ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মো. দেলোয়ার হোসেন। থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে। বাড়ি নোয়াখালী জেলায়। স্বপ্ন ছিল পরিবারের সঙ্গে ঈদ কাটাবেন। কিন্তু ঈদের পরে বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষা থাকায় এবার আর বাড়ি যাওয়া হবে না তার। বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে কাটানো সময় পড়ালেখার মধ্যেই দিতে চান দেলোয়ার। এ জন্য ঈদ এবার হলেই কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। এতে খানিকটা খারাপ লাগলেও ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বাড়ি যাওয়া হচ্ছে না তার। এসব শিক্ষার্থীর জন্য ঈদে বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা নিয়েছে হল প্রশাসন।
শুধু দেলোয়ার হোসেনই নন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হলে এরকম ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছেন, যারা ঈদ হলেই কাটাবেন। স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে ঈদের সাময়িক আনন্দ বিসর্জন দিচ্ছেন তারা।
গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত পাওয়া তথ্যমতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হলে ১০ জন, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলে ১০, স্যার এ এফ রহমান হলে ৬০, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে ১৭, শেখ মুজিব হলে ২৩, স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ১৭, ফজলুল হক মুসলিম হলে ১০০, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ৫৮, রোকেয়া হলে ৩১, কবি জসীম উদ্দিন হলে ৫০ জন শিক্ষার্থী হলেই ঈদ কাটাবেন।
এ ছাড়া অন্যান্য হলগুলোয়ও একটি বড় অংশ হলেই ঈদ কাটাবেন। সব মিলিয়ে অন্তত ৫ শতাধিক শিক্ষার্থীর খোঁজ পাওয়া যায়, যারা এবার বাড়ি যাচ্ছেন না।
কবি জসীম উদ্দিন হলের শিক্ষার্থী খন্দকার আজিজুল হক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন এক মাস ধরে; কিন্তু তার লক্ষ্য বিসিএস। আর ঈদের পরেই ৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হওয়ায় হলেই ঈদ কাটাবেন বলে মনস্থির করেছেন তিনি। আজিজুল বলেন, পরিবার ছাড়া ঈদ করা সত্যিই ভীষণ কষ্টের; কিন্তু সামনে বিসিএস পরীক্ষা থাকায় চাইলেও বাসায় যেতে পারছি না।
হল প্রাধ্যক্ষরা জানান, অনেকের ঈদের পর একাডেমিক পরীক্ষা আছে। তবে বেশিরভাগেরই বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষা থাকায় বাড়ি যাচ্ছেন না। শেখ মুজিব হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান কালবেলাকে বলেন, শিক্ষার্থীদের অনেকেই হলে থাকছেন। তাদের নিরাপত্তার জন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
হল সূত্রে জানা গেছে, এবার ঈদে হল ভেদে শিক্ষার্থীদের জন্য মাথাপিছু ৩৫০-৪৫০ টাকা পর্যন্ত বাজেট রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। বিভিন্ন হলে খাবারেও রয়েছে ভিন্নতা।
সার্বিক বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল হোসাইন কালবেলাকে বলেন, আমার হলে শুধু শিক্ষার্থী নয়, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্যও খাবারের ব্যবস্থা করা হবে।
প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির আহ্বায়ক ও স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, যেসব শিক্ষার্থী হলে থাকবেন তাদের যাতে কোনো ধরনের অসুবিধা না হয় সে জন্য আমরা একটি সভা করেছি। সভায় সকাল ও দুপুরে খাবারের ব্যবস্থা থাকবে এমন সিদ্ধান্ত হয়। তবে খাবারের তালিকা নিজ নিজ হল প্রশাসন ঠিক করবে। বিগত প্রশাসনের সময় সকালে খাবার দেওয়া হতো না; কিন্তু এবার সকাল ও দুপুরে দুবেলা ভালোমানের খাবারের ব্যবস্থা থাকছে। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে বহিরাগত কেউ যাতে হলে প্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন