আড়াই বছর ধরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন মেরুদণ্ড জোড়ালাগা শিশু নূহা ও নাবা। এরই মধ্যে সাত দফা অস্ত্রোপচার করে তাদের পৃথক করা হয়েছে। আরও কয়েক দফা চিকিৎসা বাকি। এ অবস্থায় দুই শিশুর চিকিৎসা সম্পন্ন হওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তাদের বাবা মো. আলমগীর হোসেন রানা।
গতকাল রোববার তিনি ফেসবুকে এ নিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেনের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন তার দুই মেয়ের যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু সরকার পতনের পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার কাছে কেবিন ভাড়া দাবি করেছে, যা তার পক্ষে দেওয়া অসম্ভব। তিনি বর্তমান স্বাস্থ্য উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করে লিখেছেন, উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে তাকে বাচ্চাসহ আত্মহত্যা করতে হবে।
এ প্রসঙ্গ মোবাইল ফোনে কথা হয় আলমগীর হোসেনের সঙ্গে। কে টাকা চেয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের যারা কেবিনের ভাড়া আদায় করেন, তারাই টাকা চেয়েছেন। তারা বলেছেন, দুই বছরের কেবিন ভাড়া বাকি, এই টাকা না দিলে মামলা হবে।
তারা মোবাইলে হাসপাতালের রেন্ট কালেক্টরের সঙ্গে কথা বলিয়ে দিয়েছেন। তিনিও একই কথা বলেছেন।’
আলমগীর বলেন, আমার দুই মেয়ের একজনের আরও দুটি এবং আরেকজনের একটি অস্ত্রোপচার বাকি। আমি বুঝতে পারছি না, তাদের চিকিৎসা সম্পন্ন করতে পারব কি না।
কুড়িগ্রাম সদরের বাসিন্দা আলমগীর ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা নেই। ২০২২ সালের ২১ মার্চ আমার স্ত্রী জোড়া লাগানো যমজ শিশুর জন্ম দেন। তাদের নাম নূহা ও নাবা। জন্মের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করে এপ্রিলের ৪ তারিখে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করাই। আট মাস পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার দুই মেয়ের চিকিৎসার ব্যয়ভার গ্রহণ করলে চিকিৎসার কার্যক্রম শুরু হয়। এরই মধ্যে আমার মেয়ে দুজনের সাতটি অপারেশন হয়েছে এবং দুজনকে পৃথক করা হয়েছে। এখনো একজনের একটি অপারেশন এবং আরেকজনের দুটি অপারেশন বাকি আছে। এ অবস্থায় সরকার পরিবর্তন হওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাকি চিকিৎসা এবং দীর্ঘদিন থাকা কেবিন ভাড়ার জন্য চাপ দিচ্ছে।
আলমগীর আরও লিখেছেন, আমি বাচ্চাদের চিকিৎসার জন্য দীর্ঘ আড়াই বছর থেকে কর্মহীনভাবে হাসপাতালে আছি এবং আমার ব্যক্তিগতভাবে ৯ লাখ টাকার বেশি খরচ হয়েছে। সহায়সম্বল বেচে এবং ঋণ করে এই টাকা ম্যানেজ করেছি। এখন বাচ্চাদের চিকিৎসা কীভাবে করাব?
এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. রেজাউর রহমান বলেন, কেবিন ভাড়া বা কোনো টাকা নেওয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোনো নির্দেশ নেই। তার এ ধরনের অভিযোগ দুঃখজনক। তিনি দুই বছর ধরে কেবিন ব্লকের ছয় তলায় একটি দুই শয্যার ভিআইপি কেবিনে থাকছেন। এ ছাড়া হাসপাতালের পক্ষ থেকে শিশু দুটির বেবিফুড এবং যাবতীয় ওষুধ সরবরাহ করা হয়। অঙ্কের হিসাবে এই টাকার পরিমাণ বিপুল।
তিনি বলেন, কেউ তার কাছে টাকা চেয়ে থাকলে অবশ্যই আমাকে জানানো উচিত ছিল। সেটি না করে তিনি ফেসবুকে দিয়েছেন, যা অনভিপ্রেত।