রংপুর ব্যুরো
প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০২৩, ০২:৫০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

পানি বাড়ছে রংপুরের ছয় নদীতে, ফের বন্যার শঙ্কা

পানি বাড়ছে রংপুরের ছয় নদীতে, ফের বন্যার শঙ্কা

গজলডোবা ব্যারাজের সব গেট খুলে দেওয়ায় তিস্তায় পানি বাড়ছে হুহু করে। পানি বাড়তে শুরু করেছে তিস্তা, ধরলা, ঘাঘট, কুশিয়ারা ও করতোয়া নদীতে। ইতোমধ্যে এসব নদীতীরবর্তী অঞ্চলের লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। চরাঞ্চলের ফসলের মাঠে পানি উঠে গেছে। তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় হুমকির মুখে কুড়িগ্রামের রাজারহাটের বুড়ির হাটের স্পার বাঁধ। প্রবল স্রোতে বাঁধটি সামনের দিকে কিছুটা হেলে পড়েছে। বাঁধটি রক্ষা করা না গেলে বেশ কয়েকটি গ্রাম তিস্তায় বিলীন হয়ে যাবে বলে দাবি স্থানীয়দের। কালবেলা প্রতিবেদক, ব্যুরো অফিস ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর—

এদিকে বৃষ্টিপাত ও নদনদীর অবস্থা-সংক্রান্ত বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের গতকাল শনিবারের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে। আবহাওয়া সংস্থাগুলোর তথ্যানুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে ওই সময়ে ওই অঞ্চলের সুরমা, কুশিয়ারা, সোমেশ্বরী, যাদুকাটা, ভুগাই-কংশ, সারিগোয়াইন নদীর পানি সমতল সময় বিশেষে বৃদ্ধি পেতে পারে। তিস্তা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টায় স্থিতিশীল থাকতে পারে। লালমনিরহাট, নীলফামারী ও রংপুর জেলার তিস্তা অববাহিকা সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে।

গজলডোবা ব্যারাজের সব গেট খোলা: গজলডোবা ব্যারাজের সব গেট (৪৪টি) পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই খুলে দেওয়ায় শুক্রবার থেকে প্রবল বেগে পানি প্রবেশ করতে শুরু করে। তিস্তার পানি আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। সে কারণে দুর্গম চরাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম এ তথ্য জানান।

এরই মধ্যে নদী-তীরবর্তী অঞ্চলের লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, গতকাল তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। আর কাউনিয়া পয়েন্টে ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সূত্র জানিয়েছে, গত শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২ লাখ ১ হাজার ৬৪৭ কিউসেক এবং সর্বনিম্ন ১ লাখ ৬৯ হাজার ৮৪৮ কিউসেক পানি বাংলাদেশের দিকে ছেড়েছে ভারত।

সরেজমিন দেখা গেছে, রংপুরের কাউনিয়া, গঙ্গাচড়া ও পীরগাছা উপজেলার ৪০টি চরাঞ্চলের গ্রামে পানি প্রবেশ করায় প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বাড়িঘর ৩ থেকে ৪ ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। সেই সঙ্গে ধান, পাটসহ শস্য ক্ষেতগুলো তলিয়ে আছে পানিতে। মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে উঁচুস্থান ও পাউবো বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় শিশু, বৃদ্ধ ও গবাদি পশুপাখি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এলাকাবাসী। নদী-তীরবর্তী এলাকাগুলোতে তীব্র ভাঙনও দেখা দিয়েছে।

লক্ষ্মীটারি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল্লাহেল হাদী বলেন, ভারতের উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নেমে আসতে শুরু করেছে। আকাশে মেঘ। আরও বৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ জন্য নদীপাড়ের মানুষদের সতর্কাবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে। আমরা বন্যার আশঙ্কা করছি।

রাজারহাটের স্পার বাঁধ হুমকির মুখে: টানা বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তা নদীর পানি ৪৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রবল স্রোতে স্পার বাঁধের সামনের দিকে কিছুটা হেলে পড়েছে। বাঁধটির সংযোগ সড়কটি নিচের দিকে দেবে যাচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাঁধটি রক্ষা করার জন্য। বাঁধটি হুমকির মুখে পড়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের চরম হতাশায় দিন কাটছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, বাঁধটি রক্ষায় জিও ব্যাগ ও টিউব ফেলা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় সব চেষ্টা করা হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আমির হোসেন বলেন, বাঁধ ভেঙে গেলে বাড়িঘর ফসলি জমি সব নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। যে কোনোভাবেই হোক, এ বাঁধটি রক্ষা করা হোক।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৪৮ সেন্টিমিটার ওপরে রয়েছে। আমরা বাঁধটি রক্ষা করার জন্য বালুভর্তি জিও ব্যাগ, জিও টিউব ও ডাম্পিং করে ঝুঁকিমুক্ত করার চেষ্টা করছি।

কাউনিয়ার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত: উজানের ঢলে হু হু করে তিস্তায় বাড়ছে পানি। রংপুরের কাউনিয়ায় তিস্তা পয়েন্টে ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে তিস্তার পানি। এতে শঙ্কা দেখা দিয়েছে বড় ধরনের বন্যার। গতকাল দুপুরে এ তথ্য জানান পাউবো রংপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, তিস্তার ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে গত শুক্রবার দুপুর থেকে পানি বাড়তে শুরু করে। এতে নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম হয়ে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের হরিপুর পর্যন্ত নদী-তীরবর্তী এলাকার চর ও নিচু এলাকা প্লাবিত হতে শুরু করেছে।

তিনি জানান, উজানে পানি বাড়লে পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পাড়ে। বাড়তে পারে নদীভাঙনের তীব্রতাও।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

হুইলচেয়ারে বসেই আলো ছড়াচ্ছেন ফয়সাল

হেঁটে এক টাকায় জ্ঞান বিলিয়ে যাচ্ছেন লুৎফর রহমান

সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী মারা গেছেন

ময়মনসিংহে মায়ের হাতে মেয়ে খুন

কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না : সুলতান সালাউদ্দিন টুকু

টিসিবির পণ্যসহ আটক বিএনপির সেই সভাপতিকে অব্যাহতি

বাংলা ভাষাকে ‘ধ্রুপদী ভাষা’র মর্যাদা দিল ভারত

রাজশাহী মহানগর আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক গ্রেপ্তার

শেরপুরে বন্যাকবলিত মানুষের পাশে বিজিবি

চট্টগ্রামে ফের তেলের ট্যাংকারে ভয়াবহ আগুন

১০

আসিয়ানে অন্তর্ভুক্ত হতে মালয়েশিয়ার সমর্থন চায় বাংলাদেশ

১১

খুলনায় সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপির ৪ নেতাকে বহিষ্কার

১২

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে ৫ পরিচালকের যোগদান

১৩

দুর্গাপূজার প্রতিমা ভাঙচুর, বাকেরগঞ্জ থানার ওসি প্রত্যাহার

১৪

আন্দোলনে নিহত ৩ যুবকের মরদেহ উত্তোলনের নির্দেশ

১৫

মালয়েশিয়ায় আরও জনশক্তি পাঠাতে সহযোগিতা চাইলেন রাষ্ট্রপতি

১৬

সিলেটে পিকআপ চাপায় প্রাণ গেল পুলিশ কর্মকর্তার

১৭

খুলনায় বিএনপির সমাবেশে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ১৫

১৮

চবির হলে আসন বরাদ্দে বৈষম্য, ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা

১৯

মসজিদে তালা দিয়ে দোকানে দুর্বৃত্তের হামলা

২০
X