অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন, স্বচ্ছ ভোটার তালিকা, নারী আসন বাড়িয়ে সরাসরি ভোট এবং নির্বাচনের সময় গণমাধ্যমের ভূমিকা পালনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সুপারিশ করেছেন সংবাদপত্রের সম্পাদকরা। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সঙ্গে এক বৈঠকে তারা এসব সুপারিশ করেন।
সংস্কার কমিশনপ্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদারের সভাপতিত্বে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে এ সভায় ১৪টি পত্রিকার সম্পাদক ও প্রতিনিধিরা মতামত তুলে ধরেন। এ সময় কমিশনের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে ড. বদিউল আলম মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, সদ্য সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে (সিইসি) ডেকে বিতর্কিত নির্বাচন করার কারণ জানতে চাইতে পারে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। একই সঙ্গে নির্বাচনী অপরাধগুলো যেন তাদের জন্য প্রযোজ্য হয়, সেই সুপারিশ করার কথাও ভাবছেন তারা।
বৈঠক শেষে আজকের পত্রিকার সম্পাদক গোলাম রহমান সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে গণমাধ্যমকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে, প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার জন্য বলা হয়েছে। তিনি বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের জন্য বলা হয়েছে। বিশেষ করে নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং স্বাধীনভাবে নির্বাচন পরিচালনা করার দায়বদ্ধতা ঘোষণা করা হয়েছে। এখানে দলীয় সরকারের অধীনে অতীতে নির্বাচনকে যেভাবে প্রভাবিত হতে দেখেছি, সেই প্রভাবিত করার যেন কোনো সুযোগ তৈরি না হয়।
প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক ও কবি সোহরাব হাসান বলেন, যিনি যে এলাকার বাসিন্দা তিনি সে এলাকার প্রতিনিধিত্ব করবেন। ঢাকায় থেকে খাগড়াছড়ি বা দিনাজপুরে প্রতিনিধিত্ব করবেন—এটি ন্যায়সংগত নয়। এতে সেই এলাকার ভোটাররা বঞ্চিত হন। এ ছাড়া নির্বাচনে টাকার খেলা বন্ধ করতে হবে। রাষ্ট্রীয় খরচে নির্বাচনী প্রচার করতে হবে। আর নির্বাচন অবশ্যই অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে হবে। সব শ্রেণি-পেশা-ধর্ম-বর্ণ-জাতি-গোষ্ঠী-দলসহ সব নাগরিক যেন তার পছন্দের প্রার্থী বাছাই করতে পারেন।
সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেন, আমি দুটি পরামর্শ দিয়েছি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার এলে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনও তাদের অধীনে হবে কি না। তারা বলেছেন, এটি নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। আমি মনে করি, স্থানীয় সরকার নির্বাচনও রাজনৈতিক সরকারের অধীনে না হয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করা যেতে পারে। এ ছাড়া ভোটার তালিকার পরিবর্তে নির্বাচনে এনআইডি কার্ড ব্যবহারের পরামর্শ দেন তিনি।
দ্য ডেইলি স্টার বাংলার সম্পাদক গোলাম মোর্তোজা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সংসদে নারী আসন বাড়িয়ে ১০০ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এ ছাড়া দলের ভেতরে গণতন্ত্র কায়েম করার আইন দরকার বলেও মনে করেন তিনি।
প্রতিদিনের বাংলাদেশের সম্পাদক মোস্তাফিজ শফি বলেন, সবার আগে তত্ত্বাবধায়ক পুনর্বহাল করতে পারলে দলীয় সরকারের অধীনে যে সমস্যা হয়, তার ৮০ শতাংশ থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব। এটা সবার আগে ভাবতে হবে। আরেকটি বিষয় হলো, নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন দিতে হবে।
এদিকে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কমিশনপ্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সাবেক তিন নির্বাচন কমিশন নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমরা আবার পর্যালোচনা করছি। নির্বাচনী অপরাধগুলো তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে। আর এটি যাতে ভবিষ্যতে না হয়, সেটা নিয়েও আমরা পর্যালোচনা করেছি।
গত তিন কমিশন কেন সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারেনি, আপনারা তাদের ডেকে জানতে চাইবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, উনারা কি আসবেন? আমার তো মনে হয় না। এর পরও আমরা বিবেচনায় নেব।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন প্রধান বলেন, নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন যেন জাতীয় নির্বাচনের আগে হয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার যেন থাকে, প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের উদ্যোগসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ সিনিয়র সাংবাদিকরা করেছেন। আমরা সন্তোষ প্রকাশ করছি। কেননা, আমরা যা ভাবছি সেসব বিষয়ই তারা বলেছেন। স্বাধীনভাবে কাজ করার জন্য যেমন বলেছেন, তেমনি গণমাধ্যম সঠিক দায়িত্ব পালন না করলে যেন শাস্তি ব্যবস্থা করা হয়, সেই সুপারিশও করেছেন তারা। এনআইডির ভিত্তিতে যাতে ভোটার তালিকা করা যায়, আমরা সেটাও বিবেচনা করছি। কেননা, এতে ভোটের আগের দিনও কেউ ভোটার হতে পারবেন। অনেক সুপারিশ আসছে—ব্যতিক্রমধর্মী এবং সাংঘর্ষিকও। আমরা সব পর্যালোচনা করে প্রস্তাব করব।