দেশে ১ কোটি ৩০ লাখের বেশি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। যাদের প্রায় অর্ধেকই নারী। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ১০০ জনের মধ্যে ২৬ জন নারী গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। যাদের ৬৫ শতাংশই পরবর্তী সময়ে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। এমনকি গর্ভের শিশুর ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এমন পরিস্থিতিতে আজ বৃহস্পতিবার বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘ডায়াবেটিস: সুস্বাস্থ্যই হোক আমাদের অঙ্গীকার’।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে নারী ও গর্ভস্থ শিশুদের টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান বলেন, বারডেম হাসপাতালসহ সারা দেশে স্থাপিত ৫৪টি ‘গর্ভধারণ-পূর্ব সেবাকেন্দ্র’ রয়েছে। এখান থেকে নারীরা স্বল্পমূল্যে গর্ভধারণ সংক্রান্ত সেবা নিতে পারেন। এখান থেকে পরীক্ষা করে জানা যাবে গর্ভাবস্থায় কোনো নারী ডায়াবেটিসে আক্রান্ত কি না। সব নারী এভাবে পরীক্ষা করালে গর্ভকালীন ও গর্ভ-পরবর্তী মা ও শিশুকে টাইপ-২ ডায়াবেটিস থেকে নিরাপদ রাখা সম্ভব হবে।
আইডিএফ ডায়াবেটিস এটলাস (২০২১) ডায়াবেটিসের বৈশ্বিক প্রভাব সম্পর্কে সর্বশেষ যে পরিসংখ্যান ও তথ্য দিয়েছে, তাতে দেখা যায়, বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫৪ কোটি মানুষ (প্রতি ১০ জনে ১ জন) ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ২০৩০ সালের মধ্যে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৬৪ কোটিতে এবং ২০৪৫ সালে ৭৮ কোটিতে পৌঁছানোর আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ২৭ কোটি মানুষ (প্রতি ২ জনে ১ জন) জানেন না, তারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। তাদের অধিকাংশই টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ৪ জনের মধ্যে ৩ জনেরও বেশি লোক নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে বাস করেন।
পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, প্রায় ২ কোটি নারী (প্রতি ৬ জনে ১ জন) গর্ভাবস্থায় হাইপারগ্লাইসেমিয়ায় (উচ্চ রক্তের গ্লুকোজ) আক্রান্ত হন। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ শহরাঞ্চলে বাস করেন। ১২ লাখের বেশি শিশু ও কিশোর (০-১৯ বছর) টাইপ-১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ২০২১ সালের এক হিসাবে দেখা যায়, বিশ্বে ৬৭ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসের কারণে মৃত্যুবরণ করেছে। ১০ থেকে ৪০ শতাংশ টাইপ-২ ডায়াবেটিক রোগী কিডনি জটিলতায় আক্রান্ত হতে পারেন।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এবার বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবসকে সামনে রেখে ২০৩০ সালের মধ্যে অর্জনের জন্য ৫টি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে—১. ৮০ শতাংশ ডায়াবেটিক রোগীকে রোগ নির্ণয়ের আওতায় আনা; ২. ৮০ শতাংশ রোগীর রক্ত শর্করা সুনিয়ন্ত্রণে রাখা; ৩. ৮০ শতাংশ রোগীর রক্তচাপ সুনিয়ন্ত্রণে রাখা; ৪. ৬০ শতাংশ রোগী, যাদের বয়স চল্লিশের বেশি, তাদের ‘স্টাটিন’ পাওয়া নিশ্চিত করা এবং ৫. শতাংশ টাইপ-১ ডায়াবেটিক রোগীর কাছে ইনসুলিন ও অন্যান্য সুবিধা পৌঁছে দেওয়া।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত ফাস্টফুড ও চর্বিযুক্ত খাবার খেলে, শারীরিক পরিশ্রম না করলে, নিয়মিত শরীরচর্চা না করলে, স্বাভাবিকের চেয়ে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বেড়ে গেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়। যাদের ডায়াবেটিস নেই, তারা যদি ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে জানতে পারেন এবং সেসব ঝুঁকি এড়িয়ে চলতে পারেন, তাহলে ডায়াবেটিস অনেকটাই প্রতিরোধ সম্ভব। আর কোনো কারণে ডায়াবেটিস হয়ে গেলে এর জটিলতা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, কিডনি ফেইলিওর, অন্ধত্ব ও অঙ্গচ্ছেদের মতো মারাত্মক এবং প্রাণঘাতী ঝুঁকি থাকে।
১৯৯১ সালে আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিক ফেডারেশন (আইডিএফ) ১৪ নভেম্বর তারিখটিকে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ২০০৭ সাল থেকে পৃথিবীজুড়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে। এটি জাতিসংঘের স্বীকৃত একটি দিবস। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির অনুরোধে বাংলাদেশ সরকার ১৪ নভেম্বর বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস পালনে জাতিসংঘে প্রস্তাব করে। ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর জাতিসংঘে এ প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।
এদিকে, দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি গতকাল বুধবার দুপুরে বারডেম হাসপাতালে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এ সময় জানানো হয়, দিবসটি উপলক্ষে আজ সকাল সাড়ে ৮টায় শাহবাগে রোডশো অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া সকাল ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বিনামূল্যে ডায়াবেটিস নির্ণয়, সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত হ্রাসকৃত মূল্যে হার্ট ক্যাম্প এবং সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি পালিত হবে।