ওসমান গণি জুয়েল, কালীগঞ্জ ও শামীম খান জনী, মহেশপুর (ঝিনাইদহ)
প্রকাশ : ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৩১ এএম
আপডেট : ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:৫৭ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ঝিনাইদহে দুর্ভোগ জমি ক্রেতা-বিক্রেতাদের

সাব-রেজিস্ট্রার সংকট
ঝিনাইদহে দুর্ভোগ জমি ক্রেতা-বিক্রেতাদের

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের সিংদাহ গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক ১০ শতাংশ জমি ক্রয় করেন; কিন্তু দেড় মাস সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ঘুরেও বিক্রেতার কাছ থেকে জমি রেজিস্ট্রি করিয়ে নিতে পারছেন না। কারণ, কালীগঞ্জে কোনো নিয়মিত সাব-রেজিস্ট্রার নেই। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা

সাব-রেজিস্ট্রার কাওসার আলীকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এ উপজেলার কর্মকর্তা হিসেবে। সপ্তাহে দুদিন কালীগঞ্জে দায়িত্ব পালনের কথা থাকলেও তিনি সেটি করেন না। গত চার মাসে ১১ দিন অফিস করেছেন কালীগঞ্জে। ফলে সংকটে পড়েছেন উপজেলার জমির ক্রেতা-বিক্রেতারা। একই সঙ্গে কাজ না থাকায় আর্থিক সংকটে পড়েছেন দলিল লেখকরাও।

শুধু কালীগঞ্জেই নয়, জেলার হরিণাকুণ্ডু ও মহেশপুর উপজেলাতেও নেই কোনো সাব-রেজিস্ট্রার। সাব-রেজিস্ট্রার সংকটে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এসব উপজেলার মানুষ। এই সংকটের কবে অবসান হবে, তাও জানেন না খোদ জেলার রেজিস্ট্রেশন বিভাগের অভিভাবক জেলা রেজিস্ট্রার সাব্বির আহমেদও।

তিনি কালবেলাকে বলেন, জেলার ছয় কেন্দ্রের মধ্যে শৈলকুপা, কোটচাঁদপুর ও সদর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে তিনজন কর্মকর্তা আছেন। এর মধ্যে দুজন নতুন। তিনটি কেন্দ্রে অফিসার সংকট রয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পার্শ্ববর্তী কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থেকে এক কর্মকর্তাকে কালীগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি নিয়মিত অফিস না করলে আমার করার কিছুই নেই।

সাব-রেজিস্ট্রার কাওসার আলী বলেন, কিছুদিন মেডিকেল লিভে ছিলাম। এখন নিয়মিত ছুটি নিয়েছি। ২২ অক্টোবরের পর অফিস করব। কালীগঞ্জে জমির ক্রেতা-বিক্রেতাদের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরা হলে তিনি জেলা রেজিস্ট্রারের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।

কালীগঞ্জ উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস সূত্রে জানা গেছে, কওসার আলী কালীগঞ্জের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে গত জুনে ৩ দিন, জুলাইয়ে ৩ দিন, আগস্টে ৩ দিন ও সেপ্টেম্বরে ২ দিন দায়িত্ব পালন করেছেন। অথচ সপ্তাহের মঙ্গল ও বুধবার তার কালীগঞ্জে অফিস করার কথা। সেখানে প্রতি সপ্তাহে গড়ে ১৫০টি দলিল সম্পাদন করা হয়।

দলিল লেখকরা জানিয়েছেন, কালীগঞ্জে প্রায় ৮০ জন দলিল লেখক রয়েছেন। তাদের সংসার চলে দলিল লিখে; কিন্তু নিয়মিত জমি রেজিস্ট্রি না হওয়ায় তারাও পড়েছেন বিপাকে। আট মাস ধরে চলছে এ অবস্থা। এর আগে সরকার নির্ধারিত ফি-র অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হতো। সেই টাকার ভাগ সাব-রেজিস্ট্রারও পেতেন। কিন্তু ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর অতিরিক্ত টাকা নেওয়া প্রায় বন্ধ। এ জন্য কাজে অনীহা সাব-রেজিস্ট্রারদের।

এক দলিল লেখক বলেন, সমস্যার মধ্যে আছি। জমি রেজিস্ট্রি করার জন্য সাধারণ মানুষ প্রায়ই ফিরে যাচ্ছেন। কালীগঞ্জে স্থায়ী সাব-রেজিস্ট্রার নিয়োগ জরুরি।

উপজেলার লাউতলার রিওন হোসেন সম্প্রতি এক বিঘা জমি কেনেন। দুই সপ্তাহ ধরে অফিসে গিয়েও জমি রেজিস্ট্রি করতে পারেননি। তিনি বলেন, অফিসে গেলেই শুনি, সাব-রেজিস্ট্রার আসেননি। সিরিয়াল দিয়ে বসে আছি। দেখি কবে রেজিস্ট্রি হয়। এভাবে একটা অফিস চলতে পারে না।

এদিকে মহেশপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসও জোড়া-তালি দিয়ে চলছে। জানা যায়, মহেশপুর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের আওতায় পৌরসভাসহ ১২ ইউনিয়নের ২৫৫ গ্রামে প্রায় ৪ লাখ মানুষ বাস করেন। উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার গত ডিসেম্বরে বদলি হওয়ায় মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটার দূর থেকে এসেও ফিরে যেতে হচ্ছে। প্রায় ১০ মাস স্থায়ী সাব-রেজিস্ট্রার না থাকায় জমি রেজিস্ট্রি হচ্ছে না ঠিকমতো। একজন

সাব-রেজিস্ট্রারকে পালাক্রমে (মহেশপুর-কোটচাঁদপুর-হরিণাকুণ্ডু) তিন উপজেলার দায়িত্ব দেওয়া হলেও সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না তিনি। সকাল ৯টায় অফিস চালু হওয়ার কথা থাকলেও সাব-রেজিস্ট্রার মহেশপুরে আসেন বেলা ১১টার পরে। ফলে দুর্ভোগে সেবাপ্রত্যাশীরা। পাশাপাশি সরকার প্রতি মাসে ৬০ লাখ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।

উপজেলার সামন্তা গ্রামের নজের আলী বলেন, এক সপ্তাহ ঘুরে জমির দলিল রেজিস্ট্রি করেছি। অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। একদিকে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হয়েছে, অন্যদিকে সময়ের অপচয়।

দলিল লেখক বাবর আলী বাবু বলেন, সপ্তাহে দুদিন অফিস চলে। প্রায় ১০ মাস ধরে রেজিস্ট্রার নিয়মিত না থাকায় জমি রেজিস্ট্রি হচ্ছে না ঠিকমতো।

এদিকে নতুন কর্মকর্তা পদায়নের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলে জানান জেলা রেজিস্ট্রার।

মহেশপুরে ডিসেম্বর পর্যন্ত দলিল রেজিস্ট্রি হয়েছিল প্রায় ১২ হাজার। কর্মকর্তা বদলি হওয়ার পর জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দলিল রেজিস্ট্রি হয়েছে ৪ হাজার ২০০। স্থায়ী কর্মকর্তা না থাকায় প্রতি মাসে গড়ে ৫০০ দলিল কম রেজিস্ট্রি হচ্ছে। সরকারের এ খাত থেকে রাজস্ব কমেছে মাসে প্রায় ৬০ লাখ টাকা।

হরিণাকুণ্ডু সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে অতিরিক্ত দায়িত্বে আছেন ইয়াসমিন শিকদার। ৫ আগস্টের পর এ

সাব-রেজিস্ট্রার তিন দিন অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনে উপস্থিত থাকলেও দলিল স্বাক্ষর হয়েছে মাত্র একদিন। অথচ নিয়ম অনুযায়ী সপ্তাহে মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার দলিল রেজিস্ট্রি হওয়ার কথা। এসব কারণে বিড়ম্বনায় পড়েছেন অনেকে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ডিসি কর্তৃক সাংবাদিকের সঙ্গে অশোভন আচরণে সাতক্ষীরা প্রেস ক্লাবের প্রতিবাদ

নরসিংদীতে ছেলের দায়ের আঘাতে প্রাণ গেল মায়ের

পদ্মা থেকে ৭ ব্যারেল চোরাই ডিজেল উদ্ধার, গ্রেপ্তার ২

ফাইনালে রংপুর, অপেক্ষায় ঢাকা মেট্রো ও খুলনা

মেট্রোরেল যাত্রীদের সুখবর দিল ডিএমটিসিএল

চাঁদা না দেওয়ায় কারখানা মালিককে শ্বাসরোধে হত্যা

মেছো বিড়াল হত্যার অপরাধে আসামি গ্রেপ্তার

অটোরিকশাকে লাইসেন্সের আওতায় আনা হবে : ডিএমপি কমিশনার

কিশোরগঞ্জে বিএনপি নেতার অনুষ্ঠানে অতিথি ছাত্রলীগ নেতা

গাইবান্ধায় জামায়াত-বিএনপির সংঘর্ষ, আহত ৩০

১০

শ্রাবণী এখন শ্রাবণ

১১

ঘুরতে গিয়ে নদীতে ডুবে প্রাণ গেল দুই ভাইয়ের

১২

জুমার দিনে মসজিদে আগুন দিল ইসরায়েলিরা

১৩

শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটিতে চিত্রকর্ম প্রদর্শনী

১৪

আরেকটি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল কাল

১৫

বাংলাদেশে ইসলামি চরমপন্থা আসবে না : ড. ইউনূস

১৬

ভারতীয় মিডিয়ার তথ্য বিভ্রান্তিকর-অতিরঞ্জিত : প্রেস উইং ফ্যাক্ট চেক

১৭

দিল্লিতে অবৈধ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ

১৮

ইটিভি-সিজেএফবি সংগীত-সাংবাদিকতা এবং চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদান / সম্মাননা পাচ্ছেন বেবী নাজনীন, ফাহিম আহমেদ এবং জয়া আহসান 

১৯

রাজধানীতে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনে ৯৭৯ মামলা 

২০
X