শেখ হারুন
প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২৩, ০২:৫৭ এএম
আপডেট : ০৪ আগস্ট ২০২৩, ১১:২৫ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

৩৩ কোটি টাকা ব্যয়েও কেউ পায়নি বিদ্যুতের মিটার!

কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ অঞ্চল
৩৩ কোটি টাকা ব্যয়েও কেউ পায়নি বিদ্যুতের মিটার!

ভূতুড়ে বিল, গ্রাহক হয়রানি এবং ভোগান্তি বন্ধে ২০১৩ সালে কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। ‘কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে প্রি-পেইড মিটার বিতরণ’ শীর্ষক ওই প্রকল্পের মাধ্যমে আড়াই বছরে ২ লাখ ২৩ হাজার ৩৫টি মিটার বসানোর কথা ছিল। এরপর পার হয়েছে ১০ বছর। খরচ হয়েছে ৩৩ কোটি ৩ লাখ টাকা; কিন্তু কিছুই হয়নি কাজের কাজ। ওই অঞ্চলের কোথাও লাগেনি একটিও প্রি-পেইড মিটার! কাজে ধীরগতির কারণে এরই মধ্যে প্রায় ৮৪ কোটি টাকার অনুদান বন্ধ করেছে জার্মানির উন্নয়ন ও বিনিয়োগ ব্যাংক। পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) নিবিড় পরিবীক্ষণ প্রতিবেদন এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। ওই সময় ব্যয় ধরা হয় ১৩২ কোটি ৪৯ লাখ ২২ হাজার টাকা। বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিল বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। ২০১৫ সালের জুনের মধ্যে কাজটি শেষ হওয়ার কথা। তবে তা করতে না পারায় তিন দফায় ২০২০ সাল পর্যন্ত বাড়ে মেয়াদ। এ সময়ের মধ্যেও প্রকল্প শেষ করতে পারেনি বিপিডিবি। বারবার মেয়াদ বাড়িয়েও শেষ না হওয়ায় গত বছরের জুলাই মাসে প্রকল্প সংশোধন করা হয়। ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ

করার লক্ষ্য নির্ধারণ করে ৩২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা বাড়ানো হয় ব্যয়। ফলে প্রকল্পের বরাদ্দ ১৬৫ কোটি ১৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকায় দাঁড়ায়।

নথিপত্র বলছে, বাংলাদেশ সরকার এবং জার্মানির উন্নয়ন এবং বিনিয়োগ ব্যাংক কেএফডব্লিউর যৌথ অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। মূল প্রকল্পে ১০৪ কোটি ৫ লাখ টাকা দেওয়ার কথা ছিল কেএফডব্লিউর। বাকি টাকা সরকার এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের জোগান দেওয়ার কথা; কিন্তু প্রকল্পের ধীরগতি এবং পরামর্শক প্রতিষ্ঠান জার্মানির ফিসনার কোম্পানির সঙ্গে জটিলতার কারণে মাঝপথে কেএফডব্লিউ ৮৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। যে কারণে প্রকল্পের কাজ বারবার বাধাগ্রস্ত হয়। পরে প্রকল্প সংশোধন করে সরকারি এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়।

আইএমইডি বলছে, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিদেশি অর্থায়নের টাকা ব্যবহার করতে না পারার বিষয়টি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। এর দায় প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা কোনোভাবে এড়াতে পারে না। প্রকল্প অফিসকে আরও দূরদর্শিতা এবং দক্ষতার সঙ্গে প্রকল্পটির ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করা সমীচীন ছিল। বিভিন্ন সময়ে কয়েকটি ইস্যু কেন্দ্র করে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পিডিবির মতানৈক্যের বিষয়টি সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালকের দপ্তর থেকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে প্রকল্পের প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণের পদক্ষেপ নিলে হয়তো উদ্ভূত পরিস্থিতি এড়ানো যেত। ’

জানা গেছে, প্রচলিত পোস্ট পেইড মিটারের পরিবর্তে প্রি-পেমেন্ট মিটার স্থাপন করে নন-টেকনিক্যাল বিদ্যুৎ অপচয় কমানো, গ্রাহক কর্তৃক ব্যবহৃত বিদ্যুৎ বিলের ক্ষেত্রে শতভাগ অগ্রিম রাজস্ব আদায়সহ গ্রাহকদের ভোগান্তিহীন বিদ্যুৎ সরবরাহ করার উদ্দেশ্যে প্রকল্পটি শুরু করে পিডিবি। প্রকল্পের মূল কাজ প্রি-প্রেইড মিটার স্থাপন। এখন পর্যন্ত একটি মিটার স্থাপন না হলেও ভবন নির্মাণ, যানবাহন ক্রয় ও সামান্য কিছু যন্ত্রপাতি কেনাকাটা এবং সরবরাহের পেছনেই খরচ হয়ে গেছে অনুমোদিত মূল ব্যয়ের ২০ শতাংশ।

আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখনো প্রি-পেমেন্ট মিটার লাগানো সম্ভব না হওয়ায় ওই এলাকার বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীরা এর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিদ্যুৎ বিতরণকারী কর্তৃপক্ষও শতভাগ অগ্রিম আদায়ে ব্যর্থ হচ্ছে।

জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মো. জাবেদ হোসেন কালবেলাকে বলেন, ‘এ প্রকল্পের সঙ্গে আমি নতুন যুক্ত হয়েছি। মূলত কী কারণে সমস্যা হচ্ছে, সেটি এখনো ঠিকমতো জানি না। আড়াই বছরের প্রকল্প ১০ বছরেও শেষ না হওয়ার কারণ জানার চেষ্টা করছি। যতটুকু বুঝতে পারছি, এ প্রকল্পের অর্থায়ন এবং পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জটিলতা ছিল। যেগুলো সমাধান করা সম্ভব হয়নি বলে প্রকল্প শেষ হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘প্রকল্পটিতে জার্মানির কেএফডব্লিউর অনুদান টাকায় করা হচ্ছিল। পরে তারা ফান্ডিংটা তুলে নিয়েছে এ কারণে প্রকল্পের মাঝপথে ডিপিপি সংশোধন করা লাগছে। তারা যদি থাকত, তাহলে ঝামেলা হতো না। এখন নতুন করে সিদ্ধান্ত হয়েছে সরকার এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন হবে।’

জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় তিনটি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে; কিন্তু মিটার স্থাপনের কাজ শুরু না হওয়া দীর্ঘদিন ধরে এগুলো অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। ব্যবহারের আগেই ভবনগুলো সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে বলে আএমইডির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘মিটার স্থাপন শুরু না হওয়ায় ভবনগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে না। তবে এগুলোকে পরিত্যক্ত বলা যাবে না। মিটার স্থাপন শুরু হলেই ভবনের ব্যবহার হবে।’

জানতে চাইলে আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন কালবেলাকে বলেন, ‘আইএমইডির দায়িত্ব হলো, নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জটিলতাগুলো তুলে ধরা। এক্ষেত্রে সেটাই করা হয়েছে। সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের। প্রকল্প বাস্তবায়নে এমন ধীরগতির কারণ তারাই ভালো বলতে পারবে। প্রকল্পের বাস্তব অবস্থা তুলে ধরে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে সমাধান করতে বলা হয়েছে। তারা কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

তোফাজ্জল হত্যা নিয়ে যা বললেন মৌসুমী 

ঢাবি ও জাবিতে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় জামায়াতের বিবৃতি

ভারতের পেসারদের তোপে প্রথম সেশন শেষে বিপদে বাংলাদেশ

বৃষ্টি হবে কবে, জানাল আবহাওয়া অফিস

সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কারাগারে

লেবাননে ইসরায়েলের ভয়াবহ বিমান হামলা

বাবা-মায়ের কবরের পাশে সমাহিত তোফাজ্জল

দুপুর থেকে চলবে মেট্রোরেল, খুলছে কাজীপাড়া স্টেশন 

জাবিতে পিটিয়ে হত্যা, ৮ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা

টাইগার পেসারদের দৃঢ়তায় দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই অলআউট ভারত

১০

যশোরে সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত ১

১১

কেন কিনবেন আইফোন ১৬, যেসব কারণে সেরা এ মডেল

১২

টাঙ্গাইলে নায়েবের চেয়ারে স্থানীয় যুবক, ঘুষ ছাড়া ফাইল নড়ে না

১৩

অতিরিক্ত ডিআইজি মশিউর রহমান গ্রেপ্তার

১৪

ড. ইউনূসকে মামলা দিয়েছিল জেলে রাখার জন্য : মির্জা ফখরুল

১৫

চট্টগ্রামে চিকিৎসকদের মিলনমেলা

১৬

অস্বস্তিকর গরম, সুসংবাদ দিল আবহাওয়া অফিস

১৭

লেবানন থেকে ইসরায়েলে ১৭ হামলা

১৮

শেখ হাসিনা দেশটাকে ‘ফোকলা’ করে গেছেন : মির্জা ফখরুল

১৯

২০ সেপ্টেম্বর : নামাজের সময়সূচি

২০
X