শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
শাওন সোলায়মান
প্রকাশ : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০২:২৫ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

শাস্তির বিধান চায় না ই-ক্যাব

শাস্তির বিধান চায় না ই-ক্যাব

ই-কমার্সের নামে প্রতারণা বন্ধে আইন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর মাধ্যমে কোনো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অনিয়মের মাধ্যমে গ্রাহকের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পথ তৈরি হবে। তবে অনিয়মের শাস্তির বিধান থাকা আইনটি চাচ্ছে না ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ই-ক্যাব। যারা গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষা করতে চায় না তারাই এই আইন চাচ্ছে না বলে মত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও অনু বিভাগের।

সম্প্রতি বিভিন্ন ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের প্রতারণার পরিপ্রেক্ষিতে ই-কমার্স ব্যবসাকে একটি আইনি কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসতে কাজ শুরু করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ২০২১ সালে ডিজিটাল ব্যবসা পরিচালনা নির্দেশিকা প্রণয়ন করা হলেও এ বিষয়ে পরিপূর্ণ আইন ছিল না। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ডিজিটাল বাণিজ্য আইন, ২০২৩-এর খসড়া প্রণয়ন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এই খসড়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে মতামত জানানোর কথা বলে মন্ত্রণালয়।

আইনের খসড়ায় ফেসবুকসহ যে কোনো অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ই-কমার্স ব্যবসা পরিচালনার পূর্বে ‘ডিজিটাল বিজনেস (ডিবি) আইডি’ নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে। খসড়ার ২১ ধারায় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো ডিবি আইডি ওয়েবসাইট বা ফেসবুকে প্রদর্শন ছাড়া ব্যবসা করলে এক বছর কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রাখা হয়েছে। পণ্য বা সেবা সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য প্রকাশ বা প্রচার করলে ই-কমার্স বিক্রেতা বা মার্কেটপ্লেসের স্বত্বাধিকারীকে অনধিক তিন বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার উল্লেখ আছে ১৬ ধারায়। ১৭ ধারায় নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য বা সেবা সরবরাহে ব্যর্থ হলে সেই পণ্য বা সেবার মূল্যের তিনগুণ অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে তিন মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড আরোপ করা হয়েছে। এমন আরও কয়েকটি অপরাধ চিহ্নিত করে ১৮, ১৯ ও ২০ ধারায় বিভিন্ন শাস্তির উল্লেখ রয়েছে এই খসড়ায়, যার মধ্যে অনুমোদনহীন গিফট কার্ড, ক্যাশ ভাউচারের মতো পণ্য বিক্রির শাস্তিও রয়েছে।

খসড়াটি প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই এই আইনের বিরোধিতা করছে ই-ক্যাব। গতকাল রোববার একটি সভা শেষে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয় ই-ক্যাব। সভায় ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার বলেন, চুরি মানেই চুরি। এটা অনলাইন বা অফলাইনে আলাদা হওয়া দরকার নেই। অংশীজনদের মত নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। আমরা এই আইন চাই না। ই-কমার্স সেল থাকার পর নতুন করে কর্তৃপক্ষ গঠনের কোনো দরকার নেই।

এই সভায় ডব্লিওটিও অনু বিভাগের মহাপরিচালক হাফিজুর রহমানের প্রতি ইঙ্গিত করে এই আইন ‘অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তার চাকরি দেওয়ার বন্দোবস্ত’ বলেও মন্তব্য করেন বক্তারা। পাশাপাশি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ অনুযায়ী ভোক্তার স্বার্থ নিশ্চিত করা যায় বলেও মন্তব্য করেন ই-ক্যাব নেতৃবৃন্দ। কিন্তু ২০০৯ সালের তুলনায় বর্তমানের পরিবর্তিত অবস্থায় ডিজিটাল ব্যবসা নিয়ে বিশেষ আইন থাকার প্রয়োজনীয়তার পক্ষেও মতামত রয়েছে।

হাইকোর্টের আইনজীবী এবং ই-ক্যাব সদস্য খন্দকার হাসান শাহরিয়ার বলেন, ২০০৯ সালে যখন ভোক্তা অধিকারবিষয়ক আইন করা হয় তখন দেশে ই-কমার্সের সেই অর্থের প্রচলন ছিল না। পরবর্তী সময়ে এ খাতের পরিধি বেড়েছে যা আমরা করোনাকালেও দেখেছি। আর সেইসঙ্গে বেড়েছে ই-কমার্স নামের আড়ালে ইভ্যালি, কিউ কম, আলিশামার্ট, ই-অরেঞ্জসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার ফাঁদ। তারা এটা করতে পেরেছিলেন, কারণ ই-কমার্স বিষয়ে বিশেষ কোনো আইন ছিল না। এ প্রতিষ্ঠানগুলো যখন এই ফাঁদ বড় করছিল, তখন এই ই-ক্যাবের কিছু নেতাকে আমরা দেখেছি তাদের সহায়তা করতে। বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানগুলোর পৃষ্ঠপোষকতায় তারা বড় বড় অনুষ্ঠান করেছে। এখন যখন মন্ত্রণালয় ই-কমার্সকে একটি আইনের আওতায় আনতে চাচ্ছে, সেই নেতৃবৃন্দই এর বিরোধিতা করছে। অন্যদিকে সেই বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে আবার ব্যবসার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, যেন তারা কার্যক্রম পরিচালনা করে গ্রাহক ও মার্চেন্টদের বকেয়া টাকা ফেরত দিতে পারে। এখন এই প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বার্থেই ই-ক্যাব নেতৃবৃন্দ এই আইনের বিরোধিতা করছেন কি না সেটা একটা প্রশ্ন।

আইনের খসড়া এবং ই-ক্যাবের বক্তব্য প্রসঙ্গে ডব্লিউটিও অনু বিভাগের মহাপরিচালক হাফিজুর রহমান কালবেলাকে বলেন, এ আইনটা আমরা স্বেচ্ছায় করছি না। মহামান্য উচ্চ আদালতের আদেশ এবং প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিষয়ে যে কমিটি রয়েছে, সে দুটি জায়গা থেকে একটা কর্তৃপক্ষ তৈরির জন্য এটা এসেছে। আইনের যে খসড়া আছে, সেখানে অবসরপ্রাপ্ত কাউকে রাখার সুযোগ নেই। সেখানে সরাসরি সরকারি কর্মকর্তার কথা বলা হয়েছে। সুতরাং এ ধরনের ‘ব্লেইম গেম’ অযাচিত; এটা করা ঠিক না।

আইনে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি যে দায়বদ্ধতা রাখা হয়েছে সেগুলো এড়ানোর জন্য ই-ক্যাব এ আইনের বিরোধিতা করছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে হাফিজুর রহমান বলেন, আমি ঠিক মন্তব্য করতে চাচ্ছি না এ বিষয়ে; কিন্তু তারা এ আইনটা আগে থেকেই চাচ্ছে না। তারা সরাসরি বলছে যে, আইনটা দরকার নেই। ইভ্যালিসহ বিভিন্ন কোম্পানি যে অনিয়ম করেছে হয়তো আইনের দুর্বলতার জন্যই করেছে। ভোক্তা অধিকার কাজ করতে পারছে না, প্রতিযোগিতা কমিশন পারছে না। নতুন এই আইন হলে সেই ছয়নয়গুলো আর করা যাবে না। এখন যদি সেভাবে বলি যে, যারা এভাবে গ্রাহকদের নিয়ে লুটতরাজ করতে চায়, হয়রানি করতে চায়, তারাই চায় না যে এ আইনটা হোক। আইন কারও জন্য ক্ষতিকর নয়। তারা (ই-ক্যাব) চাইলে মতামত দিতে পারে যে, আইনটা কীভাবে হতে পারে; কিন্তু আইনটা হবেই না এমন চাওয়া ঠিক নয়।

এদিকে ই-ক্যাব গ্রাহকদের বদলে ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দেখবে বলেই মনে করছেন গ্রাহকরা।

কনসাস কনজিউমার সোসাইটির (সিসিএস) নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদ বলেন, দেশের ই-কমার্সের প্রসারে সবথেকে বড় বাঁধা ই-ক্যাব নিজেই। ই-ক্যাব নিজেদের কাছে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে চায়। আর তারা হচ্ছে ই-কমার্স মালিকদের একটি পুঁজিবাদী সংগঠন। সাম্প্রতিক সময়ে ই-কমার্স খাতে যে নৈরাজ্য ছিল সেখানে তাদের কোনো ইতিবাচক ও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল না। গ্রাহকদের টাকা যে এসক্রোতে আটকে আছে, সেগুলো উদ্ধারেও তাদের ভূমিকা দেখা যায় না। তারা গ্রাহকদের থেকে বিভক্ত একটি অঙ্গ। তারা তো তাদের ব্যবসায়ীদের স্বার্থই দেখবে। যদি কোনো ই-কমার্স গ্রাহকদের সঙ্গে অনিয়ম করে, প্রতারণা করে তাহলে আইন অনুযায়ী শাস্তি হবে। ই-ক্যাব যদি গ্রাহকদের স্বার্থ দেখত তাহলে তো তাদের এ আইনের বিরোধিতা করার কথা নয়। গ্রাহক হিসেবে আমার মনে হয় এই আইনের বাস্তবায়নে ই-কমার্সের মোড়কে প্রতারণা করার উদ্দেশ্য যাদের আছে, তারা বিপাকে পড়বে। তবে সরকার হচ্ছে জনগণের। জনগণ তথা গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষার দায়িত্ব সরকারি কর্তৃপক্ষের। আমরা আশা করি, সরকার সব প্রভাব ও চাপের ঊর্ধ্বে গিয়ে এ আইন বাস্তবায়ন করবে।

সার্বিক বিষয়ে মন্তব্য নেওয়ার জন্য ই-ক্যাবের সভাপতি শমী কায়সার এবং সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমালের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন ধরেননি। যোগাযোগের উদ্দেশ্য উল্লেখ করে খুদে বার্তা পাঠানো হলেও এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাদের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘ভয়াল ২৯ এপ্রিল, ১৯৯১ স্মরণ ও প্যারাবন নিধন প্রতিবাদ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত

শাহ আমানতে ৯০ হাজার দিরহামসহ যাত্রী আটক

আবুধাবিতে চালু হচ্ছে উড়ন্ত ট্যাক্সি, ৩০ মিনিটেই দুবাই

গরু চোরাচালানে জড়িত ছাত্রলীগ নেতা ও জনপ্রতিনিধি

ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধ চায় খেলাফত মজলিস

বাংলাদেশ এসএসসি ৯৮ ফ্রেন্ডস ফাউন্ডেশন যাত্রা শুরু

চিকিৎসার জন্য আমেরিকায় গেলেন আমির খসরু 

উত্তর কোরিয়া থেকে অস্ত্র নিয়ে চীনা বন্দরে রুশ জাহাজ

বর্জ্যবাহী গাড়ির ধাক্কায় নিহতের ঘটনায় ব্যবস্থা : তাপস

বর্ণিল আয়োজনে রূপায়ণ সিটি উত্তরায় সামার ফেস্ট-২০২৪ অনুষ্ঠিত

১০

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা 

১১

বিসিএস পরীক্ষার্থীর আঁকুতি / ‘পরীক্ষা দিতে না পারলে আমি মরে যাব স্যার’

১২

শনিবার গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়

১৩

ইউরোপজুড়ে চীন-রাশিয়া ও আরব রাষ্ট্রের ফাঁদ

১৪

বাংলাদেশের ধুলায় মাইক্রোপ্লাস্টিক, বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শিশুরা

১৫

এবার মিল্টন সমাদ্দারের আরেক প্রতারণা ফাঁস!

১৬

বগুড়া জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি তুহিন, সাধারণ সম্পাদক হাবিব

১৭

গাজার ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কারে ১৪ বছর লাগতে পারে : জাতিসংঘ

১৮

নিয়োগ পরীক্ষার আগেই প্রার্থী চূড়ান্তের অভিযোগ

১৯

প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করতে হবে : সংসদ সদস্য কল্পনা

২০
*/ ?>
X