েছে।
বিসিআইসির চারটি কারখানা নিরাপদে চালু রাখার জন্য দৈনিক ২৫০ এমএমসিএফ গ্যাস দরকার। কিন্তু পেট্রোবাংলা বছরখানেক ধরে কারখানাগুলোর জন্য দিচ্ছে মাত্র ১৩০ এমএমসিএফ। এই গ্যাস দিয়ে বিসিআইসির দুটি কারখানাÑ যমুনা ও শাহজালাল এবং বিদেশি মালিকানাধীন কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো) চলছিল। বিপত্তি বাধে নরসিংদীতে ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা নির্মাণ নিয়ে। বিদেশি ঋণ নিয়ে তৈরি আধুনিক এ কারখানাটির বিভিন্ন অংশের ট্রায়াল রান এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। কারখানাটিতে দৈনিক ৭০ এমএমসিএফ গ্যাস প্রয়োজন। কিন্তু পেট্রোবাংলা গ্যাসের সরবরাহ ১৩০ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি দিতে পারবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। এ কারণে ঘোড়াশাল-পলাশ চালু করে যমুনা বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। যদিও ঘোড়াশাল-পলাশ বাণিজ্যিকভাবে সার উৎপাদন করতে আরও বেশ কয়েক মাস লাগবে।
মন্তব্য করুন