আজ সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের সময় থেকে শুরু পবিত্র রমজানের অন্যতম সুন্নত আমল ‘ইতিকাফ’। ইতিকাফ অর্থ অবস্থান করা। যে মসজিদে জামাতের সঙ্গে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা হয়, এমন মসজিদে আল্লাহর ইবাদতের নিয়তে একাগ্রচিত্তে অবস্থান করাকে শরিয়তের পরিভাষায় ইতিকাফ বলে। রমজানের শেষ দশক তথা ২০ রমজান সূর্য ডোবার কিছুক্ষণ আগে থেকে ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখা পর্যন্ত ইতিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কিফায়া। ইতিকাফ সবার জন্য অবশ্যপালনীয় বিধান না হলেও প্রাপ্তির দিক বিবেচনায় এর গুরুত্ব অপরিসীম। ইতিকাফের মাধ্যমে লাইলাতুল কদর প্রাপ্তির আশা করা যায়। আল্লাহর জিকির, নবীর (সা.) দরুদ, ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে খোদাভীতি ও রাসুলপ্রীতির সমন্বয় ঘটানোর সুবর্ণ সুযোগ ইতিকাফ।
নবীজি (সা.) রমজানের শেষ ১০ দিনের ইতিকাফ খুব গুরুত্বের সঙ্গে পালন করতেন। আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘নবী করিম (সা.) প্রতি রমজানে ১০ দিন ইতিকাফ করতেন; কিন্তু ইন্তেকালের বছর তিনি ২০ দিন ইতিকাফ পালন করেন।’ (বুখারি: ১৯৩৯)। অন্য হাদিসে আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘নবী করিম (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। তার ইন্তেকালের পর তার স্ত্রীরাও ইতিকাফ করতেন।’ (মুসলিম: ১১৭২)। পুরুষরা মসজিদে ইতিকাফ করলেও নারীরা ইতিকাফ করবেন নিজ ঘরে বা নির্ধারিত রুমে। (বুখারি: ২০৩৩; ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া: ১৩/১৪৫)
ইতিকাফের মূল উদ্দেশ্য আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন। হৃদয়মনে শুধু তার ধ্যান-খেয়ালই জাগরূক করা। পার্থিব জগতের মায়াজাল ছিন্ন করে একমাত্র তারই মহব্বতে ডুবে থাকা। এ জন্য যারা ইতিকাফে বসছেন, তারা গল্প-আড্ডায় সময় নষ্ট করবেন না। আবার চুপচাপ বসেও থাকবেন না। ইতিকাফকারীরা কোরআন তিলাওয়াত, নফল নামাজ, দরুদ শরিফ, ইস্তিগফার ও কালেমার জিকিরের প্রতি অত্যধিক গুরুত্ব দেবেন। ইশরাক, চাশত, আওয়াবিন ও তাহাজ্জুদ নামাজের প্রতি যত্নশীল হবেন। বেজোড় রাতগুলো শবেকদরের সন্ধানে অধিক পরিমাণে ইবাদত করেন। দোয়া ও মোনাজাতে কান্নাকাটি করবেন। মোটকথা, ইতিকাফে নানা আমলের মাধ্যমে প্রভুর একান্ত সান্নিধ্য অর্জনের চেষ্টা করবেন।
ইতিকাফকারীর জন্য রয়েছে প্রভূত কল্যাণ ও পুরস্কার। যে ব্যক্তি একনিষ্ঠ মনে সওয়াবের নিয়তে ইতিকাফ করেন, তার সব সগিরা গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘ইতিকাফকারী ব্যক্তি যাবতীয় পাপ থেকে মুক্ত থাকে আর ইতিকাফে লিপ্ত থাকার জন্য কোনো ব্যক্তি বাইরের কোনো নেক কাজ করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকলেও ওই নেক কাজগুলোর পূর্ণ নেকি সে লাভ করবে।’ (ইবনে মাজা)। আরও বলেন, ‘ইতিকাফকারী মূলত গুনাহ থেকে দূরে থাকে এবং তাকে ইতিকাফের বিনিময়ে এত বেশি নেকি দেওয়া হবে, যেন সে সব নেকি অর্জনকারী।’ (ইবনে মাজা)। আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের শেষ দশক ইতিকাফ করবে, তার জন্য দুই হজ ও দুই ওমরার সওয়াব রয়েছে।’ (বায়হাকি)
তাই যাদের সুযোগ আছে, ইতিকাফের নিয়ত করুন এবং আজ সূর্য ডোবার আগেই মসজিদে (নারীরা নির্দিষ্ট রুমে) প্রবেশ করুন। আর যাদের পক্ষে ইতিকাফে বসার সুযোগ হচ্ছে না, তাদের উচিত ইতিকাফকারী মুসল্লিদের সহযোগিতা করা। তাদের খোঁজখবর নেওয়া। তাদের প্রয়োজনীয় কাজগুলো করে দেওয়া। কারণ, তারা আল্লাহর মেহমান। এদের মেজবানি কিংবা সেবাযত্ন করা নিশ্চয় অধিক সওয়াবে হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে কবুল করুন।
লেখক: মুহাদ্দিস ও ইসলামী চিন্তাবিদ
মন্তব্য করুন