গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লোডশেডিং। গ্রামাঞ্চলের পাশাপাশি এখন রাজধানী ঢাকায় ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং হচ্ছে। গত মাসের শেষদিক থেকে রাজধানীতে অল্পস্বল্প লোডশেডিং শুরু হলেও এখন তীব্র আকার ধারণ করেছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কর্মকর্তারা বলছেন, গ্যাসের অভাবে কেন্দ্র চালানো যাচ্ছে না। এ ছাড়া তেলভিত্তিক অনেক কেন্দ্র বাতিল করা হয়েছে। এ কারণে লোডশেডিং ক্রমে বাড়ছে।
অন্যদিকে, চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ করতে না পারার বিষয়ে পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা বলছেন, সামিটের এলএনজি টার্মিনাল (ফ্লোটিং স্টোরেজ এবং রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট-এফএসআরইউ)) বন্ধ থাকায় গ্যাস সরবরাহ কমে গেছে। যে কারণে সব খাতেই গ্যাসের সংকট দেখা দিয়েছে। সাগরের সৃষ্ট নিম্নচাপ কেটে গেলেই বন্ধ এলএনজি টার্মিনালটি চালু করা হবে।
রাজধানীসহ সারা দেশে লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে পিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম কালবেলাকে বলেন, গ্যাসের অভাবে এখন ১২শ থেকে ১৫শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছি না। বিশেষ করে সামিটের এলএনজি টার্মিনালটি চালু না হওয়ায় সংকট প্রকট হয়েছে। তিন মাস ১০ দিন ধরে বন্ধ এফএসআরইউটি। এ ছাড়া তেলভিত্তিক অনেক কেন্দ্র বাতিল করা হয়েছে। ফলে লোডশেডিং বেড়েছে। গরমের কারণে গ্রাহকদের কষ্ট হচ্ছে। তিনি বলেন, তার পরও আমরা চেষ্টা করছি সর্বোচ্চ চাহিদার সময় উৎপাদন বাড়াতে।
সামিটের এলএনজি টার্মিনাল চালু এবং গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার কালবেলাকে বলেন, সামিটের এফএসআরইউর রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শেষ। কিন্তু সাগরে নিম্নচাপ থাকায় এটি চালু করা যাচ্ছে না। সাগরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে টার্মিনালটি চালু করা যাবে। তবে টার্মিনালটি চালু হলেও স্পট
মার্কেট থেকে এলএনজি কিনতে না পারায় পাঁচ-ছয় দিন সীমিত আকারে গ্যাস সরবরাহ করা হবে। তিনি জানান, স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানির আগ পর্যন্ত ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হবে।
কথা হয় রাজধানীর গ্রিন রোডের বাসিন্দা ইয়াকুব গনির সঙ্গে। তিনি কালবেলাকে বলেন, চলতি মাসের শুরু থেকে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেড়ে গেছে। প্রচণ্ড গরমের সময় দিনে দু-এক ঘণ্টা পরপর বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। রাত ১০টা পর্যন্ত এই অবস্থা চলতে থাকে। তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুতের লোডশেডিং না থাকায় ইউপিএস বা আইপিএস ব্যবহার করা হয়নি। সম্প্রতি লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ার কারণে ২৫ হাজার টাকা খরচ করে বাসায় আইপিএস লাগানো হয়েছে।
রামপুরার বাসিন্দা কামরুল শিকদার বলেন, ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে ফ্রিজ ও ওভেন নষ্ট হয়েছে। প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ করে এই দুটি পণ্য মেরাত করেছি।
এদিকে অবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, সাগরের নিম্নচাপের কারণে রাজধানী, কুড়িগ্রাম ও টাঙ্গাইলের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, যা চলতি সপ্তাহে অব্যাহত থাকবে। গতকাল রাজশাহীতে সর্বোচ্চ ৩৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ঢাকায় সর্বোচ্চ ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
পিডিবির গতকালের দৈনিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সারা দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ধরা হয়েছিল ১৪ হাজার ৯৩৩ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে সরবরাহ করা হয়েছে ১৩ হাজার ৮৫৭ মেগাওয়াট। আর লোডশেডিং করা হয়েছে ১ হাজার ৭৬৫ মেগাওয়াট। এর মধ্যে বিভাগভিত্তিক সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং করা হয়েছে ময়মনসিংহে ২৫৭ মেগাওয়াট। এ ছাড়া ঢাকায় ২২৫ মেগাওয়াট, রাজশাহীতে ১৪৭ মেগাওয়াট, কুমিল্লায় ২১৭ মেগাওয়াট, সিলেটে ১০৫ মেগাওয়াট এবং রংপুরে ১২৫ মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়েছে। চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশালে কোনো লোডশেডিং হয়নি। পিডিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, লোডশেডিংয়ের যে হিসাব করা হয়েছে, তার চেয়ে বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। গতকালের লোডশেডিংয়ের প্রকৃত চিত্র জানা যাবে আজ মঙ্গলবার। জ্বালানি (গ্যাস ও তেল) সংকটের কারণে চার হাজার ১৬৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না বলেও জানান তারা।
অন্যদিকে, পাওয়ার গ্রিড অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) ঘণ্টাওয়ারি বিদ্যুৎ উৎপাদনের তথ্যানুযায়ী, গতকাল বিকেল ৩টায় ১৪ হাজার ৭৫০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন করা হয়েছে ১২ হাজার ৭৮৮ মেগাওয়াট। এই সময় ১ হাজার ৮৭৪ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে। একই সময়ে গ্যাস থেকে ৪ হাজার ৯১৮ মেগাওয়াট, জ্বালানি তেল (ফার্নেস অয়েল) থেকে ১ হাজার ৮১৭ মেগাওয়াট, কয়লা থেকে ৩ হাজার ৪৪৪ মেগাওয়াট, জলবিদ্যুৎ থেকে ২১০ মেগাওয়াট, সৌরবিদ্যুৎ থেকে ৩৯৯ মেগাওয়াট, বায়ু বিদ্যুৎ থেকে ২২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। এ ছাড়া ভারত থেকে ৯৫০ মেগাওয়াট আমদানি করা হয়েছে।