কয়েক ঘণ্টার টানা বৃষ্টিতে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া, ফুলপুর উপজেলা এবং নেত্রকোনা সদর ও বারহাট্টা উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ভোর থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত টানা বৃষ্টি হওয়ায় কংস ও নেতাই নদীর পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে নতুন করে ময়মনসিংহের তিন উপজেলায় অন্তত ২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে আছে দুই লক্ষাধিক মানুষ। অন্যদিকে, নেত্রকোনা সদর উপজেলা ও বারহাট্টার ৫টি ইউনিয়নের অন্তত ১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। দুর্গাপুরে বানের পানিতে ডুবে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে শেরপুরে কমতে শুরু করেছে বন্যার পানি। চার দিনের বন্যায় জেলায় এ পর্যন্ত ১১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ তিন জেলায় পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগের পাশাপাশি দেখা দিয়েছে তীব্র খাদ্য সংকট।
গত দুদিন ভারি বৃষ্টি না থাকায় ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া ও ফুলপুর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি কোথাও কোথাও উন্নতি হলেও বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে অবনতি হয়েছে। কংস ও নেতাই নদীর পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে এখনো ৩টি ইউনিয়নের ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি। ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, মাছের খামার ও ফসলের মাঠ তলিয়ে থাকায় ওইসব এলাকার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন স্থানে। ফলে গবাদি পশু, গো-খাদ্য এবং নিজেদের খাবার নিয়ে মহাবিপাকে তারা।
ধোবাউড়া উপজেলায় নতুন করে আরও ২৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। টানা পাঁচ দিনের পাহাড়ি ঢলের পানিতে মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। পানিবন্দি হয়ে আছে দুই লক্ষাধিক মানুষ। বাড়িঘরে পানি ওঠায় বন্ধ রয়েছে রান্নাবান্না। চরম সংকট দেখা দিয়েছে খাবার পানির। কংস নদের তীরবর্তী আইলাতলী আশ্রয়ণ প্রকল্পে পানি ওঠায় দুর্ভোগে গৃহছাড়া বাসিন্দারা। হালুয়াঘাট উপজেলায় প্লাবিত ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে সদর, কইচাপুর ও নড়াইল—এই ৩টি ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার পরিবার এখনো পানিবন্দি। ফুলপুর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে ফুলপুর সদর, ছনধরা, বালিয়া ও সিঙ্গেশ্বর—এই চারটি ইউনিয়নে নতুন করে ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি।
ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত শারমিন জানান, নতুন করে বেশ কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বন্যাদুর্গতদের মধ্যে সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলমান আছে। আশা করছি, দ্রুত এই পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সের পক্ষ থেকে শুকনো খাবারসহ খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, বন্যাকবলিত ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী হালুয়াঘাট এবং ধোবাউড়া পরিদর্শন, উদ্ধার কাজ সম্পন্ন ও ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
নেত্রকোনা সদর ও বারহাট্টা উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের অন্তত ১২টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। অনেক ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ। গোয়ালে পানি ওঠায় অনেকে গরু নিয়ে কোনোরকম এক ঘরে বসবাস করছেন। রান্না বন্ধ অনেক পরিবারে। অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয়ে যাচ্ছেন। এর আগে জেলার পূর্বধলা, দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা উপজেলার ২০-২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়। সবমিলিয়ে জেলায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। এদিকে বন্যার পানিতে ডুবে দুর্গাপুরে রুস্তম খান (৬০) নামে এক ব্যক্তি মারা গেছেন।
জেলা প্রশাসন দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে বললেও ভুক্তভোগীদের অনেকে বলছেন, তারা কোনো সহায়তা পাননি। তবে জেলা যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হাসনাত হাসান সৈকত নিজস্ব অর্থায়নে পাঁচশতাধিক বন্যার্তের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেছেন।
জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস জানান, জেলা প্রশাসনের টিম নতুন করে প্লাবিত এলাকায় ভিজিট করছে। ত্রাণ সহায়তাও দেওয়া হচ্ছে। যারা আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চাইবে তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হবে। এ ছাড়া প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।
বৃষ্টি না থাকায় শেরপুরে কমতে শুরু করেছে বন্যার পানি। তবে এখনো পানিবন্দি রয়েছে অনেক মানুষ। অন্যদিকে পানি কমতে শুরু করায় ভেসে উঠছে ক্ষতচিহ্ন। দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে খাবার ও সুপেয় পানির সংকট। চার দিনের বন্যায় এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের।
সোমবার জেলার নালিতাবাড়ীর ঘোনাপাড়ায় জিমি আক্তার নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়। বন্যায় কারণে ওই শিশুসহ নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও নকলায় গতকাল পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। গতকাল নকলার টালকী এলাকায় বন্যার পানিতে ডুবে রাহিম (৫) নামে এক শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সে ওই এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে।
এদিকে, বন্যাদুর্গত এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে খাদ্যসামগ্রী বিতরণসহ নানা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া বিএনপিসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকেও ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে।
শেরপুরের জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, জেলার প্রায় সব নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে। পানি কমতে শুরু করেছে। এতে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে।