জোর প্রচারে সাদা দল, নীল দল ‘কৌশলে’

ঢাকা আইনজীবী সমিতি (২০২৩-২৪) কার্যকরী কমিটির নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগে নানা অভিযোগ তুলেছিলেন বিএনপি সমর্থিত নীল দলের আইনজীবীরা। বিগত দুই নির্বাচনে কারচুপি-অনিয়মের অভিযোগে বিক্ষোভ ও সংবাদ সম্মেলন করেন তারা। পদত্যাগ দাবি করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল্লাহ আবুর। এসবের পরও প্যানেলসহ নির্বাচনে অংশ নিয়েছে দলটি। এখন নির্বাচনে অংশ নেওয়াকে আন্দোলনের কৌশল দাবি করছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। তবে আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত সাদা প্যানেলের প্রার্থীরা ফুরফুরে মেজাজে জোরেশোরে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে জমে উঠেছে ঢাকা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন। তবে আগামী ২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে উভয় প্যানেলই শতভাগ আত্মবিশ্বাসী।

গত নির্বাচনে (২০২২-২৩) আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১৭টি পদে জয়লাভ করে। বিএনপি সমর্থিত নীল দল লাইব্রেরি ও সমাজকল্যাণ সম্পাদকসহ ৬টি পদে নির্বাচিত হন। পরে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীর নির্বাচনে কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেন। এ জন্য এই নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল্লাহ আবুর পদত্যাগ দাবি করেন তারা। এ ছাড়া তার অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ারও ঘোষণা দেয় দলটি। তবে যুগপৎ আন্দোলনের কৌশলের অংশ হিসেবে তারা প্যানেলসহ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। অন্যদিকে প্যানেল ঘোষণার আগে থেকেই সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রচার শুরু করেন। প্যানেল ঘোষণার পর আওয়ামী সমর্থিত প্রার্থীরা জোরেশোরে নির্বাচনী প্রচার করছেন। চাপ না নিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিতা ধরে রাখার কথা বলে ফুরেফুরে মেজাজে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।

আওয়ামী সমর্থিত প্যানেলে সভাপতি পদে মিজানুর রহমান মামুন ও সাধারণ সম্পাদক খন্দকার গোলাম কিবরিয়া জুবায়ের, রুমানা জামান রীতু সিনিয়র সহসভাপতি, প্রাণ নাথ সহসভাপতি, বিবি ফাতেমা মুন্নী ট্রেজারার, ফাহিম শরীফ সিনিয়র সহ-সাধারণ সম্পাদক, মো. মাহবুব হোসেন জয় সহ-সাধারণ সম্পাদক, মো. রেজাউল হক রিপন লাইব্রেরি সম্পাদক, শিখা ইসলাম সাংস্কৃতিক সম্পাদক, মো. গোলাম কিবরিয়া সুমন দপ্তর সম্পাদক, এস এম মিজানুর রহমান ক্রীড়া সম্পাদক ও মো. আবুল হাসনাত জিহাদ সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। এ ছাড়া সদস্য পদে মো. কামাল হোসেন, গাজী ইমরুল, আসলাম হোসেন, ইয়াসিন জাহান ভূঁইয়া (নিশান), মো. তানজির হোসেন রবিন, অ্যাডভোকেট শারমিন সুলতানা টুম্পা, ইসমত আরা শারমিন (রীমু), মো. আশিকুল ইসলাম মুরাদ, সঞ্জয় কুমার কর্মকার, জহির উদ্দিন জহির এবং নাছির উদ্দীন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

বিএনপি সমর্থিত নীল দলের সভাপতি পদে খোরশেদ মিয়া আলম ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নজরুল ইসলাম, আব্দুর রাজ্জাক সিনিয়র সহসভাপতি, মো. সহিদুজ্জামান সহসভাপতি, আব্দুর রশীদ মোল্লা ট্রেজারার, জহিরুল হাসান সিনিয়র সহ-সাধারণ সম্পাদক, সৈয়দ মো. মইনুল হোসেন সহ-সাধারণ সম্পাদক, নার্গিস পারভীন মুক্তি লাইব্রেরি সম্পাদক, নূরজাহান বেগম সাংস্কৃতিক সম্পাদক, আনোয়ারুল ইসলাম দপ্তর সম্পাদক, মোবারক হোসেন ক্রীড়া সম্পাদক ও মাহবুব হাসান রানা সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। এ ছাড়া সদস্য পদে আলী মর্তুজা, আনোয়ার হোসেন, মাহফুজুর রহমান ইলিয়াছ, সহেল উদ্দিন রানা, ইয়াকুব আলী, মোহাম্মদ আরিফ, আলী বাবু, মুক্তা বেগম, মোজ্জাম্মেল হক, রেজাউল হক রিয়াজ ও রুবিনা আক্তার রুবা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

আওয়ামী সমর্থিত সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী খন্দকার গোলাম কিবরিয়া জোবায়ের কালবেলাকে বলেন, ‘সাদা দল নির্বাচিত হলে সাধারণ আইনজীবীদের পরিবর্তন আসে। আইনজীবীদের পেশাগত সমস্যা নিরসনে কাজ করব। জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।’

প্রধান নির্বাচন কমিশনার মো. আব্দুল্লাহ আবু কালবেলাকে বলেন, ‘ঢাকা আইনজীবী সমিতির মোট সদস্য ২৭ হাজার ৯২৪ জন। এর মধ্যে ১৯ হাজার ৬১৮ জন সদস্য তাদের ভোট দিতে পারবেন। বিগত নির্বাচনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট উপহার দিয়েছি। এবার প্রার্থী ও ভোটারদের সহযোগিতা নিয়ে সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন উপহার দেব।’

বিএনপি সমর্থিত সভাপতি পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট খোরশেদ মিয়া আলম কালবেলাকে বলেন, ‘যুগপৎ আন্দোলনের কৌশল হিসেবে নীল দল ঢাকা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। অতীতের মতো যদি কোনো কারচুপি না হয় এবং নির্বাচন কমিশনার সুষ্ঠু ভোট উপহার দিতে পারেন, তাহলে নীল দল প্যানেলসহ বিজয়ী হবে। আমরা বিজয়ী হলে আইনজীবী সুরক্ষা আইনসহ সাধারণ আইনজীবীদের কল্যাণে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

বিএনপি সমর্থিত সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট সৈয়দ নজরুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘সাধারণ আইনজীবীদের দাবির মুখে নির্বাচনে এসেছি। নির্বাচন যদি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হয় ও সাধারণ আইনজীবীরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন তাহলে প্যানেলসহ নীল দল জিতবে।’

আওয়ামী সমর্থিত সভাপতি পদপ্রার্থী মো. মিজানুর রহমান মামুন কালবেলাকে বলেন, ‘সাদা দল পাস করলে সাধারণ আইনজীবীদের কল্যাণ হয়। আমরা নির্বাচনে প্রচার করছি, বিজয়ের ব্যাপারে আমরা শতভাগ আশাবাদী। বিজয়ী হলে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা হবে।’