ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছেন, রাজধানীর যানজট নিরসন করাই আমার অগ্রাধিকার। পাশাপাশি ছিনতাইসহ যে কোনো ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করে নগরবাসীকে সর্বোচ্চ সেবা দেবে পুলিশ। ডিএমপি কমিশনার মঙ্গলবার তার নিজ কার্যালয়ে কালবেলাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন।
কমিশনার বলেন, রাজধানী ঢাকা মহানগরীর বড় সমস্যা যানজট। যানজটের দুর্ভোগ এড়াতে ইতোমধ্যে ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয় সভা করেছি। করণীয় নির্ধারণে অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করে তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, নগরবাসীকে সর্বোচ্চ নিরাপদে রাখার জন্য টিম ডিএমপির সব সদস্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ডিএমপির সব সদস্যকে আরও আন্তরিকতা ও পেশাদারিত্ব নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সবাইকে একটি টিম হিসেবে কাজ করতে হবে। টিমের যিনি নেতা হবেন, তার সঙ্গে ওই টিমের সব সদস্যের একটি আত্মিক সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। যে কোনো প্রয়োজনে একজন সদস্য আরেকজনের পাশে দাঁড়াবে। পরস্পরের সঙ্গে সমন্বয় করে নগরবাসীকে সর্বোচ্চ সেবা দেবে।
তিনি আরও বলেন, পুলিশ হচ্ছে সরকারের সবচেয়ে দৃশ্যমান সংস্থা। একটি স্বার্থান্বেষী মহল তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য পুলিশকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছিল। জনগণ আমাদের শত্রু নয়, আমরা তাদের সেবক। আমরা জনগণের বিরুদ্ধে যেতে চাই না। আমরা এদেশের মানুষকে নিয়ে একত্রে মিলেমিশে কাজ করতে চাই।
এর আগে কমিশনার বলেন, কোনো অপরাধ আমলযোগ্য হলে অবশ্যই মামলা নিতে হবে। মামলা না নিলে সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে এক মিনিটের মধ্যেই সাসপেন্ড করা হবে। রাজধানীতে কোনো ধরনের চাঁদাবাজি করতে দেওয়া হবে না। গরিবদের কষ্টার্জিত অর্থ কেউ নিতে পারবে না। স্থানীয় লোকাল মাস্তানরা চাঁদাবাজির টাকা ভাগ করে খায়। যদি পুলিশের কোনো লোক চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত থাকে, তাহলে তার আর রক্ষা নেই। গরিবের কষ্টার্জিত অর্থ কেউ নিলেই ব্যবস্থা। আমি সাবধান করে দিচ্ছি, চাঁদাবাজির টাকায় এসি ঘরে ঘুমানোর দিন শেষ।’
গত ২০ নভেম্বর ডিএমপির ৩৮তম কমিশনার হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান শেখ মো. সাজ্জাত আলী। পরদিন ২১ নভেম্বর তিনি দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। পুলিশ বাহিনীতে মেধাবী, চৌকস, দক্ষ, সৎ ও আপসহীন কর্মকর্তা হিসেবে শেখ মো. সাজ্জাত আলীর সুনাম রয়েছে। চৌকস এই কর্মকর্তা ১৯৮৬ সালের ২১ জানুয়ারি সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে তিনি ঝিনাইদহ, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ও এসবিতে দায়িত্ব পালন করেন। উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) হিসেবে তিনি ডিএমপিতে ও পুলিশ সুপার (এসপি) হিসেবে নড়াইল, বাগেরহাট ও লক্ষ্মীপুর জেলায় সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ডিআইজি পদে পদোন্নতি লাভ করে তিনি হাইওয়ে পুলিশ, চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ও ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজির দায়িত্ব সাফল্যের স্বাক্ষর রাখেন। ২০১৬ সালে ৩ নভেম্বর তাকে বাধ্যতামূলক অবসর প্রদানের সময় তিনি পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর তিনি সরকার কর্তৃক গঠিত পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করেন এবং দেশে-বিদেশে পেশাগত নানা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।