মোহাম্মদ নূর উদ্দিন, হবিগঞ্জ
প্রকাশ : ০৩ এপ্রিল ২০২৫, ০২:২৫ এএম
আপডেট : ০৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০:০৪ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

হবিগঞ্জে হঠাৎ বেড়ে গেছে সংঘাত-সংঘর্ষ

ঈদের তিন দিনের ছুটিতে ৭টি সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২৫০
হবিগঞ্জে হঠাৎ বেড়ে গেছে সংঘাত-সংঘর্ষ

ঈদের ছুটিতে হবিগঞ্জে বেড়ে গেছে সংঘাত-সংঘর্ষ। গত ৩ দিনে জেলার তিনটি উপজেলায় অন্তত ৭টি ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১ জন। আহত হয়েছেন আড়াই শতাধিক। ভাঙচুর করা হয়েছে বেশ কয়েকটি দোকানপাট।

ঈদের দিন জামাত শেষে জেলার বাহুবল উপজেলার সদর ইউনিয়নের পুরান মৌড়ি গ্রামে জমির বিরোধ নিয়ে দুপক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হন। একই দিন রাতে জেলার মাধবপুরের বাঘাসুরায় মাজারের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুপক্ষের সংঘর্ষে আহত হন ৩০ জন। অন্যদিকে লাখই উপজেলায় গত দুদিনে চারটি সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ১২০ জন আহত হয়েছেন। নিহত হয়েছেন ১ জন।

গতকাল বুধবার লাখাইয়ে পূর্ব বিরোধে ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুটি পৃথক সংঘর্ষে শতাধিক লোক আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত ২০ জনকে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতাল ও ২০ জনকে লাখাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার জিরুন্ডা গ্রামের মোস্তফা মিয়ার সঙ্গে একই গ্রামের রুকন মিয়ার মধ্যে গ্রামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে তাদের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গতকাল সকালে দুপক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে নারী-পুরুষসহ অন্তত ৫০ জন আহত হন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

অন্যদিকে সকাল ১০টায় একই উপজেলার বামৈ গ্রামে গ্রাম্য আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই গ্রামের সংঘর্ষে অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। স্থানীয়রা জানান, বামৈ গ্রামের আরিফ মিয়ার সঙ্গে একই গ্রামের খসরু মিয়ার মামলা-সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। এর জের ধরে গতকাল সকাল ১০টায় তাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

মঙ্গলবার রাতে বাহুবল উপজেলার মিরপুর বাজারে মোটরসাইকেলের ব্যাটারি কেনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন ১২টি গ্রামের বাসিন্দারা। তিন ঘণ্টাব্যাপী চলা এ সংঘর্ষে পুলিশসহ প্রায় ৬০ জন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত ২৫ জনকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপজেলার বানিয়াগাঁও গ্রামের এক তরুণ ব্যবসায়ী আকাশের সঙ্গে একই উপজেলার চারগাঁও গ্রামের রাসেলের মোটরসাইকেলের ব্যাটারি ক্রয় নিয়ে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তা ঝগড়ায় রূপ নেয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে উভয় পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। সংঘর্ষে আঞ্চলিকতার টানে বানিয়াগাঁওয়ের পক্ষ নিয়ে আশপাশের আটটি গ্রাম এবং চারগাঁও গ্রামের পক্ষ নিয়ে আরও চারটি গ্রামের মানুষ যোগ দেন। সংঘর্ষকালে অন্ধকারে টর্চলাইট জ্বালিয়ে মারামারি করতে দেখা যায় ওই লোকজনকে। এ সময় মিরপুর বাজারে বেশ কয়েকটি দোকান ভাঙচুর করা হয়।

খবর পেয়ে প্রথমে বাহুবল মডেল থানা-পুলিশ সংঘর্ষ থামানোর চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয়। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ তৎপরতায় রাত ৯টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। সংঘর্ষে তিনজন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন। বিষয়টি কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন বাহুবল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল ইসলাম।

একই দিন সকালে লাখাই উপজেলার পূর্ব তেঘরিয়া গ্রামে সালিশে দুপক্ষের সংঘর্ষে ৩০ জন আহত হন। গুরুতর আহত ১০ জনকে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, উপজেলার তেঘরিয়া গ্রামে ভাঙাড়ি ব্যবসায়ী দুপক্ষের মধ্যে একটি পুরোনো টেলিভিশন বিক্রি করা নিয়ে বিরোধের সৃষ্টি হয়। ভাঙাড়ি ব্যবসায়ী কাশেম ও খলিলের পক্ষ সালিশে লিটনের পক্ষের লোকজনের ওপর হামলা চালান। এ সময় সংঘর্ষে অন্তত ৩০ জন আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে অভিযান চালিয়ে ১৭ জনকে আটক এবং অর্ধশত দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে।

একই দিনে সন্ধ্যায় মুড়িয়াউক গ্রামে পুকুরে মাছ ধরা নিয়ে বিরোধের জেরে শফিকুর রহমান (৫০) নামে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে আহত করে প্রতিপক্ষ। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে গতকাল তিনি মারা যান। এ ঘটনায় সন্দেহজনক দুজনকে আটক করেছে পুলিশ।

হঠাৎ করে জেলাজুড়ে সংঘর্ষ বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। বিশ্লেষকরা একে দেখছেন দীর্ঘদিনের ক্ষোভ, ঈদের আত্মীয়স্বজন একত্রিত হয়ে শক্তি প্রদর্শন ও গ্রাম্য সালিশের বিচারকদের ইন্ধন। আর পুলিশ বলছে, বাইরের শক্তি প্রদর্শনের কারণে ও সচেতনার অভাবে দাঙ্গা-হাঙ্গামা বেড়ে গেছে।

এ বিষয়ে জেলার সিনিয়র আইনজীবী এমএ মজিদ কালবেলাকে বলেন, ঈদের ছুটিতে বাড়িতে আত্মীয়স্বজনরা একত্রিত হন। সে সময় সাধারণ ক্ষোভ থেকে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন অনেকে। এটি তাদের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ। আবার অনেকেই শক্তি প্রদর্শনের জন্য সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। তবে তিনি

দাঙ্গা-হাঙ্গামার জন্য গ্রামের বিচারকদের (মাতবর) দায়ী করে বলেন, তাদের ইন্ধনে অনেক বিষয়ই মীমাংসা না হওয়ায় সংঘর্ষের ঘটনার সূত্রপাত হয়।

হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার এএনএম সাজেদুর রহমান কালবেলাকে বলেন, বাইরে শক্তি প্রদর্শনের জন্য জেলায় হঠাৎ করে মারামারি বেড়ে গেছে। তবে পুলিশ কাউকে ছাড় দেবে না। তিনি বলেন, এরই মধ্যে লাখাইয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় ১৭ জনকে আটক করা হয়েছে। প্রচুর দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। সংঘাত-সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মাছ ধরতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পর্শে চাচা-ভাতিজার মৃত্যু

দুপুরের মধ্যে ঢাকায় ৬০ কিমি বেগে বজ্রবৃষ্টির আভাস

বড় ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনে মারা গেলেন ছোট ভাই

১৫ বছর পর বাংলাদেশ-পাকিস্তানের বৈঠক আজ

পাবিপ্রবিতে জাতীয় ব্যবসা উন্নয়নবিষয়ক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

বৃহস্পতিবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

ইসরায়েলি হামলা / আরও ৩৫ মৃত্যু, নতুন করে ঘরছাড়া ৫ লাখ মানুষ

১৭ এপ্রিল : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৭ এপ্রিল : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

চবির পাঁচ শিক্ষার্থীসহ ছয়জনকে অপহরণ

১০

ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট / হিন্দু বোর্ডে মুসলিম নেই, ওয়াকফ বোর্ডে হিন্দু থাকবে কেন?

১১

পারমাণবিক বোমা প্রস্তুতির চূড়ান্ত পর্যায়ে ইরান!

১২

ক্লাসরুম ঠান্ডা রাখতে গোবরের প্রলেপ দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে!

১৩

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে কে কার মুখোমুখি?

১৪

নব্য আওয়ামী লীগের রূপরেখা : ভারতের বার্তা ও নেতাদের পরিকল্পনা

১৫

সান সিরোতে মহাকাব্য, বায়ার্নকে টপকে সেমিতে ইন্টার

১৬

বার্নাব্যুর ম্যাজিকে কাজ হলো না, ঘরের মাঠে হেরে বিদায় রিয়ালের

১৭

নির্বাচন নিয়ে অস্পষ্টতা অপ্রয়োজনীয় বিতর্কের জন্ম দিচ্ছে : সাইফুল হক

১৮

ইসরায়েলিদের নিয়ে ব্রিটিশ রানির বিস্ফোরক মন্তব্য প্রকাশ্যে

১৯

পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে যে আহ্বান জানাল ছাত্রশিবির

২০
X