হাসান আজাদ
প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৫, ০২:২৩ এএম
আপডেট : ১৬ মার্চ ২০২৫, ১১:৩১ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
জ্বালানি সংকট

বিদ্যুতে প্রতিশ্রুত গ্যাস দিতে পারছে না পেট্রোবাংলা

বাংলাদেশের জাতীয় তেল কোম্পানি পেট্রোবাংলা ভবন। পুরোনো ছবি
বাংলাদেশের জাতীয় তেল কোম্পানি পেট্রোবাংলা ভবন। পুরোনো ছবি

বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রতিশ্রুত গ্যাস দিতে পারছে না পেট্রোবাংলা। ফলে গরমে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারবে না বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ করতে না পারায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এমনকি পেট্রোবাংলার গ্যাস সরবরাহের পরিকল্পনার ওপর ভিত্তি করে পিডিবি যে বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনা করেছে, তাও ভেস্তে যাচ্ছে।

পিডিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পেট্রোবাংলা মাসওয়ারী গ্যাস সরবরাহের পরিকল্পনা জানানোর পর এখন গ্যাস দিতে পারছে না। এই কারণে গ্যাসভিত্তিক বড় সাতটি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করা যাচ্ছে না। পাশাপাশি গ্যাস না পাওয়ার কারণে তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গিয়ে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে সম্প্রতি পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছে পিডিবি।

পিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী রেজাউল করিম এ প্রসঙ্গে কালবেলাকে বলেন, পেট্রোবাংলা আমাদের সর্বোচ্চ ১২শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু আমরা গড়ে মাত্র এক মিলিয়ন ঘনফুট পাচ্ছি। গ্যাসের অভাবে বেশ কয়েকটি কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। প্রতিশ্রুত গ্যাস দিতে পেট্রোবাংলাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর মোট উৎপাদন ক্ষমতা ১১ হাজার ৬৭৭ মেগাওয়াট। বর্তমানে গ্যাস থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। গরমে গ্যাস থেকে ৬ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। বিদ্যুৎ উৎপাদনে পেট্রোবাংলার ১২শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের পরিকল্পনা ছিল। এর বিরীতে এখন সরবরাহ করা হচ্ছে ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট।

এদিকে, পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেছেন, আসন্ন গ্রীষ্মে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে অতিরিক্ত চার কার্গো এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানির পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই চার কার্গো এলএনজি আনতে খরচ হবে ২৪শ কোটি টাকা। আমরা এই টাকা পিডিবির কাছে চেয়েছি। এই টাকা না পেলে এলএনজি আমদানি করা যাবে না।

তারা আরও বলেন, গত গ্রীষ্মে পেট্রোবাংলা বিদ্যুতের জন্য ১১শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করেছে। এবার আমরা ১২শ মিলিয়ন ঘনফুট দিতে বলেছি। এজন্য টাকা দেওয়ার বিষয়ে আমরা কোনো নিশ্চয়তা দিইনি। তবে ভর্তুকির টাকা পেলে তা পরিশোধ করা হবে বলে পেট্রোবাংলাকে জানানো হয়েছে।

গত মঙ্গলবার ‘প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিতকরণ প্রসঙ্গে’ শিরোনামে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানকে চিঠি দেন পিডিবির সচিব মুহা. রাশেদুল হক প্রধান। পিডিবির সচিব স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য গ্যাস হলো প্রধান জ্বালানি। ২০২৫ সালের বিদ্যুৎ উৎপাদনে মাসভিত্তিক গ্যাস সরবরাহের একটি পরিকল্পনা পেট্রোবাংলা কর্তৃক প্রণয়ন করা হয়। ওই গ্যাস সরবরাহ পরিকল্পনার আলোকে পিডিবি বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনাসহ অন্যান্য জ্বালানি সংগ্রহের পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, চলতি মার্চ মাসে প্রতিশ্রুত গ্যাস ১২শ মিলিয়ন ঘনফুটের বিপরীতে এ পর্যন্ত গড়ে ৯৪৯ মিলিয়ন ঘনফুট (সর্বোচ্চ ১ হাজার ৮ মিলিয়ন ঘনফুট) সরবরাহ করা হয়েছে। গ্যাসের অপ্রতুল সরবরাহের কারণে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা পুরোপুরি ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হচ্ছে, যা বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারের বিদ্যুৎ খাতের উৎপাদন ব্যয় হ্রাসের কৌশলগত লক্ষ্যমাত্রা এভাবে ব্যাহত হওয়ায় জাতীয় অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। প্রতিশ্রুত গ্যাস সরবরাহ না পাওয়ায় একদিকে যেমন সার্বিক উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে তরল জ্বালানি বেশি পরিমাণ খরচ হওয়ায় তরল জ্বালানির মজুত সংকট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, বর্তমান সরবরাহ ১ হাজার থেকে ১২শ মিলিয়ন ঘনফুট করা হলে আরপিসিএল ২১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের লোড বৃদ্ধি করে ময়মনসিংহ এলাকার ঘাটতি পূরণ সম্ভব হবে। চাঁদপুর ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের লোড বৃদ্ধি করে কুমিল্লা এলাকা ঘাটতি পূরণ করা; ঘোড়াশাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের লোড বৃদ্ধি করে জোনাল ব্যালান্সিং বৃদ্ধি করা; মেঘনাঘাট এলাকার সামিট ৫৮৩ মেগাওয়াট, ইউনিক ৫৮৩ মেগাওয়াট, জেরা ৭১৮ মেগাওয়াটের যে কোনো একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করে ঢাকা এলাকার নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ ও সার্বিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করা; ভেড়ামারা ৪১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে লোড বৃদ্ধি করে জোনাল লোড ব্যালান্সিং ও সার্বিক উৎপাদন বৃদ্ধি করা; সিরাজগঞ্জ ইউনিট-২ এ ২২৫ মেগাওয়াট চালু করে সার্বিক উৎপাদন বৃদ্ধি করা; সিরাজগঞ্জ ইউনিট-১ এ ২২৫ মেগাওয়াট ও ইউনিট-৩ থেকে ২২৫ মেগাওয়াটের লোড বৃদ্ধি করে সার্বিক উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।

এদিকে গতকাল শনিবার পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির বিদ্যুৎ উৎপাদনের তথ্য থেকে জানা গেছে,

বিকেল ৪টায় দেশের বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৩ হাজার ৮৭০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ১৩ হাজার ৭৯৬ মেগাওয়াট। লোডশেডিং ছিল ৭১ মেগাওয়াট। একই সময় গ্যাস থেকে ৫ হাজার ৩৯৬ মেগাওয়াট, জ্বালানি তেল থেকে ২ হাজার ১১৬ মেগাওয়াট, কয়লা থেকে ৩ হাজার ৬৭১ মেগাওয়াট, জলবিদ্যুৎ থেকে ৪০ মেগাওয়াট, সৌর বিদ্যুৎ থেকে ২৬৫ মেগাওয়াট, বায়ু বিদ্যুৎ থেকে ৭ মেগাওয়াট উৎপাদন হয়। এ ছাড়া ভেড়ামারা এইচভিডিসি দিয়ে ভারত থেকে ৯২৪, ত্রিপুরা থেকে ৬৬ মেগাওয়াট এবং আদানি থেকে ১ হাজার ৩১১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পুকুরে ডুবে চাচা-ভাতিজির মৃত্যু

ওয়েস্ট ইন্ডিজের তাণ্ডবের পরেও বিশ্বকাপে বাংলাদেশ

মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জায়গায় আ.লীগ অফিস করেন সাবেক এমপি বাহার

পুঁটি মাছ কাটতে না চাওয়ায় স্ত্রীকে হত্যা

মুরাদনগরে আ.লীগকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে দেওয়া হবে না : কায়কোবাদ

নির্বাচনের জন্য আন্দোলনের প্রয়োজন নেই : নজরুল ইসলাম

সংসদের আসন বাড়িয়ে ৬০০ করার সুপারিশ

ছাদ উড়ে যাওয়া সেই বাসের রেজিস্ট্রেশন স্থগিত

মানবিক বাংলাদেশ গড়ার হাতিয়ার শিক্ষার্থীরা : আমিনুল হক

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আলাদা বেতন স্কেলের উদ্যোগ

১০

নির্বাচনের আগে গণহত্যার বিচার শহীদ পরিবারের দাবি : নূরুল ইসলাম

১১

মার্কিন হুমকি মাথায় নিয়ে বৈঠকে বসছে ইরান

১২

মাঠ-পার্কের সাড়ে ৫০০ একর জায়গা দখল হয়ে যাচ্ছে : ডিএনসিসি প্রশাসক

১৩

সালিশের নামে বাড়ি ভাঙচুর, বিএনপির দুই নেতা বহিষ্কার

১৪

রাবি ভর্তিচ্ছুদের সহায়তায় জবি ছাত্রদলের হেল্প ডেস্ক

১৫

শিগগিরই প্রাথমিকে বড় নিয়োগ হবে, জানালেন উপদেষ্টা

১৬

কয়লা ব্যবসার নামে প্রতারণা করতেন তারা

১৭

১২ দলীয় জোটের সঙ্গে বিএনপির বৈঠকে যা উঠে এলো

১৮

সাতক্ষীরায় ১৩ কেজি রুপা জব্দ

১৯

পুলিশ সদস্যদের যে সুখবর দিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

২০
X