বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্মদিন আজ। ১৯৬৫ সালের এ দিনে তার জন্ম। দীর্ঘ কণ্টকাকীর্ণ ও চ্যালেঞ্জমুখর পথ পেরিয়ে বহুবিচিত্র অভিজ্ঞতায় জীবনের ৫৯ বসন্ত পেরিয়ে তারেক রহমান আজ পৌঁছালেন নিজের ৬০তম জন্মদিনে। নতুন প্রেক্ষাপটের এই বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে জাতির সামনে হাজির হয়েছেন নতুন এক তারেক রহমান, যিনি প্রাধান্য দিচ্ছেন পরিবর্তনের রাজনীতিতে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন করে দেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে পরিবর্তনের ডাক দিয়ে চলেছেন তারেক রহমান। যে পরিবর্তনের সূচনা ঘটেছে তার নিজ দল থেকেই। এবার জন্মদিনে দেখালেন বদলে যাওয়ার আরও এক চমক। অন্যান্যবার তারেক রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে দলীয়ভাবে নানা কর্মসূচি পালিত হলেও এবার পরিস্থিতি একেবারেই আলাদা। এরই মধ্যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের জন্মদিনে কোনো কর্মসূচি পালন না করার কঠোর নির্দেশ দিয়েছে বিএনপি। এর আগে শেখ হাসিনার পতন ও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দলীয়ভাবে সব ধরনের শোভাযাত্রা ও পোস্টার, ব্যানার ও বিলবোর্ড লাগানো বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন তারেক। সর্বশেষ গতকাল এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, দয়া করে আমার নামের সঙ্গে কেউ দেশনায়ক বা রাষ্ট্রনায়কজাতীয় শব্দ ব্যবহার করবেন না। অর্থাৎ রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তনকে প্রাধান্য দিচ্ছেন তারেক রহমান।
শহীদ প্রেসিডেন্ট ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান। তার ডাক নাম পিনো। ১/১১ সরকারের সময়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান। চিকিৎসার সুবিধার্থে তারেক রহমান ২০০৮ সাল থেকে সপরিবারে লন্ডনে বাস করছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমান বীরউত্তমের হাতে গড়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির বগুড়া কমিটির সদস্য হিসেবে তার রাজনৈতিক জীবনের যাত্রা শুরু। মাত্র ২২ বছর বয়সে ১৯৮৮ সালে তারেক রহমান বগুড়া জেলার গাবতলী থানা বিএনপির সদস্য হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে মায়ের পাশাপাশি তারেক রহমানও দেশব্যাপী নির্বাচনী প্রচার চালান। ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ ষষ্ঠ কাউন্সিলে তারেক রহমান দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দি হওয়ার পর থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন তারেক রহমান।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক ও বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতারা বলছেন, তারেক রহমান এখন গতানুগতিক রাজনীতির বাইরে চিন্তা করছেন। রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তনকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ও লক্ষ্য সুসংহত করতে এরই মধ্যে এ-সংক্রান্ত বেশকিছু দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি। দেখছেন নতুন এক বাংলাদেশের স্বপ্ন; যেখানে থাকবে যেখানে গণতন্ত্রের সুষম চর্চা হবে, থাকবে মানুষের বাকস্বাধীনতা। এজন্য রাজনীতিতে যে গুণগত পরিবর্তন আনা দরকার, সে লক্ষ্যেই এগোচ্ছেন তারেক রহমান। এই পরিবর্তনের মূল ভিত্তি হবে রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারের ৩১ দফা রূপরেখা। আগামীতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেলে তারা সব দল-মতের লোকদের নিয়ে সম্প্রীতির ‘রেইনবো নেশন’ গড়ে তুলবেন। ২০২৩ সালে এই রূপরেখা ঘোষণার পর থেকেই সারা দেশে নতুনভাবে ব্র্যান্ডিং তথা ব্যাপক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছরে যা করেছে, বিএনপি তা করবে না। ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এগোতে চায়। ফলে মানুষ পছন্দ করে না কিংবা সমালোচনা হয়—এমন কর্মকাণ্ডকে গুরুত্ব দিচ্ছে না বিএনপি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ কালবেলাকে বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্মদিন পালনে কর্মসূচি না থাকার যে সিদ্ধান্ত, সেটি সঠিক এবং যৌক্তিক। এটি একটি পরিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। কেননা জন্মদিন যে কারও ব্যক্তিগত বিষয়। সুতরাং জনগণ সমালোচনা করে এমন কোনো কাজ না করাই শ্রেয়। তারেক রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে কোনো কর্মসূচি না থাকার সিদ্ধান্ত রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তনের একটি শুভ দিক।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আজকে তারেক রহমানের মানবসেবা কাজের মাধ্যমে নতুন ডাইমেনশনটা আমাদের প্রচলিত রাজনীতির বাইরে এক অনন্য জায়গায় নিয়ে গেছে। আর এ কাজের মূল পৌরহিত্য এবং অভিভাবকত্ব এটা করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। তিনি হলেন আমাদের নেতা তারেক রহমান। শুধু তাই নয়, দলের বাইরে নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের সহায়তার জন্য ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছেন তারেক রহমান। দিন নেই রাত নেই, দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে তিনি গরিব-অসহায় মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। কেননা মানবধর্মী সেবামূলক কাজের মধ্যে এক ধরনের আনন্দ রয়েছে।
জানা গেছে, এবার নিজের জন্মদিনে কোনো ধরনের কর্মসূচি পালন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারেক রহমান। গত ১১ নভেম্বর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় যে, আগামী ২০ নভেম্বর (আজ বুধবার) বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্মদিন। দেশব্যাপী বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সব ইউনিটের নেতাকর্মীদের বিশেষভাবে জানানো যাচ্ছে যে, ওইদিন তারেক রহমানের জন্মদিন নিয়ে কোনো অনুষ্ঠান পালিত হবে না। এই নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিকবিষয়ক সহ-সম্পাদক অধ্যাপক ড. শাকিরুল ইসলাম খান শাকিল কালবেলাকে বলেন, রাজনীতি করলেও তারেক রহমান একজন মানুষ। মানবকল্যাণে কাজ করা প্রত্যেক সামর্থ্যবান মানুষের কর্তব্য এবং সেটিই করছেন তারেক রহমান।
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান ভূঁইয়া মিল্টন বলেন, গণহত্যাকারী হাসিনার পলায়নের মধ্য দিয়ে ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসানের পথ উন্মুক্ত হয়েছে। জনপ্রত্যাশা পূরণের জন্য একটি নিরাপদ এবং মানবিক বাংলাদেশ গড়ার এখনই সময়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশবাসীর সেই কাঙ্ক্ষিত দেশ গড়তে প্রস্তুত।
বিএনপি চেয়ারপারসনের ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজরি কমিটির বিশেষ সহকারী বদরুল আলম চৌধুরী শিপলু কালবেলাকে বলেন, ৫ আগস্টের পর দেশের মানুষ এবং কূটনীতিকরা মনে করেন তারেক রহমানের কথাবার্তা, আচার-আচরণে তিনি অনেক ম্যাচিউরড। মানুষ মুগ্ধ হয়ে তার কথা শোনেন এবং তার ওপর বিশ্বাস রাখতে চান। একজন রাষ্ট্রনায়ক হওয়ার জন্য যেসব বৈশিষ্ট্য প্রয়োজন সেসব তারেক রহমান ধারণ করেন। আগামীতে দেশবাসী তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেছে নেবেন এতে সন্দেহ নেই।
আমরা বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন বলেন, শুধু রাজনীতি নিয়েই ব্যস্ত নন; অনেক মানবিক কাজ করে যাচ্ছেন তারেক রহমান। সম্প্রতি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা দেওয়া, নিহতদের পরিবারকে সহায়তা দেওয়াসহ অসংখ্য মানবিক কাজ করেছেন। তার এসব মানবিক কর্মযজ্ঞ অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে আমাদেরও অনুপ্রাণিত করে।