শীতজনিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। এই রোগের প্রকোপ শিশুদের মধ্যে বেশি হলেও প্রাপ্তবয়স্কদের সংখ্যা নেহাত কম নয়। এর মধ্যে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যাই বেশি। দেশের জেলা, উপজেলার প্রায় সব হাসপাতালের অবস্থা এখন প্রায় একইরকম।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের তথ্যমতে, শীতে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে ঢাকা বিভাগে ১১ হাজার ৯৭৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে সাতজনের। এ ছাড়া ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৪ হাজার ১২১ জন। ময়মনসিংহ বিভাগে শ্বাসতন্ত্রের রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৯০০ জন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে ২৭ জনের। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৬ হাজার ৯ জন। চট্টগ্রাম বিভাগে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ৭ হাজার ৫৪১। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় ১০ জনের। এ ছাড়া ৩৩ হাজার ১৮৩ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্তের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে একজনের। রাজশাহী বিভাগে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে ২ হাজার ১০২ ও ডায়রিয়ায় ৯ হাজার ৭১৬ এবং রংপুর বিভাগে শ্বাসতন্ত্রের রোগে ৫ হাজার ২৩২ ও ডায়রিয়ায় ২০ হাজার ৬৪৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ ছাড়া খুলনা বিভাগে শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহে ৭ হাজার ৫৪১ জন আক্রান্ত হয়েছেন, চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে পাঁচজনের। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ২০ হাজার ৭৭৩ জন। বরিশাল বিভাগে শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহে আক্রান্ত ২ হাজার ২৪৮ জনের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ বিভাগে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ৮ হাজার ৩৮৮ জন। সিলেট বিভাগে শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহে আক্রান্ত ৪ হাজার ৯৬১ জনের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় একজনের, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ৫ হাজার ৯০৪ জন। গত ১ নভেম্বর থেকে ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত শ্বাসতন্ত্রের রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৪ হাজার ৫৯২ জন; চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে ৫৪ জনের। ডায়রিয়ায় মোট আক্রান্ত ১ লাখ ১৫ হাজার ৭৭৬ জন, চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু একজনের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ ডা. মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বলেন, শীতের তীব্রতার সঙ্গে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ও কোল্ড ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যায়। গত দুই মাসে দেড় লক্ষাধিক মানুষ এসব সমস্যা নিয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এবারের শীতে এখন পর্যন্ত শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে ৫৪ এবং ডায়রিয়ায় একজনের মৃত্যু হয়েছে।
ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী বেশি : রাজধানীর আন্তর্জাতিক উদারাময় গবেষণা কেন্দ্রের (আইইডিসিআর,বি) তথ্যানুযায়ী, গতকাল বিকেল ৫টা পর্যন্ত ৪৮৩ ডায়রিয়া রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। শনিবার সেবা নেন ৬৭১ জন। শুক্রবার আইসিডিডিআর, বিতে চিকিৎসা নেন ৬৪৮ এবং বৃহস্পতিবার ৭৩৮ জন। ১ জানুয়ারি চিকিৎসা নিয়েছেন ৮৫০ জন। রোগীদের মধ্যে ৮০ শতাংশই শিশু।
হাসপাতালের তথ্যানুযায়ী, গত দুই মাসে গড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ রোগী আইসিডিডিআর,বিতে চিকিৎসা নিয়েছেন। অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে হাসপাতালের সামনে তাঁবু গেড়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। জরুরি বিভাগে শয্যাপ্রতি একাধিক রোগী রাখা হচ্ছে। নভেম্বর থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।
আইসিডিডিআর,বির জ্যেষ্ঠ কমিউনিকেশন ম্যানেজার তারিফুল ইসলাম খান বলেন, প্রতি বছরের শীত মৌসুমে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ে। বিশেষ করে নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি— এই চার মাস রোটাভাইরাসের প্রভাব বেশি থাকে।
তিল ধারনের জায়গা নেই শিশু হাসপাতালে : শিশুদের চিকিৎসায় বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট। শিশুর চিকিৎসায় নির্ভরতার এই প্রতিষ্ঠানে এখন একটি শয্যাও ফাঁকা নেই। প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ রোগী ভিড় করে এই হাসপাতালে। বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, বিশেষায়িত হওয়ায় শিশু হাসপাতালে সবসময় রোগীর চাপ থাকে। শীতে শিশুদের নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ার প্রকোপ বেশি থাকে। নিউমোনিয়া থেকে শিশুদের সুরক্ষায় পরিবারকে আরও যত্নবান হতে হবে। ছয় মাস পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। শিশুদের সব টিকা দিতে হবে। শীতে সন্তানদের গরম কাপড় দিয়ে রাখতে হবে। স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের নাক, মুখ ও মাথা ঢেকে বাইরে বের করতে হবে। এরপরও শীতে কোনো শিশুর ঠান্ডাজনিত সমস্যা দেখো দিলে বিলম্ব না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।