কোটা সংস্কার আন্দোলন ও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাধারণ শিক্ষার্থী, পথচারী, ব্যবসায়ী, পুলিশসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। বেশিরভাগ লাশ তাদের পরিবার-পরিজন ও স্বজনরা মর্গ থেকে নিয়ে গেছেন। তবে এখনো ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গের ফ্রিজারে সাতজনের এবং হাসপাতাল মর্গের ফ্রিজারে চারজনের লাশ পড়ে রয়েছে। আগারগাঁওয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গের ফ্রিজারে পড়ে আছে আরও চারজনের লাশ। কিন্তু তাদের কোনো দাবিদার নেই।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, এসব লাশের মধ্যে কাউকে নিহত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে; আবার আহত অবস্থায় হাসপাতালে আনার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন কেউ কেউ। তাদের খোঁজ নিতে এ পর্যন্ত কেউ আসেননি।
গতকাল শুক্রবার সরেজমিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুই মর্গ এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গ ঘুরে অজ্ঞাতপরিচয় এসব লাশের খবর পাওয়া গেছে।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গের ফ্রিজারে পড়ে থাকা ক্ষতবিক্ষত চার লাশ পরিবার-পরিজন ও স্বজন হিসেবে শনাক্ত করতে পারেনি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চারজনের পরিচয় পেতে ছবি প্রকাশ করে স্বজনদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। হাসপাতালের পরিচালক নিজেই এ বিষয়ে গণমাধ্যমের সহায়তা চেয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরাও এসব লাশের স্বজনদের সন্ধানে কাজ করছেন। তবে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে গত ৪ থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত যেসব লাশ এসেছে, তার মধ্যে চার লাশের পরিচয় শনাক্ত হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতালে লাশ রাখার ফ্রিজারগুলোতে কিছুটা ত্রুটি রয়েছে। ফলে দীর্ঘদিন ধরে ফ্রিজিং করে রাখা সম্ভব নয়। লাশের পরিচয় না পাওয়ায় ফ্রিজারও মেরামত করা যাচ্ছে না। এ নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও বিপাকে রয়েছে।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অজ্ঞাত লাশ শনাক্তে পরিবার-পরিজন ও স্বজনদের যোগাযোগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কাজী ইমরান হোসেন শাওনকে। তিনি কালবেলাকে বলেন, গত ৪ থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত সহিংসতায় নিহতদের মধ্যে চারজনের পরিচয় এখনো শনাক্ত হয়নি। লাশ মর্গের ফ্রিজারে রাখা হয়েছে। পরিচয় শনাক্তে আমরা হাসপাতাল থেকে সবার সহযোগিতা চাই। শিক্ষার্থীরাও লাশের পরিচয় শনাক্তে কাজ করছে। কিন্তু গত ১০ দিনের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও পরিচয় শনাক্ত হয়নি। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সহায়তা চাওয়া হয়েছে। তারা লাশের ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ করবেন। এটা হলে পরিচয় শনাক্তের সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) মর্গে সাতটি অজ্ঞাত লাশ রয়েছে। আর ঢামেক হাসপাতালের মর্গে লাশ রয়েছে আরও চারটি। শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নিখোঁজ স্বজনদের খুঁজতে ঢামেক মর্গে এসেছিলেন বেশ কয়েকজন। তারাও ফ্রিজারে লাশ দেখে নিজেদের স্বজন হিসেবে শনাক্ত করতে পারেননি।
ঢামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সরকারের পতনের পরের তিন দিন হাসপাতালে গুরুতর আহত অনেককে চিকিৎসার জন্য আনা হয়। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন মারা যান। আবার মৃত্যুর দুই-তিন দিন পরও রাস্তায় পড়ে থাকা কয়েকটি লাশ হাসপাতালে আনা হয়। এসব লাশের মধ্যে পুড়ে যাওয়া বডিও রয়েছে। সেগুলো এমনভাবে বিকৃত হয়ে গেছে যে, বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতেও পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব নয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গের সহকারী বাবুল মিয়া কালবেলাকে বলেন, প্রতিদিন স্বজনরা লাশ শনাক্তের জন্য মর্গে আসেন। আমরাও ফ্রিজার খুলে দেখাই। কিন্তু এই সাত লাশ কেউ শনাক্ত করতে পারেনি।
এদিকে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গের সহকারী জুয়েল বলেন, চারজনের লাশ এখনো কেউ শনাক্ত করতে পারিনি। ১২টি লাশ রাখার সক্ষমতাসম্পন্ন হাসপাতাল মর্গের ফ্রিজারে এই চারটি লাশ রাখা হয়েছে। প্রতিদিনই নানা কারণে নিহতের লাশ ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। চার লাশের পরিচয় শনাক্তে আমরা সবার সহযোগিতা চাই। নয়তো অন্য লাশ ফ্রিজারে রাখতেও অসুবিধা হচ্ছে।