অর্থ সংকটে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) দেনা বাড়ছেই। বেসরকারি খাতের বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করতে না পারায় বাড়ছে জরিমানাও। এর আগে ডলার সংকটের কারণে বেসরকারি খাতের জ্বালানির বিল পরিশোধ করতে পারছিল না পিডিবি। তবে গত মাস থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার ছাড় করছে। ফলে জ্বালানি বিল পরিশোধ করতে শুরু করেছে একমাত্র ক্রেতা সরকারি সংস্থাটি।
পিডিবির কর্মকর্তারা জানান, গত অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যয়বৃদ্ধিতে বেড়েছে ভর্তুকি। কিন্তু সে অনুযায়ী অর্থ মন্ত্রণালয় নিয়মিতভাবে ভর্তুকির টাকা ছাড় করছে না। ফলে অর্থ সংকটে পড়ছে পিডিবি। সেই কারণে বেসরকারি খাতের ভাড়াভিত্তিক (রেন্টাল) ও স্বাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর (আইপিপি-ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রোডিউসার) বিল নিয়মিত পরিশোধ করা যাচ্ছে না।
পিডিবির সদস্য (অর্থ) সেখ আকতার হোসেন কালবেলাকে বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ বেড়েছে। কিন্তু গ্রাহকদের দেওয়া হচ্ছে কম দামে। এখানে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। ভর্তুকির টাকা সরকার দেয়। সেটি না পেলে সমস্যা হবে, এটিই স্বাভাবিক।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে পিডিবির মোট বকেয়া বিলের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে সময় বেড়েছে চার মাস ২৫ দিন। এই বিলের বিপরীতে জরিমানা দিতে হবে ১ হাজার ৮২১ কোটি টাকা। জরিমানাসহ গত জুন শেষে পিডিবির বিদ্যুৎ ক্রয়ের বিপরীতে মোট বকেয়া ২৪ হাজার ৬২১ কোটি টাকা। বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি অনুযায়ী, কোনো কেন্দ্র বিল জমা দেওয়ার দিন থেকে পরবর্তী ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে তা পরিশোধের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আর এই সময়ের মধ্যে বিল পরিশোধে ব্যর্থ হলে ব্যাংক আমানতের সুদহারের সঙ্গে ২ শতাংশ যোগ করে জরিমানা দিতে হয়। বর্তমানে ব্যাংক আমানতে সুদহার ৬ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছর বকেয়া বিলের পরিমাণ ছিল প্রায় ১০ হাজার ৮৭৮ কোটি টাকা। আর ওই বছর মোট বিলের বিপরীতে পিডিবিকে জরিমানা গুনতে হয়েছে ৮৭০ কোটি টাকা। জরিমানাসহ মোট বকেয়া ছিল ১১ হাজার ৭৪৮ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরের বকেয়া বিলের পরিমাণ আগের অর্থবছরের তুলনায় কিছুটা কম ছিল। এই অর্থবছর মোট বকেয়া বিলের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৬৫ কোটি টাকা। আর জরিমানাসহ বকেয়া ছিল মোট ৪ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছর বকেয়া ছিল ৩ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকার বিল। আর জরিমানাসহ মোট বকেয়ার অঙ্ক ৩ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছর বকেয়া ছিল ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। আর জরিমানাসহ মোট বকেয়া ছিল ২ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জ্বালানি বিল পরিশোধে সরকার ডলার ছাড় করলেও বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করতে হলে ভর্তুকির টাকা দরকার। সরকার এই টাকা ছাড় করছে না। তাই মোট বিলের বিপরীতে জরিমানাও বাড়ছে। তবে এক কর্মকর্তা জানান, টাকা না থাকায় এখন জরিমানা পরিশোধ করা হচ্ছে। তবে সীমিত আকারে। শুধু জরিমানা পরিশোধে কোনো লাভ নেই। মূল বিল পরিশোধ করতে হবে। এটি না হলে আবার জরিমানা যোগ হবে এবং তা পরিশোধ করতে হবে। এ কারণে এখন দ্রুত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা জরুরি।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২৩ অনুযায়ী, বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মালিকানার ভিত্তিতে বেসরকারি খাত এগিয়ে। সরকারের হিসাব অনুযায়ী, মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার মধ্যে বেসরকারি খাতে উৎপাদন হচ্ছে ৪২ দশমিক ২৬ শতাংশ। এ ছাড়া সরকারি খাতে উৎপাদন হচ্ছে ৩৯ দশমিক ৮৯ এবং সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে ৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ। আর ১০ দশমিক ২ শতাংশ আমদানি করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন