রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পের কুখ্যাত দুই মাদক কারবারি ভূঁইয়া সোহেল ওরফে বুনিয়া সোহেল এবং সেলিম আশরাফী ওরফে চুয়া সেলিম। ক্যাম্পের মাদক কারবারের আধিপত্য নিয়ে এই দুজনের বাহিনীর মধ্যে কয়েক বছর ধরেই চলে আসছে সংঘর্ষ। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেসব সংঘর্ষ যেন মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। দিনদুপুরে প্রকাশ্যে গোলাগুলি, হত্যা, কুপিয়ে জখম—এসব যেন হয়ে গিয়েছিল ডাল ভাত। আর এ সবকিছুর মূলেই ছিল সোহেল এবং সেলিম।
আগস্টের পর থেকে জেনেভা ক্যাম্প এলাকায় মাদক কারবার নিয়ে দ্বন্দ্বে এই দুই বাহিনীর তাণ্ডবে গত কয়েক মাসে ক্যাম্পে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত পাঁচজন। আহত হয়েছে একশর বেশি মানুষ। এসব ঘটনায় গত ৩১ অক্টোবর সিলেট থেকে বুনিয়া সোহেলকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এর দুই মাস পর তার প্রতিপক্ষ সেলিম আশরাফী ওরফে চুয়া সেলিমও গ্রেপ্তার হয়েছে। গত বুধবার গভীর রাতে ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালের সামনে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছেন র্যাব-২ এর সদস্যরা।
জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রে জানা যায়, ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, আদাবর এবং বেশ কয়েকটি থানা থেকে প্রচুর অস্ত্র এবং গুলি লুট করে ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়।
স্থানীয়রা জানান, আগস্টের পর কয়েক মাস আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির অপব্যবহার করে ক্যাম্পে প্রাণঘাতি তাণ্ডব চালায় সেলিম ও সোহেলের বাহিনী। দুই গ্রুপের সদস্যদের অস্ত্র হাতে মহড়া, গোলাগুলি, বোমা বিস্ফোরণ ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। এসব সংঘর্ষের ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে অনেক সাধারণ মানুষও।
সর্বশেষ গত ১ নভেম্বর জেনেভা ক্যাম্পে বোমা বিস্ফোরণে একগাল ওরফে রাজ (২৮) নামে একজন নিহত হয়েছে। সে জেনেভা ক্যাম্পের শীর্ষ মাদক কারবারি সোহেল ওরফে বুনিয়া সোহেলের হেরোইন বিক্রেতা গ্রুপের সদস্য ছিল। রাজের আগে হত্যার শিকার হয়েছিল মাদক কারবারি শাহনেওয়াজ কাল্লু, ক্যাম্পের বাবুল হোসেনের ছেলে অটোরিকশাচালক সানু, শাহেন শাহ ও মো. সাগর। এসব হত্যার ঘটনা ঘটেছে থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র ও তাদের কাছে থাকা অবৈধ অস্ত্র দিয়ে।
তবে পুলিশ বলছে, মাদকের আধিপত্য নিয়ে এসব সংঘর্ষ চললেও বুনিয়া সোহেল এবং চুয়া সেলিম গ্রুপের কাছে থাকা লুট হওয়া অস্ত্রের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন সময় অভিযান চালালেও ক্যাম্প থেকে পুলিশের কোনো অস্ত্র জব্দ করা যায়নি।
এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার ওসি ইফতেখার হাসান কালবেলাকে বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় বিভিন্ন থানা থেকে অস্ত্র লুট হয়েছে এটা সত্যি। এরপর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে আমরা ক্যাম্পে বিভিন্ন সময় অভিযান চালালেও পুলিশের লুট হওয়া কোনো অস্ত্র জব্দ হয়নি। আমার ধারণা, লুট হওয়া অস্ত্র জেনেভা ক্যাম্প থেকে অন্য কোথাও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে র্যাব জানিয়েছে, গত ৪ সেপ্টেম্বর জেনেভা ক্যাম্পে প্রতিপক্ষের গুলিতে বিদ্ধ হয়ে চুয়া সেলিম গোপনে চিকিৎসা নিচ্ছিল। এর চার মাস বাদে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে র্যাবের হাতে ধরা পড়ল সে।
র্যাব-২ এর সহকারী পরিচালক খান আসিফ তপু জানান, চুয়া সেলিম হাসপাতালে ভর্তি ছিল, চিকিৎসক ছাড়পত্র দিলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। চুয়া সেলিম দুটি হত্যা মামলাসহ ৩৫ মামলার আসামি।
তিনি বলেন, রাজধানীর জেনেভা ক্যাম্পে শীর্ষ দুই মাদক কারবারি চুয়া সেলিম ও ভূঁইয়া সোহেল। কয়েক মাস আগে সিলেটে র্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছে ভূঁইয়া সোহেল। বুধবার রাতে খবর আসে চুয়া সেলিম ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি, ওই খবরে হাসপাতালে গিয়ে তার অবস্থান শনাক্ত করা হয়।
তিনি বলেন, সোহেল এবং সেলিমের বাহিনীর থানার লুট হওয়া অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়েছিল এ তথ্য আমাদের কাছে ছিল। আমরা দীর্ঘদিন ধরেই তাদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা করছিলাম। গ্রেপ্তারের পর তাকে মোহাম্মদপুর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। এখন পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করলে হয়তো অস্ত্রের বিষয়ে জানা যাবে।