কুমিল্লার কোম্পানীগঞ্জে যানজট নিরসনে সিএনজিচালিত অটোরিকশাগুলো শৃঙ্খলিত করার উদ্যোগ নেন স্থানীয়রা। বসানো হয় লাইনম্যান, ব্যবস্থা করা হয় টোকেনের। একসঙ্গে সব অটোরিকশা জটলা না করে সিরিয়াল অনুযায়ী চার থেকে পাঁচটি স্ট্যান্ডে যাবে। টোকেনে থাকা অটোরিকশা গন্তব্য অনুযায়ী যাত্রী নিয়ে চলে যাবে। আর এই ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে শুরু থেকেই অবগত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানার ওসিসহ সংশ্লিষ্টরা। স্থানীয়দের উদ্যোগে যানজট কমে আসায় প্রশংসাও করেন তারা। তবে হঠাৎ করেই এই উদ্যোগকে চাঁদাবাজি আখ্যা দিয়ে এবং থানায় হামলার অভিযোগে মিথ্যা মামলাও হয়েছে। আসামি ধরতে ডিবি হানা দিচ্ছে বাড়ি বাড়ি, পালিয়ে বেড়াচ্ছেন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। স্থানীয় প্রশাসন বলছে, ওপরের চাপে তা করতে হচ্ছে। বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন, থানায় কোনো হামলার ঘটনা না ঘটলেও বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে।
সরেজমিন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ‘ইগো’ সেটিসফাই করতে চাঁদাবাজির মিথ্যা অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় উবাইদুল্লাহ হক সিদ্দিকী। তিনি শ্রমিকদের গালাগাল করে পুলিশে দিয়েছেন একজনকে। তারই আরেক সঙ্গী ওসির কক্ষে মারধর করেছেন একজনকে।
এমনকি ওসির কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে হ্যান্ড মাইকে এক শ্রমিক নেতাকে ‘টান দিয়ে ছিঁড়ে ফেলার’ হুমকি দিয়েছেন নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের এক নেতা। যাদের আশ্রয়ে রেখেছেন উবাইদুল্লাহ ও তার সঙ্গীরা।
স্থানীয় অটোরিকশাচালকদের দাবি, গত ২৪ মার্চ বিকেলে কোম্পানীগঞ্জে সিরিয়াল ভেঙে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় উঠে বসেন উবাইদুল্লাহ। এতে বাধা দেন লাইনম্যান ও কেরানি (যিনি অটোরিকশার সিরিয়াল লিখে দেন)। তারা সিরিয়ালের বাইরে থাকা অটোরিকশায় যাত্রী নিতে চালককে নিষেধ করেন। যাত্রীকে বলেন সিরিয়ালের অটোরিকশা নিয়ে যেতে। কিন্তু যাত্রী উবাইদুল্লাহ নামতে চাননি। তিনি যে অটোরিকশায় চড়েছেন, তা নিয়েই যাওয়ার জন্য জেদ করেন। এ সময় নিজেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মুরাদনগর উপজেলার আহ্বায়ক এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির চাচাতো ভাই হিসেবে পরিচয় দেন। এরপরও সিরিয়ালের বাইরে থাকা অটোরিকশা নিয়ে যেতে না দিলে লাইনম্যান ও কেরানির ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে বাগবিতণ্ডায় জড়ান। একপর্যায়ে মোবাইলে একই সংগঠনের সদস্য সচিব মামুনসহ কয়েকজনকে ডেকে আনেন। তারা এসে কেরানি, লাইনম্যানসহ চালকদের মারধর করেন।
বাবুল নামের একজন অটোরিকশাচালক কালবেলাকে বলেন, ‘সিরিয়ালের বাইরে একটা অটোরিকশা নিয়ে যেতে চাইছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির চাচাতো ভাই। তখন লাইনম্যান ও কেরানি ওই অটোরিকশা আটকে দেন। কইছে যাত্রী নামাও। সিরিয়ালের গাড়ি আছে। তখন তারা বলে নামবে না। তাদের রিকোয়েস্ট করছে, সিরিয়ালের গাড়ি নিয়া যান। যাত্রী বলে, আমি এইডাতে বইছি, এইডাতেই যামু। কিন্তু যাইতে না দেওয়ায় উনার নাকি অসম্মান হইছে। এই জন্য কল দিয়ে সমন্বয়ক ছাত্রদের ডাইকা আইনা মারধর করছে। পুলিশ, প্রশাসন ফোন দিয়ে আইনা কেরানিরে ধরাইয়া দিছে। এই খবর পাইয়া কিছু ড্রাইভার থানায় গেছিল, কেরানিরে ছুডাইয়া আনতে। পরে সমন্বয়ক ছাত্ররা এই ড্রাইভারদের ওপর আক্রমণ করছে। থানাতে ড্রাইভার যারা গেছিল, তাদের; আবুল কালামের পরিবারের যারা গেছিল, তাদের মারছে।’
তাজুল ইসলাম নামে প্রত্যক্ষদর্শী এক চালক বলেন, ‘সরকারের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির ভাইকে বলা হইছিল, লাইনের গাড়িতে যান। উনি বলেন, তোর সমস্যা কী, আমি এই গাড়িতে যামু। এই নিয়া পরে ঝামেলা হইছে। কেরানিরে পুলিশ ধইরা নিছে। থানায় সমন্বয়ক-ছাত্ররা আমাদের ড্রাইভারদের মারছে। উল্টা আমাদের বিরুদ্ধেই মামলা দিছে।’
মুরাদনগর থানায় যা হয়েছিল
অটোরিকশা স্ট্যান্ডের কেরানি আবুল কালামকে পুলিশ ধরে নেওয়ার খবরে ঘটনাস্থলে আসেন শ্রমিক নেতারা। তাদের সন্ধ্যার পর থানায় যেতে বলেন মুরাদনগর থানার ওসি মো. জাহিদুর রহমান। স্থানীয় নেতাকর্মী ও প্রশাসনের লোকজন বসে বিষয়টি সমাধান করার জন্য ডাকেন তিনি। তারা সন্ধ্যার পর থেকে রাত দেড়টা পর্যন্ত থানায় ছিলেন। যাদের বিষয়টি সমাধানের জন্য ওসি ডেকেছিলেন, পরবর্তী সময়ে তাদের বিরুদ্ধেই মামলা হয়েছে, আসামি করা হয়েছে। থানায় উপস্থিত থাকা অন্তত চারজনের সঙ্গে কথা হয় কালবেলা প্রতিবেদকের। তারা ঘটনার বিস্তারিত জানান। সিএনজি ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত ছাত্রনেতা বিজয় নেসার বলেন, কেরানি কালামকে ধরে থানায় নেওয়ার পর আমরাও সন্ধ্যার পর থানায় যাই। তখনো কালামকে লকাপে ঢুকানো হয়নি। আমরা যাওয়ার পর ওসি বলছিলেন, সমন্বয়করা আসুক। যারা অভিযোগ করেছে, তাদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টা মিটমাটের ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু ওসি যখন আমাদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন চাঁদাবাজির মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে বাজারে আন্দোলন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লোকজন। থানা থেকে অনেকবার ফোন করলেও তারা থানায় না এসে বাজারে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এদিকে কেরানিকে গ্রেপ্তারের খবরে অন্যান্য চালকও থানার গেটের বাইরে এসে অপেক্ষা করছিলেন।
তিনি বলেন, অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পরও অভিযোগকারীরা থানায় না এলে আমরা তারাবির নামাজ পড়তে যাই। দুই রাকাত নামাজ শেষ করার আগেই ফোনে একের পর একে কল আসতে থাকে। একপর্যায়ে ফোন ধরলে জানতে পারি, থানার ভেতর কালামের ভাই মেহেদীকে মারছে। বাইরে থাকা ড্রাইভারদেরও সমন্বয়কের লোকজন মারছে। নেসার বলেন, এরপর আমরা দ্রুত থানায় গিয়ে দেখি তারা থানার ভেতরে অবস্থান নিয়ে আছে। শ্রমিকদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। একজন তো হ্যান্ড মাইকে শ্রমিক নেতাকে টেনে ছিঁড়ে ফেলার হুমকিও দিয়েছে। এসবের মধ্যেই আমরা ওসির কক্ষে বসে থাকি। শুরুতে ওসি বলছিলেন, সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্নজন ওসিকে কল দিচ্ছিলেন। সরকারের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির বাবা একাধিকবার ওসিকে কল করে বলেছেন, কালামকে না ছাড়ার জন্য। তবে কালামকে কী অভিযোগে আটক করা হয়েছে, তা জানাচ্ছিল না পুলিশ।
নাসের বলেন, রাত বাড়তে থাকলে ওসির রূপ পাল্টাতে থাকে। বলতে থাকেন, ওপর থেকে চাপ আছে। আমাদের নিজে বলেছেন, সকারের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির বাবা কল দিচ্ছেন, ঢাকা থেকেও কল আসছে। একদিকে ওসি আমাদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, অন্যদিকে কুমিল্লা থেকে সেনাবাহিনী, ডিবিসহ অতিরিক্ত পুলিশ ডেকে আনেন। একের পর এক সেনাবাহিনীর গাড়ি আসতে থাকে। তারা এসে থানার সামনে থেকে ড্রাইভারদের সরিয়ে দেন। রাত দেড়টার দিকে আসামি ছাড়া যাবে না বলে সবাইকে চলে যেতে বলেন ওসি।
থানায় উপস্থিত ছিলেন ইয়াছিন আরাফাত নামে আরেক ছাত্রনেতা। তিনি বলেন, আমরা নামাজের যাওয়ার ফাঁকে সমন্বয়করা নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের লোকজন নিয়ে থানায় ঢোকে। কালামের ভাই মেহেদীকে ওসির রুমে বসা দেখে তাকে লাথি দিয়ে চেয়ার থেকে ফেলে দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মুরাদনগরে সদস্য সচিব মামুন। তারা বলতে থাকে, থানা আমাদের, ওসি আমাদের, তোর এখানে কী? সব বের হ। এই বলে তাকে মারধর করে বের করে দেয়। ওসির রুমের সামনে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের লোকজন মাইক দিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের মেরে ফেলার হুমকি দেয়। যার ভিডিও সব জায়গায় আছে। তাদের সঙ্গে যে বেয়াদবি করছে, তারে টান দিয়ে ছিঁড়ে ফেলার প্রকাশ্য হুমকি দিছে। আরাফাত বলেন, কোথাও কোনো চাঁদাবাজি না হলেও চাঁদাবাজি করার অভিযোগ করা হয়েছে। সরকারের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে স্ট্যান্ডের লোকজন নাকি বেয়াদবি করছে। তার ইগো ঠান্ডা করতে এ কারণে এসব নাটক করছে। আমরা থানা থেকে বের হয়ে চলে আসার পর ডিবি আল্লাহু চত্বর থেকে আমাদের আরও পাঁচজনকে ধরে নিয়ে যায়।
তিন মামলা, গ্রেপ্তার ৭
সিরিয়ালে অটোরিকশা নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত হলেও এ ঘটনায় বিএনপির নেতাকর্মী ও শ্রমিকদের বিরুদ্ধে ২৫ মার্চ দুটি মামলা হয়েছে। চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে একটি মামলা করেছেন আবুল ফয়সাল নামের একজন। তিনি ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৭০ থেকে ৮০ জনকে আসামি করেছেন। যার অধিকাংশই স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী। যাদের ওসি ডেকে নিয়েছিলেন, তাদেরও মামলার আসামি করা হয়েছে। সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে একই সংখ্যক আসামির বিরুদ্ধে অন্য মামলাটি করেছেন মুরাদনগর থানার এসআই আলী আক্কাস। দুই মামলায় গ্রেপ্তার আছে সাতজন।
বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে যেভাবে কোথাও কিছু হোক আর না হোক সরকারি কাজে বাধা দিলে মামলা হতো, এখন মুরাদনগরেও তা হচ্ছে। থানায় হামলা ও ভাঙচুরের যে অভিযোগ করা হয়েছে, তাও মিথ্যা বলে জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা।
এদিকে বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার আবুল কালামের ভাই মেহেদী হাসান বাদী হয়ে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করেছেন। মুরাদনগর থানার ওসি মো. জাহিদুর রহমানকে এক নম্বর আর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুরাদনগর উপজেলার আহ্বায়ক উবাইদুল্লা হক সিদ্দিকীকে দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে। এই দুজনসহ আসামি করা হয়েছে মোট ২৫ জনকে। তাদের বিরুদ্ধেও চাঁদাবাজির অভিযোগ আনা হয়েছে।
চাঁদাবাজির মিথ্যা অভিযোগ ও শ্রমিকদের প্রতিবাদ
সিএনজিচালিত অটোরিকশার স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজির যে অভিযোগ সমন্বয়কদের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে জানিয়েছেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। অটোরিকশাচালকরা বলছেন, ৫ আগস্টের পর থেকে অটোরিকশা থেকে কোনো টাকা নেওয়া হচ্ছে না। কেউ চাঁদাবাজি করছে না। অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
অটোরিকশাচালক বাবুল কালবেলাকে বলেন, ‘আমি এখানে ১৫ থেকে ১৬ বছর গাড়ি চালাই। আওয়ামী লীগ সরকার যতদিন ছিল, তখন চাঁদা দেওয়া লাগত। আওয়ামী লীগ সরকার বিতাড়িত হওয়ার পর এখন চাঁদা বন্ধ আছে। অটোরিকশা বাজারে জ্যাম করার কারণে বিএনপির যারা বাজার চালায় তারা আমাদের ডাইকা বলছে, কী করা যায়। পরে শৃঙ্খলা করার জন্য কেরানি আর লাইনম্যান ঠিক করে দেয়। এদের বেতন দেয় বাস মালিক সমিতি। আমাদের কারও কাছ থেকে কোনো টাকা নেওয়া হয় না। সব অটোরিকশা একসঙ্গে না রেখে বাজারের স্ট্যান্ডে সিরিয়াল করে ৪ থেকে ৫টি অটোরিকশা ছাড়ে। সিরিয়ালে আমরা যাত্রী নিয়ে যাই। এতে করে রাস্তায় আগের থাইকা জ্যাম কমেছে। এখানে কোনো চাঁদাবাজির বিষয় নেই। অভিযোগটা মিথ্যা।’
শ্রমিক নেতা ইদ্রিস মিয়া বলেন, ‘সিরিয়ালি গাড়ি চালানোর জন্য যে ব্যবস্থা করা হইছে, তা শুরু থেকে ইউএনও, ওসি সবাই জানত। এখানে যে কোনো চাঁদাবাজি হয় না, তা তারা খুব ভালো করে জানে। কিন্তু সরকারের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির ভয়ে তারা কিছু বলছে না। কারণ সরকারের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিই তাদের এখানে বদলি করে এনেছেন। মিথ্যা একটা অভিযোগ দিয়ে আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে।
এদিকে সিএনজি স্ট্যান্ড ও থানায় মারধরের ঘটনার প্রতিবাদে গত বুধবার অর্ধবেলা পরিবহন ধর্মঘট পালন করেছেন পরিবহন শ্রমিকরা। সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কুমিল্লার জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন কোম্পানীগঞ্জ শাখার উদ্যোগে এই কর্মসূচি পালিত হয়। ধর্মঘটের কারণে মুরাদনগরের কোম্পানীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন পথে বাস ও মিনিবাস চলাচল বন্ধ ছিল। পরদিন বৃহস্পতিবার একই ঘটনার প্রতিবাদে আধাবেলা দোকানপাট বন্ধ রেখে ধর্মঘট পালিত হয়।
সিএনজি স্ট্যান্ড ও পরবর্তী সময়ের ঘটনা প্রসঙ্গে কালবেলার সঙ্গে কথা বলেছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মুরাদনগর উপজেলার আহ্বায়ক উবাইদুল্লাহ হক সিদ্দিকী। তিনি বলেন, আমরা রিজার্ভ সিএনজি নিয়ে মুরাদনগরের আকবপুর যাচ্ছিলাম। আমার সঙ্গে আরও দুজন ছিল। কিন্তু আমাদের লাইনম্যান ও কেরানি কালাম আটকে দেয়। টোকেন ছাড়া গাড়ি নিলে ৫০ টাকা দেওয়া লাগবে বলে জানায়। তখন আমরা প্রতিবাদ করি। আমাদের ওরা মারধর করে। পরে আমরা পুলিশকে খবর দিই।
চাঁদাবাজির কোনো প্রমাণ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের কাছে কোনো প্রমাণ নেই। তবে পুলিশ টোকেন পেয়েছে। যেগুলো দিয়ে তারা চাঁদাবাজি করে। চাঁদাবাজি না করলে টোকেন দেবে কেন? আমরা জেনেছি, ওরা সিএনজি থেকে এককালীন টাকা নেয়। থানায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নিয়ে চালকদের ওপর হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে একজনের বিষয়ে প্রশ্ন আসছে। সাজিদ, মুরাদনগর সদর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ছাত্রলীগের সেক্রেটারি ছিল। কিন্তু জুলাই আন্দোলনে ছাত্রলীগ ত্যাগ করে সে আন্দোলনে সক্রিয় ছিল। যার অনেক প্রমাণ আছে।
গ্রেপ্তার আতঙ্কে বাড়িছাড়া বিএনপির নেতাকর্মীরা
কুমিল্লার মুরাদনগরে আবার যেন ফিরে এসেছে ৫ আগস্ট-পূর্ববর্তী অবস্থা। রাতের বেলা বাড়িতে ঘুমাতে পারছেন না স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। মধ্যরাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি করে খোঁজা হচ্ছে বিএনপি নেতাকর্মীদের। গ্রেপ্তার আতঙ্কে বাজারেও যেতে পারছেন না তারা। তেমনি একজন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ইদ্রিস মিয়া। গত বৃহস্পতিবার তিনি কালবেলাকে বলেন, অটোরিকশা স্ট্যান্ডের ঘটনাটি সামান্য একটা বিষয় ছিল। ওসি বলছিলেন, ভুল বোঝাবুঝি। কথা বলে সমাধান করে দেবেন। পরে দেখলাম, আমাদের বিরুদ্ধেই মামলা দিছে। রাতবিরাতে ডিবি পুলিশ এসে আমাকে গ্রেপ্তারের জন্য আসে। প্রতিটা রুমে রুমে তল্লাশি করে। এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এসে আমরা রাতে বাড়ি থাকতে পারছি না। ওপরের ইশারায় আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে।
এদিকে গতকাল শনিবার মুরাদনগরে বাচ্চাদের জন্য ঈদের বাজার করতে গেলে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা বিল্লাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ, ওপরের নির্দেশে জেলা থেকে ডিবির টিম এসে এসব অভিযান চালাচ্ছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের হয়রানি করছে।
অটোরিকশা স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি, থানায় হামলা, ওসির কক্ষের মারধর প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে মুরাদনগর থানার ওসি মো. জাহিদুর রহমান কালবেলাকে বলেন, যা ঘটেছে, আপনারা সবই জানেন। আমি নতুন করে কিছু বলতে চাই না। চাঁদাবাজি, সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে মামলা হয়েছে। সেটা তদন্ত চলছে।
মন্তব্য করুন