মঙ্গলবার, ০১ এপ্রিল ২০২৫, ১৮ চৈত্র ১৪৩১
আমজাদ হোসেন হৃদয়
প্রকাশ : ১৪ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১৪ মার্চ ২০২৫, ০৮:৫৫ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সাক্ষাৎকার : হাসনাত আব্দুল্লাহ

এই মুহূর্তে সাংগঠনিক বিস্তারই আমাদের মূল লক্ষ্য

এই মুহূর্তে সাংগঠনিক বিস্তারই আমাদের মূল লক্ষ্য

এনসিপির সাংগঠনিক কার্যক্রম, আওয়ামী নিষিদ্ধে তাদের অবস্থান, আগামী জাতীয় নির্বাচন, নির্বাচনী জোটসহ নানান বিষয়ে কালবেলার সঙ্গে কথা বলেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ

কালবেলা: নতুন দলের আত্মপ্রকাশের পর কোন বিষয়ের ওপর আপনারা গুরুত্ব দিচ্ছেন?

হাসনাত আব্দুল্লাহ: আমাদের এখন সাংগঠনিক বিস্তার এবং নিবন্ধনের বিষয়টি মূল এজেন্ডা। এ দুটি বিষয়ে আমরা আপাতত নজর (ফোকাস) বেশি দিচ্ছি। নিবন্ধন প্রাপ্তিতে যে শর্তাবলি রয়েছে, তা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করতে চাই। দ্রুততম সময়ের মধ্যে জেলা-উপজেলায় কমিটি গঠন এবং কার্যালয় প্রতিষ্ঠা হবে। বিশেষ করে ঈদের পর এসব কাজ ত্বরান্বিত করা হবে। কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে আমরা সদস্য সংগ্রহ শুরু করব।

কালবেলা: দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম বিকেন্দ্রীকরণের কথা বলেছেন, সেটা কীভাবে?

হাসনাত আব্দুল্লাহ: সদস্য সচিব এবং সংগঠক প্যানেল সারা দেশে এনসিপি সংগঠন সৃষ্টি ও বিস্তারে কাজ করবে। আহ্বায়কের নেতৃত্বাধীন প্যানেল পার্টির পলিসি নির্ধারণ, রাজনৈতিক কর্মসূচি নির্ধারণ করবে। তা বাস্তবায়নে সব প্যানেলের মধ্যে সমন্বয় করবে সমন্বয়কারী প্যানেল।

কালবেলা: এনসিপি কি শুধুই তরুণদের প্ল্যাটফর্ম?

হাসনাত আব্দুল্লাহ: রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশে এনসিপি তারুণ্যের একটি সমাবেশ ঘটাতে পেরেছে। এর অর্থ এটা নয় যে, এনসিপি তরুণদের মধ্যে নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখবে। ছাত্র, শ্রমিক, পেশাজীবী, কৃষক, মজুর, গৃহকর্মী, গৃহিণী, আলেম সমাজ, দলিত-হরিজনসহ সব শ্রেণি-পেশার এবং সব ধর্মের লোককে আমরা এনসিপির অংশ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। স্বল্প সময়ের মধ্যে এনসিপি দেশজুড়ে কর্মপরিধি বিস্তার করতে সক্ষম হবে।

কালবেলা: জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে আপনারা সময় চাচ্ছেন কেন?

হাসনাত আব্দুল্লাহ: বিদ্যমান যে প্রশাসন, তাদের রেখে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কতটা হবে, সেটা আসলে প্রশ্নবিদ্ধ। আমরা দেখেছি, গত দেড় দশকের বেশি সময় গ্রহণযোগ্য কোনো নির্বাচন হয়নি। আপনারা জানেন স্থানীয় প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তারা দীর্ঘদিন ফেয়ার নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যায়নি। সে বিষয়টিও তাদের চর্চার একটি বিষয় রয়েছে, অন্তর্ভুক্তির বিষয় রয়েছে। নির্বাচনটা যতটা না মানুষের ওপর নির্ভর করে, তার চেয়ে বেশি নির্ভর করে প্রশাসনের ওপর। বর্তমান প্রশাসনের কাঠামো আমরা যতদিন না পরিবর্তন করতে পারব, জনগণকে প্রশাসনের ঊর্ধ্বে স্থান না দিতে পারি, ততদিন পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কতটা হবে, সে প্রশ্ন থেকেই যায়।

আমরা সবার অংশগ্রহণের ভিত্তিতে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই। দীর্ঘদিন আমরা গণতান্ত্রিক শাসনবিহীন দেশে পরিণত হয়েছি। আমরা চাই প্রপার ডেমোক্রেটিক ট্রান্সফরমেশন হোক, যেটার মধ্য দিয়ে জনগণ তার ভোটের অধিকার ফিরে পাবে।

কালবেলা: এনসিপি কোনো এক জোটে গিয়ে নির্বাচন করবে বলে জোর আলোচনা আছে, আপনাদের সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত কী?

হাসনাত আব্দুল্লাহ: নির্বাচনী জোটের বিষয়ে এখনো আমাদের সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা আপাতত নিজেদের সাংগঠনিক বিস্তারেই সব মনোযোগ দিচ্ছি। সাংগঠনিক কাঠামো বিস্তারে মনোযোগ দিয়েছি। রোজার পর এগুলো পুরোদমে চলবে। এরপর নির্বাচন নিয়ে আমরা ভাবব। প্রতিটি আসনে এনসিপির দুর্গ গড়ে তুলতে আমরা কাজ করব।

কালবেলা: বিএনপির সঙ্গে আপনাদের দূরত্বের জায়গা কোথায়?

হাসনাত আব্দুল্লাহ: বিএনপির সঙ্গে আমাদের নীতিগত (পলিসি) জায়গা থেকে কিছু দূরত্ব রয়েছে। কিন্তু ফ্যাসিবাদবিরোধী সব দলের প্রতিই আমাদের সম্মান শ্রদ্ধা রয়েছে। পলিসির জায়গা থেকে কিছু বিভাজন রয়েছে, কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি সেগুলো আলোচনার (ডিসকাশন) মধ্য দিয়ে সমাধান সম্ভব। যেহেতু আমরা চাচ্ছি এই সংবিধানটি (বাহাত্তরের সংবিধান) অকার্যকর হওয়ার কারণেই গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। সুতরাং এই সংবিধানের অধীনে আবার কোনো শাসনতান্ত্রিক কাঠামোর দিকে যাওয়া সমীচীন হবে না। সে জায়গা থেকে আমাদের প্রয়োজন নতুন একটি সংবিধান প্রণয়ন। সেই জায়গায় হয়তো বিএনপির অবস্থান ভিন্ন। সেটি আলোচনার মধ্য দিয়ে সমাধান সম্ভব।

কালবেলা: জুলাই ঘোষণাপত্র না হওয়ার কারণ কী?

হাসনাত আব্দুল্লাহ: জুলাই ঘোষণাপত্র হওয়ার সুযোগ এখনো রয়েছে। জাতীয় ঐকমত্যকে আমরা গুরুত্ব দিয়েছি। আমরা চেয়েছি সবার অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে যেন সেটি হয়। বিএনপি এ ক্ষেত্রে তাদের কিছু বিষয়ে দ্বিমত জানিয়েছে। আমরা মনে করি, ঐকমত্য হলে সেটি এখনো সুযোগ আছে। সেক্ষেত্রে সরকারেরও সহযোগিতা প্রয়োজন।

কালবেলা: সমন্বয়ক পরিচয়ে বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজির খবর আসছে, এ ক্ষেত্রে আপনাদের অবস্থান কী?

হাসনাত আব্দুল্লাহ: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক ও সমন্বয়ক পরিচয়ে বিশেষ কোনো সুবিধা নিতে পারবে রাষ্ট্রের কাছ থেকে বা বিভিন্ন জায়গা থেকে, বিষয়টি মোটেও এমন নয়। কেউ যদি এই পরিচয়টি ব্যবহার করে কোনো ধরনের অন্যায় এবং বিদ্যমান আইনপরিপন্থি কোনো কাজ করে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ থাকবে। সমন্বয়ক পরিচয়ে এই ভূখণ্ডে কোনো বিশেষ সুবিধা দাবি করতে পারে সেটি এমন নয়।

কালবেলা: আপনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন, এই সংগঠনের ভূমিকা এখন কী হবে?

হাসনাত আব্দুল্লাহ: পৃথিবীর অনেক দেশেই গণঅভ্যুত্থানের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে যে ফোর্সটি রেভুলেশন করে, সে ফোর্সটি থেকে যায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি অরাজনৈতিক, একটি ইন্টেলেকচুয়াল জায়গা থেকে তার কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যে ব্যানার, সেটি অবশ্যই অব্যাহত থাকবে। আমরা বলেছি যে ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান, গণহত্যার যে বিচার, আহত এবং শহীদদের নিয়ে এই ব্যানারটি কাজ করবে।

কালবেলা: আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধে আপনাদের অবস্থান পরিষ্কার নয় বলে অনেকে মনে করেন, আপনার মত কী?

হাসনাত আব্দুল্লাহ: আমরা প্রত্যাশা করছি, শিগগির আমাদের প্রত্যাশিত সংস্কারগুলো সম্পন্ন হবে। তার মধ্যে খুনি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিচার এবং আওয়ামী লীগকে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে আমরা দেখতে চাই কি চাই না, সে বিষয়ে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সব দলকে এ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য উদাহরণ রেখে যেতে হবে। আমাদের যে অন্যায় অবিচারের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, আশা করি রাজনৈতিক ঐকমত্যের মধ্য দিয়ে সেগুলোর উত্তরণ ঘটবে।

কালবেলা: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

হাসনাত আব্দুল্লাহ: কালবেলাকেও ধন্যবাদ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব, বিএনপি নেতা খুন

অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই গুমের বিচার হবে : উপদেষ্টা মাহফুজ

শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

শরীয়তপুরে দুগ্রুপের পাল্টাপাল্টি হামলায় ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ, আহত ৭

নরসিংদীতে সড়ক দুর্ঘটনায় শিশু নিহত, আহত ১০

৫ আগস্টের পরে সত্যিকারের ঈদ আনন্দ শুরু হয়েছে : জাহিদুল ইসলাম

অপহরণ চেষ্টার মামলায় সমন্বয়ক মেহেদী হাসান গ্রেপ্তার

বাজারে হামলার শঙ্কা, ১৪৪ ধারা জারি

ঈদের দ্বিতীয় দিনে যমুনা সেতুতে টোল আদায় ৭৯ লাখ

ঈদের মেলায় ফুচকা খেয়ে হাসপাতালে ৫০

১০

ইরানে হামলার হুমকি, ট্রাম্পকে সতর্ক করল রাশিয়া

১১

কুমিল্লায় গাছের সঙ্গে বাসের ধাক্কা, নিহত ২

১২

মাইকে ঘোষণা দিয়ে টর্চের আলোতে সংঘর্ষে নামে গ্রামবাসী

১৩

বিসিসিআইয়ের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে ফিরছেন শ্রেয়াস আইয়ার

১৪

মার্কিন হামলা হলে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে ‘বাধ্য হবে’ ইরান : খামেনির উপদেষ্টা

১৫

টেশিসকে হাইটেক পার্ক করে ‘চীনের পরিকল্পনা’ আনার চিন্তাভাবনা

১৬

ভারতের ওপর ১০০ শতাংশ পর্যন্ত পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ করবে যুক্তরাষ্ট্র!

১৭

অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে দেখতে বাড়ি যাওয়ার পথে পুলিশ সদস্য নিহত

১৮

আগামী ১৫ বছর রিয়ালে থাকতে চান বেলিংহাম

১৯

পানিতে ভেসে গেল উপকূলের ঈদ আনন্দ, ১৫ হাজার মানুষ বন্দি

২০
X