চন্দ্রাভিযানে যাওয়া রাশিয়ার মহাকাশযান লুনা চাঁদের বুকে আছড়ে পড়ে ধ্বংস হয়েছে। আর এর মাধ্যমে ব্যর্থ হয়েছে রাশিয়ার ৪৭ বছরের প্রথম চন্দ্রাভিযান। অন্য আরেকটি কক্ষপথে চলে যাওয়ার পর রুশ মহাকাশ যান লুনা-২৫ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং এটি চাঁদের বুকে আছড়ে পড়ে। এদিকে গতকাল রোববার সকালে চন্দ্রাভিযানে ভারতের চন্দ্রযান-৩-এর দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত ডি-বুস্টিং অপারেশন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এখন চাঁদের মাটিতে পৌঁছানোর সেই মাহেন্দ্রক্ষণের জন্য অপেক্ষা করছেন ভারতবাসী। খবর সিএনএন ও এনডিটিভির।
রাশিয়ার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা রসকসমস জানিয়েছে, শনিবার গ্রিনিচ সময় ১১টা ৫৭ মিনিটে তারা মহাকাশযানের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলে। আজ সোমবার এটির চাঁদে অবতরণ করার কথা ছিল। সংস্থাটি বিবৃতিতে বলেছে, ‘মহাকাশযানটি অন্য আরেকটি কক্ষপথে চলে যায় এবং চাঁদের পৃষ্ঠে আছড়ে পড়ার মাধ্যমে ধ্বংস হয়ে যায়।’ সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, লুনা-২৫-এর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণ খুঁজে বের করতে একটি আন্তঃবিভাগীয় কমিশন গঠন করা হয়েছে। গত ১০ আগস্ট লুনা-২৫ উৎক্ষেপণ করা হয়। এই মিশনের মাধ্যমে আশার সঞ্চার হয়েছিল, রাশিয়া আবারও চাঁদে অবতরণের লড়াইয়ে পূর্ণ শক্তি নিয়ে যোগ দিচ্ছে।
উল্লেখ্য, রাশিয়া প্রথম দেশ হিসেবে ১৯৫৭ সালে পৃথিবীর কক্ষপথে স্পুটনিক-১ স্যাটেলাইট পাঠিয়েছিল। এ ছাড়া সোভিয়েত মহাকাশচারী ইউরি গ্যাগারিন ১৯৬১ সালে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে মহাকাশ ভ্রমণে গিয়েছিলেন। ১৯৭৬ সালে লুনা-২৪-এর পর রাশিয়া (সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন) চাঁদে আর কোনো অভিযান চালায়নি। ওই সময় দেশটির শাসক ছিলেন কমিউনিস্ট নেতা লিওনিদ ব্রেজনেভ।
চাঁদের খুব কাছে চন্দ্রযান-৩ : এদিকে রাশিয়া চন্দ্রাভিযানে এমন সময় ধাক্কা খেল, যখন ভারত প্রায় একই সময় সফলভাবে চাঁদে মহাকাশযান অবতরণের চেষ্টা করছে। বর্তমানে ভারতের মহাকাশযান চন্দ্রযান-৩ চাঁদে অবতরণের অপেক্ষায় আছে। এর দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত ডি-বুস্টিং অপারেশন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে রোববার সকালে; এখন চাঁদের মাটিতে পৌঁছানোর সেই মাহেন্দ্রক্ষণের জন্য কেবল অপেক্ষা। মহাকাশযানটির ল্যান্ডার বুধবার চাঁদের মাটিতে অবতরণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই পর্বের দিকেই এখন গভীর মনোযোগ ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা-ইসরোর বিজ্ঞানীদের। এনডিটিভি জানিয়েছে, ল্যান্ডার বিক্রম চাঁদের কক্ষপথের এমন একটি অবস্থানে রয়েছে, যেখান থেকে চাঁদের নিকটতম দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার এবং দূরবর্তী পথের দূরত্ব ১৩৪ কিলোমিটার। এই কক্ষপথ থেকেই বুধবার চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে সফট-ল্যান্ডিংয়ের চেষ্টা করবে বিক্রম। চাঁদের ওই অংশ সম্পর্কে এখনো খুব কমই জানে মানুষ। প্রথম দেশ হিসেবে ভারত সেখানে রোবটযান নামাতে যাচ্ছে।
ইসরো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (টুইটার) জানিয়েছে, চন্দ্রযান-৩-এর দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত ডিবুস্টিং অপারেশনের মধ্য দিয়ে লুনার মডিউল সফলভাবে কক্ষপথের দূরত্ব কমিয়ে এনেছে। মডিউলটি অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাবে এবং নির্ধারিত ল্যান্ডিং সাইটের সূর্যোদয়ের জন্য অপেক্ষা করবে। অভিযান সফল হলে নিরাপদে চাঁদের মাটিতে নামতে পারা চতুর্থ দেশ হবে ভারত। এর আগে কেবল যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনের মহাকাশযান নিরাপদে চাঁদের মাটিতে নামতে পেরেছে। গত বৃহস্পতিবার চন্দ্রযান-৩-এর ‘প্রপালশন মডিউল’ থেকে ‘ল্যান্ডার মডিউলটি’ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পৃথিবী থেকে সমস্ত পথ ল্যান্ডারকে বয়ে নিয়ে এসেছে প্রপালশন মডিউল। প্রপালশন মডিউলটি এখন কয়েক মাস বা বছর ধরে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে থাকবে এবং চাঁদের বায়ুমণ্ডল পর্যবেক্ষণ করবে। ল্যান্ডারটি সেখান থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরই বৃহস্পতিবার প্রথম চাঁদের উপরিভাগের ছবি পাঠিয়েছে। চাঁদের মাটিতে নামার পর ল্যান্ডার বিক্রমের পেট থেকে বেরিয়ে আসবে রোভার প্রজ্ঞান। তার ছবি তুলে পৃথিবীতে পাঠাবে বিক্রম। রোবটযান প্রজ্ঞান চন্দ্রপৃষ্ঠের রাসায়নিক গঠন বিশ্লেষণ এবং পানির সন্ধান করবে। এই মিশনের আয়ু হবে এক চন্দ্র দিবস, যা পৃথিবীর ১৪ দিনের সমান।
গত ১৪ জুলাই দুপুরে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ কেন্দ্র থেকে চন্দ্রযান-৩-এর সফল উৎক্ষেপণ করে ইসরো। চাঁদে পৌঁছানোর চেষ্টায় এর আগে দুটি অভিযান চালিয়েছে ভারত। ২০০৮ সালে প্রথম অভিযানে চন্দ্রযান-১ পৌঁছেছিল চাঁদের কক্ষপথে। চাঁদের ভূপৃষ্ঠের গঠন ও পানির উপস্থিতি নিয়ে বড় পরিসরে গবেষণা চালানো হয় সে সময়। দিনের বেলায় চাঁদে যে একটি বায়ুমণ্ডল সক্রিয় থাকে, ওই গবেষণাতেই তা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়। ২০১৯ সালের দ্বিতীয় অভিযান আংশিকভাবে সফল হয়েছিল। চন্দ্রযান-২-এর অরবিটার আজও চাঁদের চারপাশ প্রদক্ষিণ করছে এবং তথ্য পাঠাচ্ছে; কিন্তু এর ল্যান্ডার অবতরণের সময় শেষ মুহূর্তের জটিলতায় চাঁদের মাটিতে বিধ্বস্ত হয়।
মন্তব্য করুন