ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) গঠনতন্ত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটে গৃহীত হওয়া ‘চূড়ান্ত সংশোধনী প্রস্তাব’-এ ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা, কার্যক্রমের পরিধি এবং নেতৃত্ব কাঠামোতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হয়েছে।
এ ছাড়া সর্বশেষ ৬৯ নম্বর অনুচ্ছেদে বিদ্যমান বিধান ছিল নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের তিন দিনের মধ্যে সভাপতির কাছে আপত্তি জানানো যাবে এবং সভাপতির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে। আদালতে এর বিরুদ্ধে কোনো মামলা করা যাবে না। সংশোধিত বিধানে ‘আদালতে মামলা করা যাবে না’ এই কথাটি বাদ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ সভাপতির যে কোনো সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রার্থীরা আদালতে মামলা করতে পারবেন, তবে সেটি ফল প্রকাশের তিন দিনের মধ্যে করতে হবে।
নতুন গঠনতন্ত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ধারা ১-এ ডাকসু নাম অপরিবর্তিত রাখা হলেও কিছু বিষয় স্পষ্ট করে সংজ্ঞায়ন করা হয়েছে। তা হলো, পূর্ণকালীন, ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তিকৃত, আবাসিক হলের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থীরাই ভোটার ও প্রার্থী হতে পারবেন। এ ছাড়া ভোটারের সর্বোচ্চ বয়স হবে ৩০ বছর। পাশাপাশি সন্ধ্যাকালীন কোর্স, পেশাগত কোর্স, ভাষা কোর্স পিএইচডি পড়ুয়া ও অধিভুক্ত (পূর্বে ছিল) কলেজের শিক্ষার্থীরা ভোটার হতে পারবেন না।
গঠনতন্ত্রের ধারা ২-এ উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের ব্যাপারে পূর্বে শুধু মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল্যবোধ লালনের কথা উল্লেখ ছিল। কিন্তু বর্তমান গঠনতন্ত্রে জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও বাংলাদেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ধারা ৩-এ সংসদের কার্যাবলীর ক্ষেত্রে পূর্বে কমনরুম, পত্রিকা প্রকাশ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিতর্ক প্রতিযোগিতা আয়োজন এবং খেলাধুলা আয়োজন এসবই ছিল মূল কার্যাবলি। কিন্তু বর্তমান সংশোধনীতে এগুলোর পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীদের অধিকার সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি, সামাজিক সেবা কার্যক্রম জোরদার, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতায় সক্রিয় অংশগ্রহণ ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
গঠনতন্ত্রের ধারা ৪-এ সদস্যপদ, ভোটার এবং প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতার ক্ষেত্রে পূর্বে প্রথম অনুচ্ছেদে বর্ণিত মানদণ্ড অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ছাত্র ডাকসুর সদস্য ও ভোটার হতে পারতেন। কিন্তু সংশোধিত গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কেবল প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া ছাত্র-ছাত্রী, পূর্ণকালীন অধ্যয়ন এবং যাদের বয়স ৩০ বছরের নিচে তারাই ছাত্র সংসদের সদস্য ও ভোটার হতে পারবেন।
গঠনতন্ত্রের ধারা ৫-এ পূর্বে ডাকসুর সব সভায় সভাপতিত্ব করতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অর্থাৎ ডাকসুর সভাপতি। কিন্তু নতুন গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ভিসি শুধু কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় সভাপতিত্ব করবেন। তবে ডাকসু গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে কি না, তা তদারকি করবেন তিনি। জরুরি ভিত্তিতে ডাকসুকে গঠনতন্ত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে যে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবেন ডাকসু সভাপতি।
ভিসি ও কোষাধ্যক্ষের অনুপস্থিতিতে ভিপি সব সভায় সভাপতিত্ব করবেন। এ ছাড়া জিএস ও এজিএসের কার্যক্রম আগের মতোই রাখা হয়েছে।
মন্তব্য করুন