ইসলামী ব্যাংকের চট্টগ্রামের তিনটি শাখা থেকে ৩৩০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে প্রথম দফায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৩ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ওই কর্মকর্তাদের ২০ ও ২১ নভেম্বর দুদকে তলব করা হয়েছিল। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তাই দুদকের ডাকে সাড়া দেননি। এরপর একই দিন ওই ১৩ কর্মকর্তাসহ মোট ১৭ জনকে দ্বিতীয় দফায় তলব করে চিঠি পাঠান দুদকের উপপরিচালক মো. ইয়াছির আরাফাত। চিঠিতে আগামী ৮ ও ৯ নভেম্বর তাদের দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হয়ে বক্তব্য দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। দ্বিতীয় দফার তলবে হাজির না হলে ওই কর্মকর্তাদের কোনো বক্তব্য নেই ধরে নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে দুদকের অনুসন্ধানী দল।
অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংকের চট্টগ্রামের ৩টি শাখা থেকে ৩৩০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন। অনুসন্ধানে ওই ঋণ ছাড়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শক অফিসারদের দুদকে তলব করে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। গত ১১ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বরাবর তলবি চিঠি পাঠানো হয়। তবে দুদকের ডাকে সাড়া দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তাই দুদকে আসেননি, কিংবা অনুসন্ধানী টিমের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি। তারা তাদের কোনো প্রতিনিধিও পাঠাননি। তাই আমরা দ্বিতীয় দফায় চিঠি দিয়েছি। দ্বিতীয় দফায় তাদের আগামী ৭ ও ৮ ডিসেম্বর দুদকে হাজির হতে বলা হয়েছে।’
যে ১৭ জনকে দুদকে তলব করা হয়েছে তারা হলেন—বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের ব্যাংক পরিদর্শন শাখার উপপরিচালক মো. জুবাইর হোসেন, যুগ্ম পরিচালক সুনির্বান বড়ুয়া, উপপরিচালক খোরশেদুল আলম, উপপরিচালক দেবাশীষ বিশ্বাস, উপপরিচালক জিয়াউদ্দিন বাবলু, উপপরিচালক রুবেল চৌধুরী, যুগ্ম পরিচালক অনিক তালুকদার, অতিরিক্ত পরিচালক ছলিমা বেগম, যুগ্ম পরিচালক বেলাল হোসেন, যুগ্ম পরিচালক সৈয়দ মু. আরিফ-উন-নবী, অতিরিক্ত পরিচালক শংকর কন্তি ঘোষ, অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ও অতিরিক্ত পরিচালক মো. শোয়াইব চৌধুরী। এ ছাড়া তলব করা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক ও ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ-৬-এর সদস্য লেনিন আজাদ পলাশ, অতিরিক্ত পরিচালক ও একই পরিদর্শন দলের সদস্য মো. আব্দুর রউফ, অতিরিক্ত পরিচালক ও পরিদর্শন দলের দলনেতা মো. মঞ্জুর হোসেন খান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের পরিচালক ও ইসলামী ব্যাংকের অবজারভার মো. সরোয়ার হোসাইন।
দুদকে সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ডিসেম্বরে ইসলামী ব্যাংকের চট্টগ্রামের তিনটি শাখা থেকে তিনটি প্রতিষ্ঠানের নামে ৩ হাজার ৩০০ কোটি হাজার ঋণ ছাড় করা হয়। এর মধ্যে মধ্যে মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজের নামে ১ হাজার ৫৪ কোটি, ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সের নামে ১ হাজার ৮৪ কোটি এবং সেঞ্চুরি ফুড প্রোডাক্টসের নামে ১ হাজার ১১৯ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার গোলাম সরোয়ার চৌধুরী ও ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সের কর্ণধার গোলাম কিবরীয়া চৌধুরী আপন দুই ভাই। তারা বিতর্কিত ব্যবসায়ী গ্রুপ এস আলম গ্রুপের কর্ণধার মো. সাইফুল আলমের দূরসম্পর্কের ভাগিনা। এ ছাড়া সেঞ্চুরি ফুড প্রোডাক্টসের কর্ণধার আরিফুল ইসলাম চৌধুরী।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা দুদকের কোনো চিঠি পাননি। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের পরিচালক ও ইসলামী ব্যাংকের অবজারভার মো. সরোয়ার হোসাইন কালবেলাকে বলেন, ‘আমার এখনো দুদকের কোনো চিঠি পাইনি। তা ছাড়া আমাদের বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও কিছু জানানো হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আমাদের যেতে বললে আমরা যাব।’
একই অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ইসলামী ব্যাংকের ১৭ জনকে তলব: একই অভিযোগে ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও এস আলম গ্রুপের কর্ণধার মো. সাইফুল আলমের ছেলে আহসানুল আলমসহ ১৭ জনকে তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। এর মধ্যে আগামী ২৪ নভেম্বর সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটের মধ্যে ৯ জনকে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে। পরদিন ২৫ নভেম্বর সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টার মধ্যে বাকি ৮ জনকে তলব করা হয়েছে। গত ১১ নভেম্বর দুদকের উপপরিচালক ও অনুসন্ধান টিম লিডার ইয়াছির আরাফাত স্বাক্ষরিত তলবি চিঠি ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে ইসলামী ব্যাংকের এমডি ও সিইও মো. মনিরুল মওলা, এমডি ও সিইও মো. মাহবুব আলম, ইসি কমিটির সদস্য ও পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক সৈয়দ আবু আসাদ, ইসি কমিটির সদস্য ও পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক মো. কামরুল হাসান, এফসিএ, স্বতন্ত্র পরিচালক, পরিচালনা পর্ষদ মোহাম্মদ সোলাইমান, ইসি কমিটির সদস্য ও স্বতন্ত্র পরিচালক, পরিচালনা পর্ষদ প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সালেহ জহুর, পরিচালক মো. জয়নাল আবেদিন, ইসি কমিটির সদস্য আবু সাঈদ মোহাম্মদ কাশেম, জামাল মোস্তফা চৌধুরী, প্রফেসর ড. মো. নাজমুল হাসান, পরিচালক ড. মো. সিরাজুল করিম, পরিচালক প্রফেসর ড. কাজী শহিদুল আলম, ইসি কমিটির সদস্য প্রফেসর ড. মো. ফসিউল আলম, পরিচালক খুরশীদ উল আলম, ইসি কমিটির সদস্য ও পরিচালনা পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. তানভীর আহমদ, এফসিএ, এফসিএমএ চেয়ারম্যান ইসি কমিটি প্রফেসর ড. সেলিম উদ্দিন ও ইসি কমিটি ও ইসলামী ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান আহসানুল আলম।