অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গাসহ উপজেলার উপকূলীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকার বাসিন্দারা। দুর্যোগ মোকাবিলায় উপকূলের অধিকাংশ এলাকায় বেড়িবাঁধ সংস্কারসহ নানা কাজ চলছে। তবে অরক্ষিত ও দুর্বল বেড়িবাঁধের কারণে আনোয়ারা, সীতাকুণ্ড, সন্দ্বীপ, বাঁশখালীসহ কিছু এলাকায় পানি ঢুকে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের ৩, সীতাকুণ্ডের ৪, বাঁশখালীর ৩ এবং আনোয়ারার রায়পুরে ৩ কিলোমিটারসহ মোট ১৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। এখানে পানির স্রোত প্রবল বা বেশি হলে বাঁধও রক্ষা করা সম্ভব হবে না।
ইতোমধ্যে উপকূলীয় এলাকা থেকে বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়াসহ দুর্যোগ মোকাবিলার নানা কর্মকাণ্ডে মাঠে রয়েছেন স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), জেলা প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাসহ দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান ও জেলা পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাঁশখালী উপকূলসহ বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী (পওর-১) শওকত ইবনে সাহীদ বলেন, আনোয়ারা-পতেঙ্গার প্রায় ৩৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ এলাকায় প্রায় ৩ লাখ বাসিন্দা রয়েছেন। এসব এলাকার বেড়িবাঁধে কাজ করা হয়েছে। যদি পানি আরও উপরে ওঠে, সেক্ষেত্রে আনোয়ারার তিন কিলোমিটার বা পুরো রায়পুর ইউনিয়ন ঝুঁকির মধ্যে থাকবে। বর্তমানে বেড়িবাঁধ এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ প্রশাসন সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ দ্রুত সংস্কার বা মেরামতের জন্য আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী (পওর-২) নাহিদ-উজ-জামান খান বলেন, ৫৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের ১০ কিলোমিটার অংশে টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। বাকি ৪৫ কিলোমিটারে মাটির বাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ২৫ কিলোমিটার বাঁধ ভালো অবস্থায় আছে। এরই মধ্যে সীতাকুণ্ডের ৪ কিলোমিটার, সন্দ্বীপের ৩ কিলোমিটার এবং বাঁশখালী ৩ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৩ কিলোমিটার সাগর উপকূলের মধ্যে সিসি ব্লক দিয়ে টেকসই বাঁধ রয়েছে পাঁচ কিলোমিটার। আট কিলোমিটার মাটির পুরোনো বাঁধ রয়েছে। মাটির বাঁধের বিভিন্ন অংশ ভেঙে গেছে। সাঙ্গু নদীর তীরবর্তী ৩১ কিলোমিটারের মধ্যে সিসি ব্লক ঢালাই করা হয়েছে তিন কিলোমিটার। ২৮ কিলোমিটার পুরোনো মাটির বাঁধ।
পাউবো সূত্রে জানা যায়, ১৯৯২ থেকে ১৯৯৬ সালে বাঁধের সংস্কার করা হয়। পরে সিসি ব্লক ঢালাই ও মাটির বাঁধ মেরামত করা হয়। স্থায়ী টেকসই বাঁধ নির্মাণের কয়েকটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। নগরের সাগরতীর পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত ২৩ কিলোমিটার আউটার রিংরোড নির্মাণ করেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এ প্রকল্পের মাধ্যমে নগরীর বড় অংশ সুরক্ষিত হয়েছে। সীতাকুণ্ড ও মিরসরাই উপজেলায় উপকূলীয় এলাকা ৭০ কিলোমিটার। এর মধ্যে মিরসরাই অর্থনৈতিক জোন নির্মাণের বেশির ভাগ এলাকায় বাঁধ নির্মাণ করে সুরক্ষা করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সীতাকুণ্ডের ২৮ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে জাহাজ ভাঙা শিল্প এলাকাসহ অধিকাংশই অরক্ষিত।
এদিকে উপকূলবর্তী জনপদের মানুষের ভয় বাড়িয়ে দিচ্ছে ধসে যাওয়া বেড়িবাঁধ। অরক্ষিত অংশের মধ্যে রয়েছে শঙ্খ নদীর বাইন্নের দীঘি, কোস্টগার্ড, ফকিরহাট ও ঘাটকুল এলাকার ৭৬০ মিটার অংশ, গহিরার বারো আউলিয়ায় ৩০০ মিটার, বাইগ্যার ঘাটে ৩০০ মিটার ও উঠান মাঝির ঘাট এলাকায় ৩০০ মিটার বাঁধের কাজ হয়নি। এ ছাড়া ছাত্তার মাঝির ঘাট ও বাতিঘর এলাকায় মাটির বেড়িবাঁধেও ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। জুঁইদণ্ডী ইউনিয়নের ভোলার বাড়ি এলাকার বেড়িবাঁধের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক।
স্থানীয় বাসিন্দা বেলাল বলেন, ঘূর্ণিঝড় এলে তড়িঘড়ি করে ভাঙন এলাকায় সংস্কার কাজ করা হয়। ঘূর্ণিঝড় চলে গেলে তাদের দেখা মেলে না। বর্তমানে বাঁধের যে অবস্থা তাতে সামান্য জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে পড়বে।
কালবেলার আনোয়ারা প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর আলম জানান, মোখা মোকাবিলায় রায়পুর ইউনিয়নের কোস্টগার্ড এলাকায় শঙ্খের নদীর ভাঙন ঠেকাতে গতকাল সকালে জিও ব্যাগ বসায় পাউবো। এ প্রসঙ্গে নদীর পাড়ের বাসিন্দা রেহানা আক্তার বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের সতর্ক সংকেত ঘোষণা করলেই ওনারা কাজ দেখাতে আসেন। এর আগে কাউকে দেখা যায় না। তবে চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মিজান বলেন, ভাঙন এলাকায় পারের কাজের জন্য প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। এখন জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ বসিয়ে পানি ঠেকানোর কাজ চলছে।