শিবচর (মাদারীপুর)
‘কে গুলি করল আমার বাজানরে! কেন গুলি করল! আমার বাজানতো আন্দোলনে যায় নাই। আমি কার কাছে বিচার চামু। কে বিচার করব! কার বিরুদ্ধে বিচার চামু! আমার বাজানরে কি আর ফিরে পামু! আমার বাজান কই গেলগা! আমার আর কেউ রইল না জগতে। আল্লার কাছে বিচার দিলাম, আল্লাহ, আমার বাজানরে যারা গুলি করে মারছে তাদের তুমি দেখছ, তুমিই বিচার কইরো। আমার বাজান কইছিল বিদেশে যাইব। কইছি পাসপোর্ট করে দিমু। কিন্তু বাজান কোন দেশে চইলা গেল!’ এসব কথা বলতে বলতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন গত ১৯ জুলাই শুক্রবার রাজধানী
বাড্ডা লিঙ্করোড এলাকায় গুলিতে নিহত হৃদয় হোসেন সিহাবের মা নাসিমা বেগম।
সিহাবের বাড়ি মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার সন্ন্যাসীরচর ইউনিয়নের আজগর হাওলাদার কান্দি এলাকায়। তার বাবার নাম মজুর শাহ আলম হাওলাদার। তিনি দিনমজুর। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে তিনি নির্বাক হয়ে গেছেন। মানুষ দেখলে শুধু তাকিয়ে থাকেন।
গতকাল শনিবার বিকেলে সিহাবের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শোকে স্তব্ধ সবাই। এলাকার লোকজন কেউ যাচ্ছেন সিহাবের বাড়িতে আবার কেউ যাচ্ছেন কবরস্থানে। স্বজনরা জানান, ছোটবেলা থেকে সিহাব অত্যন্ত ভদ্র ও নম্র স্বভাবের। স্থানীয় রাজারচর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে। তার দিনমজুর বাবা সংসার চালাতে হিমশিম খেতেন। এ কারণে ২০২২ সালের শুরুতে দূরসম্পর্কের ফুফাতো ভাই মনির হোসেনের মালিকানাধীন লিংকরোড এলাকার হাসান স্টিল নামে এক ফার্নিচারের দোকানে কাজ নেয় সিহাব। গত আড়াই বছর সে সেখানেই কাজ করেছে।
গত ১৯ জুলাই জুমার নামাজের পরে খাবার খেয়ে দোকানে ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হন সিহাব। লোকজন উদ্ধার করে নাগরিক স্পেশালাইজড হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
দোকান মালিক মনির হোসেন বলেন, ‘শুক্রবার দুপুরে খাওয়ার পর দোকানে ফিরছিল সে। আমি বাসায় ঘুমিয়ে পড়ছিলাম। সাড়ে ৩টার দিকে একজন ফোন দিয়ে আমাকে জানায়, আপনার লোক গুলি খাইছে। সেখানে গিয়ে শুনি ওরে মধ্য বাড্ডার একটি হাসপাতালে নিয়ে গেছে লোকজন। পরে সেখানে যাই। সেখানে তারা জানায়, এই রোগীর অবস্থা ভালো না। ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যান। এরপর সেখান থেকে নাগরিক হাসপাতালে নিয়ে গেলে তারা জানায় সিহাব মারা গেছে।’
সিহাবের ভগ্নিপতি নিরব হোসেন জানান, সন্ধ্যার দিকে আমরা খবর পাই। লাশ নিয়ে আসতে রাত ১১টা বেজে যায়। পরে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।