বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ২৫ পৌষ ১৪৩১
তারাবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:০৫ এএম
আপডেট : ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:১৪ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
শোক

বিদায় ঢাকাই সিনেমার রঙিন নবাব

বিদায় ঢাকাই সিনেমার রঙিন নবাব

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে নিয়ে খান আতাউর রহমান দেশের প্রয়াত কিংবদন্তি অভিনেতা আনোয়ার হোসেনকে নিয়ে নির্মাণ করেছিলেন ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ সিনেমা। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার অনেক পর প্রদীপ দে নির্মাণ করেন ‘রঙ্গীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা’। এতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন দেশের বরেণ্য অভিনেতা প্রবীর মিত্র। গুণী সেই অভিনেতা রোববার (৫ জানুয়ারি) রাত ১০টা ৩০ মিনিটে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। তার মৃত্যুর পর শোকের ছায়া নেমে আসে দেশের বিনোদন জগতে।

প্রবীর মিত্রের প্রথম জানাজা হয় কিংবদন্তির দীর্ঘদিনের কর্মস্থল বিএফডিসিতে। গতকাল সোমবার বাদ জোহর জানাজার পর তাকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়।

প্রবীর মিত্রের দুই পায়ের হাঁটুতে সমস্যার কারণে দীর্ঘ ১৬ বছর ভীষণ অসুস্থ ছিলেন। যার কারণে দীর্ঘ সময় একটানা বিছানায় খুব বেশি নড়াচড়া না করে অবস্থান করতে হয়। দীর্ঘ সময় ধরে একটানা এভাবে থাকায় এই অভিনেতার বেড সোর হয়। এর পরই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরিবার থেকে প্রস্তুতি নেওয়া হয় অপারেশনেরও। তবে তা আর করা হলো না। এর আগেই দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করেন এই অভিনেতা।

প্রবীর মিত্র বড় ছেলে মিঠুন ও মেজো ছেলে নিপুণের কাছে রাজধানীর ধানমন্ডির ৮ নম্বর রোডের একটি বাসায় থাকতেন। জীবনের শেষ সময়টা সেখানেই একটি ঘরেই সময় কাটে প্রবীর মিত্রের। মৃত্যুর আগে দীর্ঘ চার বছর এ বাসায় ছিলেন প্রবীর মিত্র।

জীবনের শেষ সময়ে এসে কাউকে আর এক নজর দেখারও আগ্রহ প্রকাশ করেননি এই অভিনেতা।

মিঠুন জানান, তার বড় বোন ফেরদৌস পারভীন প্রায়ই তাদের বাসায় আসতেন বাবাকে দেখতে। সবাই মিলে বাবাকে একটু আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা করতেন। তিনি আরও জানান, তার মা নাজমুন্নাহার মারা গেছেন ২০০০ সালে। বলে রাখা ভালো, নাজমুন্নাহারকে ভালোবেসে বিয়ের জন্য ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন প্রবীর মিত্র।

মিঠুনের ছোট ভাই আকাশ ২০১২ সালে মারা গেছেন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে একজন অভিনয়শিল্পীর অভিনয়ের স্থান থেকে ধীরে ধীরে নিজেদের সরিয়ে নিতে হয়, যেন তারই প্রমাণ বহন করছিলেন প্রবীর মিত্র। যে কারণে প্রবীর মিত্রের মতো একজন গুণী শিল্পী ‘বৃদ্ধাশ্রম’ নামক একটি চলচ্চিত্রেই সর্বশেষ অভিনয় করেন। শুধু সিনেমাপ্রেমী দর্শকের কাছেই নয় প্রবীর মিত্রের সহকর্মীদের কাছেও তিনি ভীষণ প্রিয় ছিলেন।

কিন্তু তেমন কেউই তার খোঁজ রাখতেন না। সবসময়ই সাদাসিধে জীবন পছন্দ ছিল তার। যে কারণে উচ্চাভিলাষ তাকে কখনোই পেয়ে বসেনি। জীবনের মতো করেই জীবন চলে গেছে। জীবনের নিয়মে জীবন চলে যাচ্ছিল। বয়স বাড়ছিল, তাও মেনে নিয়েছিলেন। আর তাই সব মেনে নিয়েই চলচ্চিত্র থেকে অনেকটা দূরেও চলে গিয়েছিলেন তিনি।

বেলাল আহমেদ পরিচালিত ‘নয়নের আলো’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন প্রবীর মিত্র। প্রবীর মিত্রের ভাষায় তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে রিমার্কেবল ছবি ‘নয়নের আলো’। সুমিতা দেবী এই ছবিতে প্রবীর মিত্রের অভিনয় দেখে বলেছিলেন, ‘তুমি যদি এ ছবিতে অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার না পাও, তাহলে অভিনয় ছেড়ে, এই দেশ ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যেও।’ কিন্তু জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার না মিললেও প্রবীর মিত্র তার দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে, ভালোবাসার জায়গা থেকে অভিনয়ই করে গেলেন আজীবন।

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার সে ছবিতে না পেলেও পরে তিনি মহিউদ্দিন পরিচালিত ‘বড় ভালো লোক ছিল’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য পেয়েছিলেন।

প্রবীর মিত্রের চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে এইচ আকবর পরিচালিত ‘জলছবি’ ছবিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে। মূলত ছবিতে কাজের ব্যাপারে তার বন্ধু এটিএম শামসুজ্জামান তাকে সহযোগিতা করেছিলেন। ‘জলছবি’র পর নায়ক হিসেবে প্রবীর মিত্র ‘চাবুক’, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, জালিয়াত’, ‘তীর ভাঙ্গা ঢেউ’, ‘বড় ভালো লোক ছিল’, ‘রামের সুমতি’, ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’সহ আরও বেশ কিছু ছবিতে অভিনয় করেছেন। তবে এইচ আকবর পরিচালিত ‘জীবন তৃষ্ণা’ ছবিতে শিল্পী আব্দুল জব্বারের গাওয়া ‘এ আঁধার কখনো যাবে না মুছে আমার পৃথিবী থেকে’ গানটি তাকে ব্যাপকভাবে পরিচিতি এনে দেয়।

এরপর আরও বহু চলচ্চিত্রে তিনি অনবদ্য অভিনয় করেছেন। ভাগ্যে জুটেনি আর কোনো রাষ্ট্রীয় সম্মাননা। তবে চলচ্চিত্রে ‘আজীবন সম্মাননা’ পেয়েছেন তিনি ২০১৮ সালে। আরও পেয়েছেন ‘প্রযোজক সমিতি অ্যাওয়ার্ড’, ‘জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কার’, ‘বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট সম্মাননা’, ‘মাদার তেরেসা স্মৃতি পদক-২০১৭’, ‘বাবিসাস সম্মাননা ২০০৮ ও ২০১০’, ‘এজেএফবি স্টার অ্যাওয়ার্ড’, ‘জাগো বাংলা সম্মাননা’, ‘আমরা কুড়ি সম্মাননা’, ‘ মহানগরী অ্যাওয়ার্ড’, ‘দর্শক ফোরাম অ্যাওয়ার্ড’, ‘ঢাকা কালচারাল রিপোর্টার্স ইউনিটি অ্যাওয়ার্ড’সহ আরও বহু সম্মাননা।

প্রবীর মিত্রের দুই বোন, একজন সরস্বতী বসূ অন্যজন রমা সরকার। ছোট ভাই সুবীর কুমার মিত্র। রাজধানীর তাঁতীবাজারের হরিপ্রসন্ন মিত্র রোড প্রবীর মিত্ররই দাদার নামে। প্রবীর মিত্রের বাবা গোপেন্দ্র নারায়ণ মিত্র এবং মা অমিয় বালা মিত্র। নায়ক হিসেবে প্রবীর মিত্রের প্রথম চলচ্চিত্র ছিল জহির রায়হানের শেষ সহকারী শেখ নজরুল ও ইলতুত মিস পরিচালিত ‘চাবুক’। এতে প্রবীর মিত্রের নায়িকা ছিলেন কবরী। অভিনয়ের পথচলায় বহু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। অনেক প্রযোজক-পরিচালকের কাছে টাকা পাওনাও ছিল তার। তবে জীবনের শেষভাগে সব হিসাব নিজের মতো করে চুকিয়ে নিয়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করলেন এই কিংবদন্তি। রেখে গেলেন শুধুই স্মৃতি আর স্মৃতি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিনা খরচে বিয়ে-হানিমুনের সুযোগ, যা করতে হবে

ডাকসুর রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি

'রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে আ.লীগের প্রেতাত্মারা এখনো বহাল'

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা শুরু, যা জানা যাচ্ছে

অ্যাম্বুলেন্স রেখে ছেলের গাড়িতে চড়ে হাসপাতালে গেলেন খালেদা জিয়া

লিফলেটে শেখ হাসিনার বাণী, ৩ কর্মকর্তার শাস্তি

ভিন্ন নারীকে মেজর ডালিমের স্ত্রী দাবি

বরিশালে বিএনপির দুই নেতার বাড়িতে হামলা

বিজিবির আপত্তিতে শূন্যরেখা থেকে স্থাপনা সরিয়ে নিল বিএসএফ

অছাত্রদের দিয়ে জাবি ছাত্রদলের কমিটি

১০

কিশোরীর শ্লীলতাহানি, ৩ লাখ টাকায় ধামাচাপার চেষ্টা

১১

ঢাবির আবাসন সুবিধা পেতে আগ্রহী ছাত্রীদের আবেদনের আহ্বান

১২

হাসিনাকে ফেরাতে ভারতকে দেওয়া চিঠির জবাব এখনো আসেনি : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

১৩

অবৈধভাবে পদ্মায় বালু উত্তোলনের দায়ে ৯ জনের কারাদণ্ড

১৪

ছাত্রলীগের পদ নেওয়াকে কৌশল বললেন ছাত্রদল নেতা

১৫

সার না দেওয়ায় কৃষি কর্মকর্তা অবরুদ্ধ

১৬

ইউসিটিসিতে সিন্ডিকেট মিটিং অনুষ্ঠিত

১৭

রাফির বিরুদ্ধে অভিযোগ, পাল্টা প্রতিক্রিয়া হাসনাত আব্দুল্লাহর

১৮

প্যাট্রিক কেনেডির অধীনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা শুরু 

১৯

গোপনে স্বামীর ফোনে নজরদারি করে বিপাকে স্ত্রী

২০
X