দেশে এইডস আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে অস্বাভাবিক হরে। গত এক বছরে দেশে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৪৩৮ এইডস রোগী। এ সংখ্যা বিগত যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। একই সময়ে এতে মৃত্যু হয়েছে ১৯৫ জনের। আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৭৭ শতাংশ, নারী ২২ শতাংশ, হিজড়া ১ শতাংশ। মৃতদের একটি বড় অংশের বয়স ৬০ বা তার বেশি। এমন পরিস্থিতিতে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ রোববার পালিত হচ্ছে বিশ্ব এইডস দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘অধিকার নিশ্চিত হলে; এইচআইভি/এইডস যাবে চলে।’ প্রতি বছরের ১ ডিসেম্বর পালিত হয় এ দিবস।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এসটিডি বা এইডস শাখার তথ্যমতে, নতুনভাবে আক্রান্ত ও মৃতদের মধ্যে ৬৩ শতাংশের বয়স ২৫ থেকে ৪৯ বছর এবং ২১ শতাংশের বয়স ২০ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে। নতুনভাবে আক্রান্তের মধ্যে ১০ শতাংশ রোহিঙ্গা, ১ শতাংশ নারী যৌনকর্মী ও ১ শতাংশ হিজড়া। নতুনভাবে সংক্রমিতদের মধ্যে ৫৫ শতাংশ বিবাহিত, ৪০ শতাংশ অবিবাহিত, ৫ শতাংশ বিধবা বা তালাকপ্রাপ্ত। দেশের আট বিভাগে নতুনভাবে সংক্রমিতদের সংখ্যা ঢাকায় ৪০৬ জন, চট্টগ্রামে ৩২৬, খুলনায় ১৫৪, রাজশাহীতে ১৪৭ এবং অন্যান্য বিভাগে ৪৪ থেকে ৮৬ জন।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডাইরেক্টর টিবিএল ও এইডস বা এসটিডি প্রোগ্রাম ডা. মাহফুজার রহমান সরকার বলেন, আমাদের পরীক্ষা করার সক্ষমতা বেড়েছে। তাই পরীক্ষা বেশি হওয়ায় শনাক্তও হয়েছে বেশি। তাই সংক্রমণ বেড়েছে, সেটা বলা যাবে না। তা ছাড়া আক্রান্তদের চিকিৎসার আওতায় আনা হয়েছে। তাই রোগটি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা কম।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সমকামী জনগোষ্ঠীর মধ্যে এইডসে আক্রান্তের হার অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে।
চলতি বছরের এ পর্যন্ত সময়ে মোট শনাক্তের ৪০ শতাংশের বেশিই সমকামী ও হিজড়া। এ বছরে পরীক্ষা করা হয়েছে ১৫ লাখের বেশি। মূলত ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী, টিবি রোগী, এএনসি চেক আপ, কারাগারের বন্দি, সম্ভাব্য মধ্যপ্রাচ্যগামীদের এই পরীক্ষা করা হয়।
বিভাগ হিসেবে চট্টগ্রামে সর্বোচ্চসংখ্যক এইচআইভি রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। ২০২৪-এ প্রায় ১৫০ জন নতুন করে এইচআইভি আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে। আর প্রায় ১ হাজার ২০০ রোহিঙ্গা এইডসের চিকিৎসা নিচ্ছেন। উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কক্সবাজার জেলা হাসপাতাল, কক্সবাজার কারাগার ও আইওএম ক্লিনিকের মাধ্যমে তারা এ চিকিৎসা পাচ্ছেন।
এইডস বা এসটিডি প্রোগ্রামের তথ্যমতে, বাংলাদেশে এইডসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১৬ হাজার ৬৯। চার বছর ধরে নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা পর্যায়ক্রমে বাড়ছে। ১৯৮৯ থেকে (দেশে যখন প্রথম এইডস রোগী শনাক্ত হয়) ২০২০ সাল পর্যন্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ৩২, ২০২১ সালে ৮ হাজার ৭৬১, ২০২২ সালে ৯ হাজার ৭০৮ জন। ২০২৩ সালে এই সংখ্যা পৌঁছে ১০ হাজার ৯৮৪ জনে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত এক বছরে এইচআইভি সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হয়েছে পুরুষ যৌনকর্মী, সমকামী ও হিজড়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে। এরপর আছেন শিরায় মাদক গ্রহণকারী ও নারী যৌনকর্মী। একসময় এই জনগোষ্ঠীর মধ্যেই এইচআইভি বেশি হতো। এখন তাদের মধ্যে সংক্রমণ কমে আসছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের অনেক দেশেই শিরায় মাদক গ্রহণকারী, যৌনকর্মী, হিজড়া, সমকামী জনগোষ্ঠীর মধ্যে এইচআইভি শনাক্তের প্রবণতা বেশি। কারণ তারাই বেশিরভাগ সময় বৈষম্যের শিকার হন। এই বৈষম্য স্বাস্থ্য সেবায়ও প্রকট। কুসংস্কার, ভয় ও লজ্জার কারণে যেন এই ব্যক্তিরা চিকিৎসা সেবা থেকে হারিয়ে না যান, সেদিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। তা না হলে তাদের মাধ্যমে নতুন ব্যক্তি সংক্রমিত হতে পারে।