আবারও প্রবাসীদের ভোটার করার উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসীদের ভোটার করতে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু হয়েছে ইসি সচিবালয়ে। এ জন্য একটি কমিটি কাজ করছে। প্রাথমিকভাবে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে বেছে নেওয়া হয়েছে। সেখানে দূতাবাসের সহযোগিতায় ইসির কর্মকর্তারা তথ্য সংগ্রহ করে যাচাই-বাছাইয়ের পরই প্রবাসীদের ভোটার করা হবে। এরপর মিলবে ভোটারদের স্মার্ট কার্ডও। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) একাধিক সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এর আগে প্রবাসীদের ভোটার করতে কয়েক দফা উদ্যোগ নেওয়া হলেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। ফের নতুন করে উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে এই সাংবিধানিক সংস্থাটি। এবার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় (স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, প্রবাসী কল্যাণ, শ্রম ও কর্মসংস্থান), শ্রমিক পাঠানো সংগঠন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজটি সমাধান করতে চাইছে তারা।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, প্রবাসীদের ভোটার করার উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় বুধবার ইসি সচিবালয়ে একটি বৈঠক হয়। জাতীয় পরিচয়পত্র, ভোটার তালিকা ও নির্বাচনে তথ্যপ্রযুক্তি প্রয়োগ সংক্রান্ত ওই বৈঠকে কমিটির প্রধান ব্রিগেডিয়াল জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান, ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক, পরিচালকসহ (অপারেশন্স) বিভিন্ন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে প্রবাসীদের ভোটার করার ব্যাপারে বিশদ আলোচনা হয়। আলোচনা শেষে প্রবাসীদের ভোটার করতে প্রথমে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই যাওয়ার ব্যাপারে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়।
সূত্র জানায়, এরই মধ্যে এ-সংক্রান্ত একটি খসড়া প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে। এখন চলছে পর্যালোচনা। যাচাই-বাছাইয়ের পর প্রস্তাবটি এনআইডি উইং নির্বাচন কমিশনে উপস্থাপন করবে। এরপর কমিশন সভায় পাস হলেই দুবাই যাবে ইসির প্রতিনিধি দল। এরপর পর্যায়ক্রমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করা বাঙালিদের ভোটার করার প্রক্রিয়া শুরু করবে।
এর আগে প্রবাসীদের ভোটার করতে ১/১১ সময়কার ড. শামসুল হুদা কমিশনের দুজন কমিশনার অভিজ্ঞতা নিতে যুক্তরাজ্য সফর করেছিলেন। সাবেক সিইসি কাজী রকিবউদ্দিন আহমদও কয়েক দফা উদ্যোগ নিয়ে ব্যর্থ হন। পরে দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার নিবন্ধন নিয়ে নানা ধরনের জটিলতা পেরিয়ে কে এম নূরুল হুদা কমিশন ২০১৯ সালের নভেম্বরে মালয়েশিয়ায় অনলাইন নিবন্ধনের কার্যক্রম শুরু করে; কিন্তু এরপর করোনা মহামারিতে সেই উদ্যোগ থমকে যায়। কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন আবার সেই কাজে গতি আনার উদ্যোগ নেয়। প্রাথমিকভাবে প্রবাসীরা দেশে এলে তাদের দ্রুত ভোটার করার পাশাপাশি দুর্ভোগ লাঘবের পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করার উদ্যোগ নেয় বর্তমান কমিশন।
ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, ছয় দেশ থেকে সাড়ে ৩ হাজারেরও বেশি প্রবাসী বাংলাদেশির ভোটার নিবন্ধনের আবেদন পাওয়া যায়। তার মধ্যে মালয়েশিয়ায় প্রায় ৪০০, সৌদি আরবে ১ হাজার ৩০০, সিঙ্গাপুরে ২৬৬, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১ হাজার ৪০, যুক্তরাজ্যে ৭৭৪ ও মালদ্বীপের ৩৬ জনের আবেদন রয়েছে। তবে মহামারির মধ্যে এনআইডি দেওয়ার কাজটি আর এগোয়নি। যেসব আবেদন পাওয়া গেছে, দেশে স্থানীয়ভাবে সরেজমিন তদন্ত করে সব ধরনের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। তবে এখনো কোনো দেশেই এনআইডি দেওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে ইসির দিক থেকে বিদেশে মিশনে গিয়ে কাজ শুরুর জন্য ‘ডিও লেটার’ দেওয়া হয়েছিল; কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাতে সায় মেলেনি। পরে পদক্ষেপ নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, দূতাবাস ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের মধ্যে চিঠি চালাচালিও হয়েছে; কিন্তু ভোটার নিবন্ধনে বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহের জন্য ইসির এনআইডি উইংয়ের প্রতিনিধি দল সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসে যেতে না পারায় আটকে যায় প্রবাসীদের এনআইডি সেবা কার্যক্রম। ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় অনেক প্রবাসী জমির নিবন্ধন, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন না। এ জন্য আমরা প্রবাসীদের ভোটার করার উদ্যোগ নিয়েছি। এর প্রথম ধাপ হিসেবে দুবাইকে বেছে নেওয়া হয়েছে।