যমুনা নদীর বামতীরঘেঁষা ভুয়াপুর-তারাকান্দি সড়কটি ব্যবহৃত হয় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হিসেবেও। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে ভুয়াপুর-তারাকান্দি সড়ক রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
স্থানীয়রা দাবি করেন, টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার শাখারিয়া জলকপাট থেকে গুলিপেচা, মাঝে ভুয়াপুর উপজেলার জগৎপুরার ৩ কিলোমিটার অংশে অন্তত ১০টি স্থানে বাঁধঘেঁষে বসেছে বালু বিক্রির অবৈধ ঘাট। দিনরাত বাঁধের ২০ মিটার কাছেই শক্তিশালী একাধিক ভেকু বসিয়ে ১০ চাকার ডাম্প ট্রাকে বালু উত্তোলন করে অবাধে বিক্রি করা হচ্ছে। এই অংশে নদীর তীর সড়ক লাগোয়া হওয়ায় বাঁধটি অত্যন্ত ঝুঁকিতে রয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরাও।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, প্রতিদিন শত শত লাইসেন্সবিহীন ভারী ডাম্প ট্রাকে ওভারলোডে বালু পরিবহন করায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রামীণ সড়ক। সংস্কারের এক বছর পার না হতেই নলিন থেকে গোপালপুর উপজেলা সদরে যাওয়ার সড়কের একাধিক স্থানে গর্ত সৃষ্টি হচ্ছে। অবাধে এসব ট্রাক চলাচল করায় গোপালপুর শহরে যানজটও বাড়ছে।
গত বছর বালুবাহী ট্রাক দুর্ঘটনায় নিহত হন নলিন বাজারের ব্যবসায়ী হাকিম, ভেঙ্গুলা গ্রামের টিটু, জগৎপুরা গ্রামের আ. রশিদ এবং পঙ্গুত্ব বরণ করেন কামদেববাড়ী গ্রামের গৃহবধূ বানেছা বেগম, শিশু রাণুসহ অজ্ঞাতপরিচয়রা। তখন অবৈধ বালুবাহী ট্রাক বন্ধের দাবিতে সড়ক অবরোধ করেন গুলিপেচা গ্রামবাসীসহ স্থানীয়রা। প্রতিবাদ সমাবেশ করে নলিন বাজারের ব্যবসায়ীরা এবং মানববন্ধন করে গোপালপুর উপজেলা নাগরিক সমাজ ও ছাত্রছাত্রীরা।
নলিন গ্রামের বাসিন্দা মানিক মিয়া বলেন, বাঁধঘেঁষে বালু তোলার কারণে প্রতিনিয়ত নদী পূর্ব দিকে সরে আসছে, এতে বাঁধটি অত্যন্ত ঝুঁকিতে পড়েছে। বালু কেটে বড় বড় গর্ত করায় আমরা ফসল আবাদ করতে পারছি না।
স্থানীয় বাসিন্দা খলিল মিয়া জানান, এসব ঘাট মালিকরা অত্যন্ত প্রভাবশালী। এত টাকার বাঁধ ঝুঁকিতে ফেলে বালু উত্তোলন করছে, অথচ প্রশাসন নামমাত্র অভিযান পরিচালনা করে। তারা চলে যাওয়ার পরপরই আবার বালু উত্তোলন শুরু হয়। এতে বেড়িবাঁধটি হুমকির মুখে পড়েছে। বর্ষা মৌসুমে বাঁধটি ভেঙে গেলে টাঙ্গাইলের কয়েকটি উপজেলার লাখ লাখ মানুষ ও ফসলি জমির ক্ষতিসাধন হবে।
সত্যতা স্বীকার করে হেমনগর ইউপি চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান তালুকদার হীরা বলেন, ১০ চাকার ডাম্প ট্রাকের ওভারলোডে সড়কের ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হচ্ছে। আমি উপজেলা আইনশৃঙ্খলার মাসিক সভায় বিষয়গুলো উপস্থাপন করেছি।
গোপালপুর থানার ওসি ইমদাদুল ইসলাম তৈয়ব বলেন, আমি এই থানায় যোগদানের পর কোনো বালু ট্রাকে দুর্ঘটনার কোনো অভিযোগ আসেনি।
গোপালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দা ইয়াসমিন সুলতানা বলেন, এ বিষয়ে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। ৫টির বেশি অভিযানে জরিমানা ও এক্সক্যাভেটরের চাবি জব্দ করা হয়েছে। চালক না থাকায় এক্সক্যাভেটরগুলো জব্দ করা যায়নি। বালুবাহী অবৈধ গাড়ি বন্ধে এবং বালু উত্তোলন বন্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
টাঙ্গাইল জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন মোবাইল ফোনে বলেন, প্রশাসন একাধিক অভিযান পরিচালনা করেছে। বিষয়টি দেখতে সরেজমিন যাবেন বলে তিনি কালবেলাকে জানান।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত সূত্রে জানা যায়, প্রথমে শাখারিয়া-সোনামুই পর্যন্ত ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হলেও পরবর্তী সময়ে নলিন বাজারের দক্ষিণ থেকে তাড়াই-গাড়াবাড়ি পর্যন্ত বর্ধিত করে ৪৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। উত্তরে পিংনা পর্যন্ত যমুনা নদীর বামতীর সংরক্ষণ কাজ করা হয়।
২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হেমনগর কলেজ মাঠে এক জনসভায় অংশ নিলে ভুয়াপুর-তারাকান্দি সড়ক রক্ষায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জোরালো দাবি ওঠে। পরবর্তীতে সময়ে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে বাঁধটি নির্মাণ হয়।