২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে আইসিটি খাতে কর অব্যাহতির সুবিধা দিয়ে আরও অন্তত ১৯টি সেবা নতুন করে যুক্ত হয়েছে। পাশাপাশি হাইটেক পার্কের ক্ষেত্রে শুল্ক বাড়ানোরও প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে। এই বাজেটকে একদিকে যেমন সাধুবাদ জানাচ্ছেন আইসিটি উদ্যোক্তারা, তেমনি কেউ কেউ হতাশা ব্যক্ত করেছেন।
আইসিটিতে নতুন যুক্ত ১৯টি সেবা খাত হলোÑহলোÑএআই বেইজড সলিউশন ডেভেলপমেন্ট, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ব্লকচেইন বেইজড সলিউশন ডেভেলপমেন্ট, রোবোটিক্স প্রসেস আউটসোর্সিং, সফটওয়্যার অ্যাজ অ্যা সার্ভিস, সাইবার সিকিউরিটি সার্ভিস, ডিজিটাল ডাটা অ্যানালাইটিক্স ও ডাটা সায়েন্স, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ও কাস্টমাইজেশন, সফটওয়্যার টেস্ট ল্যাব সার্ভিস, ওয়েব লিস্টিং, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট ও সার্ভিস, আইটি সহায়তা ও সফটওয়্যার মেইনটেন্যান্স সার্ভিস, জিওগ্রাফিক অ্যানিমেশন ডেভেলপমেন্ট, ডিজিটাল গ্রাফিক্স ডিজাইন, ডিজিটাল ডাটা এন্ট্রি ও প্রসেসিং, ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম ও ই-পাব্লিকেশন, আইটি ফ্রিল্যান্সিং, কল সেন্টার সার্ভিস এবং ডকুমেন্ট কনভারশন, ইমেজিং ও ডিজিটাল আর্কাইভিং।
এই আইটি সেবাগুলোকে ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত করমুক্ত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে এসব সেবার ব্যবসা থেকে উদ্ভূত আয়, সব ব্যবসায়িক কার্যক্রম ‘ক্যাশলেস’ হওয়ার শর্ত দেওয়া হয়েছে প্রস্তাবনায়। পাশাপাশি অপটিক্যাল ফাইবার কেবলের উৎপাদন পর্যায়ে ৫ শতাংশের অতিরিক্ত মূল্য সংযোজন কর (মূসক) অব্যাহতির মেয়াদও আগামী ২০২৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থ্যাৎ আইটি খাত সংশ্লিষ্ট উল্লিখিত সেবা ও পণ্য আরও ৩ বছর কর অব্যাহতি সুবিধা পাচ্ছে।
এফবিসিসিআই উপদেষ্টা ও বেসিসের সাবেক সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর তিন বছরের কর অব্যাহতি এবং অব্যাহতিপ্রাপ্ত সেবার তালিকা বৃদ্ধিকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, আইটি প্রসেস আউটসোর্সিং, মেডিকেল ট্রান্সক্রিপশন, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন—এই সেক্টরগুলোতে প্রচুর পরিমাণে পরিষেবা রপ্তানি করি। এসবের ওপর কর অব্যাহতি না থাকলে খরচ বেড়ে যাবে, ফলে রপ্তানি বাজারে প্রতিযোগিতার সামর্থ্য হারাবে এবং রপ্তানি কমে যাবে।
হাইটেক পার্কের সেবায় কর আরোপ: হাইটেক পার্ক বা এ ধরনের অর্থনৈতিক অঞ্চলের ডেভেলপার এবং বিনিয়োগকারীরা শূন্য শতাংশ (০%) আমদানি শুল্ক সুবিধা ভোগ করে আসছিলেন। বাজেটে এই সুবিধা কর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। হাইটেক পার্কে অবস্থিত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক মূলধনি যন্ত্রাংশ ও নির্মাণ সামগ্রী আমদানিতে দুই ধরনের পণ্য সামগ্রীতে শূন্য শতাংশ আমদানি শুল্কের পরিবর্তে ১ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি ডেভেলপার কর্তৃক উন্নয়ন কাজে ব্যবহৃত পণ্য আমদানিতে শূন্য শতাংশ আমদানি শুল্কের পরিবর্তে ৫ শতাংশ নির্ধারণে সুপারিশ করেছেন অর্থমন্ত্রী।
এ বিষয়ে বেসিসের পরিচালক ও হাইটেক পার্কে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান বন্ডস্টাইন টেকনোলজিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কালবেলাকে বলেন, বিভিন্ন ধরনের কর রেয়াতি সুবিধার প্রতিশ্রুতি দিয়েই হাইটেক পার্কে বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করা হয়েছে। দেশে ২৮টি হাইটেক পার্ক রয়েছে, যেগুলোতে শতাধিক দেশি-বিদেশি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ রয়েছে। ২০২৫ সাল নাগাদ এসব পার্কে ৩ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রত্যাশা রয়েছে। তবে বিনিয়োগকারীদের জন্য শুরুতেই একটি বাধা হিসেবে কাজ করবে শুল্ক বৃদ্ধির এ সিদ্ধান্ত। বিশেষ করে, সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগে প্রভাব ফেলবে বিষয়টি।