মাহমুদুল হাসান
প্রকাশ : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:১৮ এএম
আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:২১ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

বছরজুড়েই তাড়া করেছে ডেঙ্গু

ডেঙ্গু সংক্রমণ
বছরজুড়েই তাড়া করেছে ডেঙ্গু

বর্ষা মৌসুমে উৎপাত ছিল এডিস মশার। সময়ের পরিবর্তনে সেই মশার উপদ্রব এখন বছরজুড়েই। বর্ষা পেরিয়ে শীতের আগমনেও আতঙ্ক কমেনি ডেঙ্গুর। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সংখ্যক লোক শনাক্ত ও মৃত্যুর তথ্য দিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত সপ্তাহে প্রচণ্ড জ্বরাক্রান্ত হন রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের বাসিন্দা সজল (২৭)। চরের মুন্সিহাটি এলাকার স্থানীয় একটি গার্মেন্টসে কাজ করেন। জ্বরের পর চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। এরপর পরীক্ষায় ধরা পড়ে ডেঙ্গু। তারপর থেকে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সুস্থ হয়ে এখন বাড়ি ফিরে গেলেও শারীরিকভাবে প্রচণ্ড দুর্বল। তাই কাজে যোগ দিতে পারছেন না। এভাবে প্রতিনিয়ত মানুষ ছোট্ট মশার আক্রমণে অসুস্থ হচ্ছে। এতে শারীরিক ক্ষতির সঙ্গে পরিবারে যুক্ত হচ্ছে আর্থিক ক্ষতিও। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের জন্য চিকিৎসা ব্যয় বড় বোঝা। মৌসুমি জ্বর মনে করে অনেকেই শুরুতে ডেঙ্গুতে জোর দেন না। পরে যখন নানা ধরনের জটিলতা শুরু হয়, তখন তারা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। মাঝখানের এই সময়েই রোগীর বড় ক্ষতি হয়। ফলে মৃত্যুও বেশি হচ্ছে বলে মত চিকিৎসকদের। বিশেষজ্ঞরা জানান, ডেঙ্গুর চারটি ধরন (ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩ ও ডেন-৪) রয়েছে। গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট ডেঙ্গু পজিটিভ ৮৯টি নমুনা বিশ্লেষণ করে প্রায় ৭০ শতাংশ ডেন-২-এর উপস্থিতি পেয়েছে।

গতকাল নতুন করে আরও তিনজনের মৃত্যু হয় ডেঙ্গুতে। একই সময়ে আরও ১৮৬ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। এ নিয়ে চলতি মৌসুমে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৯৫ হাজার ৭০ জনে। তার মধ্যে অধিকাংশ রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও মৃত্যু হয়েছে ৫১৭ জনের। গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন। তখন মৃত্যু হয় ১ হাজার ৭০৫ জনের, যা দেশের ইতিহাসে এক বছরে সর্বোচ্চ। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ডেঙ্গু এখন আর বর্ষা মৌসুমের রোগ নয়, সারা বছরের ভোগান্তি। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন, অপরিকল্পিত অবকাঠামো উন্নয়ন আর অবহেলায় ঘরের কাছেই এডিসের জন্ম হচ্ছে।

এদিকে সম্প্রতি দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি জানতে জরিপ (মনসুন এডিস সার্ভে-২০২৪) শেষ করেছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। সেখানে দেখা যায়, রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের ৫৬টি ওয়ার্ডে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার লার্ভার ঘনত্বের পরিমাণ নির্দিষ্ট মানদণ্ডের চেয়ে বেশি। এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপের সূচক ব্রুটো ইনডেক্স নামে পরিচিত। স্বীকৃত এই মানদণ্ডে লার্ভার ঘনত্ব ২০ শতাংশের বেশি হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে বলে মনে করা হয়।

জরিপের ফলে দেখা গেছে, রাজধানীর দুই সিটির ৯৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৫৬টি ওয়ার্ডেই ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি। এর অর্থ হচ্ছে, এসব এলাকার ১০০টির মধ্যে ২০টির বেশি পাত্রে মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। এই এলাকাগুলো ডেঙ্গুর উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটির ঝুঁকিতে থাকা ওয়ার্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে ৩৮, ৯, ৩০, ৭, ৮, ১৮, ২৫, ২৮, ৩৬, ৩৭, ১ এবং ১৯ নম্বর ওয়ার্ড। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটির ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে ৪৭, ৫৩, ৬১, ৫০, ২, ১৬, ২৬, ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড। এর বাইরে বাকি ওয়ার্ডগুলোর বিষয়ে স্পষ্ট করেনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। জরিপের ফল উপস্থাপন করে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন ডেঙ্গু রোগের বাহকের কীটতাত্ত্বিক জরিপের ফল উপস্থাপন করে জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের মেয়াদ অনেক বেশি। অন্যান্য বছরে জুন-অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গু থাকলেও এ বছর ডিসেম্বর মাস শুরু হলেও এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বিদ্যমান। এ প্রাদুর্ভাব মোকাবিলার লক্ষ্যে ঢাকার দুই সিটির মধ্যে একটি জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এই জরিপে ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৭৫টি ওয়ার্ডের ভেতরে ৫৯টি তে এবং ঢাকা উত্তর সিটির ৫৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪০টিতে অর্থাৎ দুটি সিটির মোট ৯৯টি ওয়ার্ডের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন কালবেলাকে বলেন, দেশের ডেঙ্গুর কীটতাত্ত্বিক যে জরিপ উপস্থাপন করা হয়, সেটা এখনো রাজধানী কেন্দ্রিক। অথচ ডেঙ্গু সারা দেশে এখন সমানভাবে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। ডেঙ্গুর প্রকৃত চিত্র জানতে হলে এই জরিপ কার্যক্রম সারা দেশে পরিচালনা করা দরকার। নয়তো অনুমাননির্ভর উপায়ে রোগটি মোকাবিলা করতে হবে।

এক দিনে আরও তিনজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৮৬: স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নতুন করে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা তিনজনই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে প্রাণ হারালো ৫১৭ জন। একই সময়ে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে আরও ১৮৬ জন। নতুন ভর্তি রোগীদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে চার, চট্টগ্রাম বিভাগে পাঁচ, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪০, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৪২, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৬৭, খুলনা বিভাগে ১৭, ময়মনসিংহে ১০ ও সিলেট বিভাগে একজন রয়েছে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৯৫ হাজার ৭০ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। যার মধ্যে ৬৩ দশমিক ১০ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৬ দশমিক ৯০ শতাংশ নারী। একই সময়ে মৃত ৫১৭ জনের মধ্যে ৫১ দশমিক ৬০ শতাংশ নারী এবং ৪৮ দশমিক ৪০ শতাংশ পুরুষ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

স্ত্রীকে উপহার দিতে পৌরসভার ‘লাভ চিহ্ন’ চুরি, অতঃপর...

বিশ্বমানের সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম এখন ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে

সীমান্তবর্তী নদীতে পাম্প বসাতে দিচ্ছে না বিএসএফ

বিদেশি নাগরিকদের বৈধতা অর্জনের সময়সীমা বেঁধে দিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দেশকে প্রসারিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে ভারত : আলতাফ চৌধুরী

সচিব নিবাসেও আগুন

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফখরুলের বিবৃতি

‘আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে জনগণ অন্যতম সহায়ক শক্তি’

নিহত ৫ ফিলিস্তিনি সাংবাদিককে ‘জঙ্গি’ দাবি ইসরায়েলের

সচিবালয়ের পোড়া ভবন থেকে মিলল মৃত কুকুর

১০

পিপলস্ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত

১১

বড়দিন উদযাপনের ছবি পোস্ট করে সমালোচনার মুখে সালাহ

১২

ঢাকা কলেজে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ

১৩

জবিতে তৃতীয় দিনের মতো ছাত্রদলের পদবঞ্চিতদের বিক্ষোভ

১৪

কুর্দি যোদ্ধাদের শেষ পরিণতির হুঁশিয়ারি এরদোয়ানের

১৫

দেশে ফিরেই মিজানুর রহমান আজহারীর স্ট্যাটাস

১৬

‘সাড়ে ১৫ বছর শাসনকারীরা দেশকে না সাজিয়ে নিজেদের সাজিয়েছে’

১৭

‘১৫ বছরে চট্টগ্রামে যত উন্নয়ন হয়েছে এখন সব ক্ষতির কারণ’

১৮

বিমানের সিটের নিচে ২ কেজি সোনা

১৯

সিরিয়ায় আসাদপন্থিদের হামলায় ১৪ নিরাপত্তাকর্মী নিহত

২০
X