বাংলাদেশে ধনীদের সম্পদ বৃদ্ধির হার পৃথিবীর অনেক দেশের তুলনায় বেশি। এমন অস্বাভাবিকতার ফলে সমাজে আয়, সম্পদ ও ভোগের বৈষম্য বেড়েছে। অন্যদিকে, চিকিৎসার জন্য সাধারণ মানুষের পকেট থেকে ৭৩ শতাংশ অর্থ চলে যাচ্ছে, যা শুধু আফগানিস্তান ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর চেয়ে অনেক বেশি। এ অবস্থায় সবার জন্য মানসম্মত ও বৈষম্যমুক্ত শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিশ্চিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে বাস্তবায়নে মনিটরিং সেল গঠনের ওপর তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
গতকাল রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) আয়োজিত ‘আপকামিং দ্য ইকোনমিক মেনিফেস্টো অব দ্য আওয়ামী লীগ: ট্রেন্ডস অ্যান্ড চ্যালেঞ্জস ফর টুমোরোস বাংলাদেশ’ শীর্ষক দিনব্যাপী সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। সেমিনারে ৯টি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়।
বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়েক সেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দুই পর্বের সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুস সালাম, অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী।
সেমিনারের ‘ইউনিভার্সেল হেলথ কভারেজ: প্রসপেক্ট অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস অব হেলথ অ্যান্ড নিউট্রিশন ইমপ্রুভমেন্ট’ শীর্ষক গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন বিআইডিএসের রিসার্স ফেলো ড. আব্দুর রাজ্জাক সরকার। তিনি বলেন, ভারতে চিকিৎসা ব্যয় মানুষের পকেট থেকে যায় ৪৯ দশমিক ৮০ শতাংশ, ভুটানে ১৮ দশমিক ৮০ শতাংশ, মালদ্বীপে ১৪ দশমিক ৩০ শতাংশ, নেপালে ৫১ দশমিক ৩০ শতাংশ, পাকিস্তানে ৫৭ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং শ্রীলঙ্কায় ৪৩ দশমিক ৬০ শতাংশ। অথচ বাংলাদেশে চিকিৎসা ব্যয় ৭৩ শতাংশ। দেশে চিকিৎসা ব্যয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি যায় ওষুধ কিনতে ৬৪ দশমিক ৬ শতাংশ। চিকিৎসা ব্যয় কমাতে সবার জন্য স্বাস্থ্য বীমা করা জরুরি।
অন্য এক গবেষণায় বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে কর্মমুখী শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হলেও বাস্তবায়ন এখনো অনেক দূরে রয়েছে। হার বাড়লেও শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। কেননা, যে শিক্ষা দেওয়া হয়, তার সঙ্গে বাস্তবতা কিংবা কর্মের সংযোগ নেই। শিক্ষিত বেকারদের মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন করা শিক্ষার্থীদের ৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেকার। এর কারণ হলো, কারিকুলামে দক্ষতার অভাব, ইংরেজির ঘাটতি ইত্যাদি। অন্য এক উপস্থাপনায় আওয়ামী লীগের জন্য সামনে অনেক চ্যালেঞ্জের বিষয় তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রাজস্ব আদায় বাড়ানো। এজন্য নানা উদ্যোগ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
বক্তারা বলেন, উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের পূর্বশর্ত হিসেবে সবার জন্য মানসম্মত ও বৈষম্যমুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিতের কোনো বিকল্প নেই। শহরের মতো গ্রামেও উন্নয়নের ক্ষেত্রে সমতা বিধান দরকার। ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচনী ইশতেহারে সবার জন্য স্বাস্থ্য এবং স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য স্বল্প মূল্যে চিকিৎসা নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। সঠিকভাবে ইশতেহার বাস্তবায়নের জন্য দরকার মনিটরিং সেল।
সেমিনারে বিনায়েক সেন বলেন, তিন মাসের ব্যবধানে দেশে কোটিপতি ব্যাংক হিসাব বেড়েছে সাড়ে তিন হাজার। সমাজে আয়, সম্পদ ও ভোগের বৈষম্য বাড়ছে। বৈষম্য কমাতে হলে উন্নয়নের সুষম বণ্টন দরকার। আমাদের দেশে ধনী আরও ধনী হয়, গরিবও ধনী হয়; কিন্তু ধনীদের ধনী হওয়ার প্রবণতা একটু বেশি।